চার বছরে এক বার বাসভাড়া বাড়ার প্রস্তাব নিয়ে টালবাহানা বহু স্তরে। কিন্তু অটোভাড়া থমকে রাখতে বাধা আসে কি কোথাও?
গত এক বছরে কলকাতা-সহ শহরতলির প্রায় সব রুটেই ২-৩ টাকা করে ভাড়া বেড়েছে। শহরাঞ্চলে অধিকাংশ রুটেই এখন অটোভাড়া ন্যূনতম ৮-৯ টাকা। গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস বা আলিপুরের মতো কিছু রুটে ওই ভাড়া গিয়ে ঠেকেছে ১০ টাকায়। তাতে কি যাত্রীদের প্রতিবাদ সামলাতে হয়েছে স্থানীয় সব অটো ইউনিয়নকে, উঠছে প্রশ্ন। বরং অভিযোগ, বিনা বাধায় এমন ভাড়াবৃদ্ধির পরেও কমছে না অটোর দাপট। পরিবহণ দফতরের হাঁকডাক সত্ত্বেও ব্যস্ত সময়ে পুরো রুট না গিয়ে কাটা রুটে যথেচ্ছ অটো চালানোর প্রবণতা দিব্যি বহাল শহরে। উল্টে বাসভাড়ার নতুন তালিকা ঘোষণা হতেই আর এক দফা অটোর ভাড়া বৃদ্ধির দাবি উঠতে পারে বলে খবর।
বাস মালিকেরা বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ তুলছিলেন, রাস্তায় বাস কমে যাওয়ার সুযোগে অটোর রমরমা বেড়েছে। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, টালিগঞ্জ বা গড়িয়াহাটের অটো রুটে সকাল কিংবা দুপুরে যে ভাড়া লাগে, বাস কম থাকার কারণে রাতের দিকে তার থেকে পাঁচ-দশ টাকা বেশি পড়েই। তবু বাসভাড়া এক টাকা বাড়লেই বেশি হইচই হয়, দাবি তাঁদের।
গত এক বছরে ভাড়া বেড়েছে শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অটো রুটে। চাঁদনি চক থেকে পার্ক সার্কাস মোড় পর্যন্ত বছর খানেক আগেও ভাড়া ছিল ১২ টাকা। এখন তা ১৪ টাকা। গড়িয়াহাট থেকে রুবি পর্যন্ত পথে আগে ভাড়া ছিল ১০ টাকা, এখন তা ১২। গড়িয়া থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত ভাড়া বছর দেড়েক আগেও ১৪ টাকা ছিল, তা এখন ১৬ টাকা। অটোর পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি পরিবহণ দফতরের ভূমিকা থাকলেও ভাড়া নিয়ন্ত্রণ কতটা সরকারের হাতে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সরকারের বিশেষ ভূমিকা যে নেই, তা স্পষ্ট অটো ইউনিয়নের বক্তব্যেই। এক ইউনিয়ন নেতা জানান, সব রুটেই দলের শ্রমিক সংগঠন নিয়ন্ত্রিত কমিটি আছে। সেখানে সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পান দলের নেতারাই। ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে ওই কমিটির সিদ্ধান্তই শেষ কথা।
বছর দুই আগে অটো নিয়ন্ত্রণে সরকারি নীতি তৈরির কথা জানিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। অটোচালকদের দুর্ব্যবহার, পুরো পথ যেতে না চাওয়া-সহ বিভিন্ন সমস্যা মেটাতে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সে সব আর সামনে আসেনি। কিছু অটো রুট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ বাক্স চালু করার কথাও জানিয়েছিল এক সময়ে। সে সবও কথার কথা হয়ে থেকে গিয়েছে বলেই অভিযোগ। বৃহস্পতিবার পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “অটো-নীতি তৈরি হয়ে রয়েছে। এ মাসেই তার খসড়া প্রকাশিত হবে।” তবে মন্ত্রীর বক্তব্য, অটোর ভাড়ায় কোনও ভূমিকা নেই সরকারের। চালক ও যাত্রীদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই এটা ঠিক হয় বলে দাবি মন্ত্রীর।
অটোভাড়া যে ঠিক হয় ইচ্ছেমতোই, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতা জেলা অটো ইউনিয়নের সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে সেই অনুপাতে দু’-এক টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়।” গত এক বছরে বিভিন্ন রুটে ভাড়া বাড়ার বিষয়টি মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “সরকার নতুন বাসভাড়া ঘোষণার পরে কিছু অটো ইউনিয়ন ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলেছে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy