Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কাটা রুটে চলছে অটো, ভাড়া পড়ছে চার গুণ

রুট নম্বর ৫৯— ফুলবাগান থেকে গণেশ টকিজ। শেষ কবে ফুলবাগান থেকে অটো নিয়ে চালকেরা সোজা গণেশ টকিজ গিয়েছেন, নিজেরাই মনে করতে পারছেন না। ফুলবাগান থেকে মানিকতলা, সেখান থেকে গিরীশ পার্ক, সেখান থেকে যাত্রী থাকলে গণেশ টকিজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

রুট নম্বর ৫৯— ফুলবাগান থেকে গণেশ টকিজ। শেষ কবে ফুলবাগান থেকে অটো নিয়ে চালকেরা সোজা গণেশ টকিজ গিয়েছেন, নিজেরাই মনে করতে পারছেন না। ফুলবাগান থেকে মানিকতলা, সেখান থেকে গিরীশ পার্ক, সেখান থেকে যাত্রী থাকলে গণেশ টকিজ। কখনও চাহিদা থাকলে মানিকতলা পর্যন্ত রুট ভেঙে হয়ে যায় কাঁকুড়গাছি পর্যন্ত। আবার কখনও বিবেকানন্দ রোড থেকে গণেশ টকিজও আলাদা রুট হয়।

রুট নম্বর ৪৪— কাদাপাড়া থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের কাজের জন্য রুটটা এমনিই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি ফুলবাগান থেকে কাদাপা়ড়া। অন্যটি ফুলবাগান থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড। এ বার রুট ভাঙছে কয়েক ভাগে। প্রথমে ফুলবাগান থেকে রাজাবাজার খালপোল, সেখান থেকে রাজাবাজার ক্রশিং, তার পরে কলেজ স্ট্রিট বাটা, শেষে মহাত্মা গাঁধী রোড। অর্থাৎ ফুলবাগান থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড যেতে এক জন যাত্রীকে ভাড়া গুণতে হচ্ছে তিন থেকে চার গুণ।

রুট নম্বর ২৮— গড়িয়া থেকে গোলপার্ক। কলকাতার অন্যতম পুরনো রুট। কাটা রুটের অভ্যেসও বহু দিনের। গোলপার্ক থেকে ঢাকুরিয়া, যাদবপুর ৮বি, বাঘা যতীন, গড়িয়া। কখনও কখনও তা বেড়ে ঢাকুরিয়া থেকে যাদবপুর থানা এবং বাঘা যতীন থেকে পদ্মশ্রীও হয়ে যায়।

এ তো গেল কাটা রুটের কাহিনি। এর পরে আছে ইচ্ছে মতো রুটে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা। শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙা রুটে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী সন্ধ্যার পরে অনেক সময় যায় বাগুইআটি পর্যন্ত। সন্ধ্যায় চালকেরা ‘বাড়ি যাওয়ার সময়ে’ যাত্রী নিয়ে চলে যান বাগুইআটি পর্যন্ত। ওই রুটে ইউনিয়নের ঘোষিত ভাড়াও রয়েছে, ২২ টাকা। রাতে তা বাড়তে বাড়তে ৩০ পেরিয়ে কখনও কখনও ৪০-ও ছুঁয়ে যায়। যাত্রীরা অনেকেই আপত্তি করে বলেন, ‘‘২২ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে ৩০ করেছেন, তা-ও ঠিক আছে। তা বলে ৪০ টাকা নেবেন!’’ অটো চালকের সোজা উত্তর— ‘‘মন্ত্রীর মোবাইল নম্বর আছে। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও আছে। অভিযোগ জানান। যা খুশি করে নিন। বুঝে নেব।’’ আবার যেমন ধরা যাক, উল্টোডাঙা থেকে লেক টাউন সরকারি নথিবদ্ধ ৮৬ নম্বর রুট এবং উল্টোডাঙা থেকে বাগুইআটি ৮৪ নম্বর রুটের কথা। এ সব রুট আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে যাচ্ছে এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেট পর্যন্ত।

দিনের বিভিন্ন সময়ে আবার বালিগঞ্জ স্টেশনে এসে জড়ো হচ্ছে বিভিন্ন রুটের আইনি, বেআইনি অটো। চালকেরা দেখে নিচ্ছেন, কোন রুটে এখন ভাল চাহিদা। সেই রুটে তাঁরা যাত্রী তুলতে শুরু করে দিচ্ছেন। অনেকে আবার এক জন যাত্রীর কাছ থেকে থোক টাকা নিয়ে তাঁকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছেন।

কলকাতার অটো-সাম্রাজ্যে আইনকানুনের বালাই নেই। সরকার নির্দিষ্ট রুট যা-ই থাকুক, অটোচালকেরা চলেন নিজেদের ইউনিয়নের বেঁধে দেওয়া রুটে। তাতে কারওরই কিছু বলার নেই— না পরিবহণ দফতর, না পুলিশের। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র রাস্তায় নেমে অটোর কাটা রুট বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বর্তমান পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী অটো-নীতি তৈরি করবেন বলেও আপাতত পিছু হটেছেন। কারণ একটাই, ভোটব্যাঙ্ক যদি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার ভয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অটোর বিশাল বাহিনীকে এখনই চটাতে নারাজ।’’

অটো ইউনিয়নের নেতারা অবশ্য পুরো দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন পুলিশের উপরে। তৃণমূলের অটো ইউনিয়নের নেতা মেঘনাদ পোদ্দার বলেন, ‘‘আইন না-মানার অভিযোগে পুলিশ কোনও অটো চালককে ধরলে আমরা তাঁকে ছাড়াতে যাই না। কিন্তু কে কোন রুটে গাড়ি চালাচ্ছে, তা দেখা আমাদের কাজ নয়।’’ পুলিশ-কর্তাদের আবার পাল্টা অভিযোগ, ‘‘নবান্ন থেকে অনুমতি মেলেনি। তাই আমরাও হাত গুটিয়ে বসে আছি। আমরা তো পুল কারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলাম। ফলও মিলেছিল হাতেনাতে। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই নবান্নের নির্দেশে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।’’

সুতরাং, বেপরোয়া অটোর রমরমা যতই বাড়ুক, আপাতত চোখ বুজেই থাকতে চায় প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Auto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE