Advertisement
E-Paper

ফ্ল্যাটে বেল বাজিয়ে গুলি মহিলাকে

কলিং বেল শুনে দরজা খুলেছিলেন মহিলা। বাইরে দাঁড়ানো ষণ্ডা চেহারার দুই যুবক জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘‘বাবু কঁহা হ্যায়?’’ প্রশ্নের ধরন আর যুবকদের চেহারা দেখে ভাল লাগেনি মহিলার। তাই যুবকদের মুখের উপরেই দরজা বন্ধ করে দিতে গিয়েছিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০০:২৫
বুলবুল মুস্সাদি

বুলবুল মুস্সাদি

কলিং বেল শুনে দরজা খুলেছিলেন মহিলা। বাইরে দাঁড়ানো ষণ্ডা চেহারার দুই যুবক জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘‘বাবু কঁহা হ্যায়?’’ প্রশ্নের ধরন আর যুবকদের চেহারা দেখে ভাল লাগেনি মহিলার। তাই যুবকদের মুখের উপরেই দরজা বন্ধ করে দিতে গিয়েছিলেন তিনি। ততক্ষণে বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করেছে ওই যুবকেরা!

এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, দরজা পুরোটা বন্ধ হওয়ার আগেই তার ফাঁক দিয়ে বন্দুক গলিয়ে বাঁট দিয়ে মহিলার মাথায় আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। তাতেও তাঁকে কাবু করতে না পেরে ক্ষিপ্ত দুষ্কৃতীরা এর পরে সটান বন্দুক দেগে দেয়। গুলি লাগে মহিলার ভ্রূ-র উপরে। তার পরে অবাধেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ লেকটাউনের এই ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আবাসনের নিরাপত্তা নিয়ে। পুলিশ জানায়, বুলবুল মুস্সাদি নামের ওই মহিলাকে ই এম বাইপাসের ধারে এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

দু’জন বহিরাগত কী ভাবে বুলবুলদের ফ্ল্যাটে পৌঁছল এবং গুলি করে ফের অবাধে বাইরে বেরিয়ে গেল, তার খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশ জেনেছে, ওই আবাসনের নিরাপত্তায় প্রচুর ফাঁক রয়েছে। রক্ষী থাকলেও বহিরাগতদের তথ্য রাখতে রেজিস্টার নেই। নেই সিসিটিভি। ইন্টারকমও খারাপ হয়ে গিয়েছে। বুলবুলের স্বামী রামগোপাল মুস্সাদির বন্ধু ইন্দ্রকুমার দাগা বলেন, ‘‘আবাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যত নেই বললেই চলে।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আবাসনের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু। আহত মহিলাকে দেখতে হাসপাতালেও যান তিনি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, বন্দুকটি ছররা জাতীয়। দুষ্কৃতী নয়, বরং পাখি শিকারীদের হাতে এ ধরনের বন্দুক বেশি দেখা যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই আবাসনে ‘এ’ ব্লকের সাততলায় থাকেন মুস্‌সাদি দম্পতি। মঙ্গলবার সেখানেই দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিটি বুলবুলের বাঁ দিকের ভ্রূ-র ভিতরে ঢুকে যায়। দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গেলে স্বামীকে ফোন করেন মহিলা। রামগোপালের ফোন পেয়ে তাঁর বন্ধু ও প্রতিবেশীরা গিয়ে বুলবুলকে বেলেঘাটার এক নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বম্ভর অগ্রবাল জানান, নিয়ে আসার পরেও ওই মহিলার সামান্য জ্ঞান ছিল। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, তাঁর মাথার পিছনে ছররা-গুলিটি আটকে রয়েছে। ওই নার্সিংহোমে নিউরোসার্জারির পরিকাঠামো না থাকায় সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ বুলবুলকে ই এম বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে বুধবার রাত পর্যন্ত গুলিটি বার করা যায়নি। বাইপাসের ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বিনোদ সিঙ্ঘানিয়া বলেন, মহিলার চোখের ক্ষতি হয়নি। তবে মাথার ভিতরে চোট লেগেছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করা হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, মহিলার অবস্থা দেখে বাইপাসের ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ফুলবাগান থানাকে জানায়। তারা খবর দেয় লেকটাউন থানাকে। রাতে পুলিশ অভিযোগ নেয়।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে এই হামলা হয়ে থাকতে পারে। পেশায় ব্যবসায়ী রামগোপালের সঙ্গেও কারও শত্রুতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে লুঠ বা ডাকাতির উদ্দেশ্যের এখনও প্রমাণ পায়নি পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, ডাকাতি করতে এলে মহিলা জখম হওয়ার পর ঘরে ঢোকার চেষ্টা করত দুষ্কৃতীরা। যদিও অনেকে মনে করছেন, আচমকা গুলি চালিয়ে দুষ্কৃতীরা নিজেরাই ঘাবড়ে যায়। তাই তারা চম্পট দেয়। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘এই অপরাধের পিছনে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

ওই আবাসনের রক্ষীরা কিছু দেখেননি বলেই তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। বুলবুলদের ফ্ল্যাটের কাছে আবাসনের ‘সি’ ব্লকের ছাদ। দুষ্কৃতীরা সে দিক দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘আবাসনের রক্ষীদের সঙ্গে কথা বলা হবে। সব আবাসনেই সিসিটিভি বসানোর জন্য চিঠি দেওয়া হবে।’’

Bulbul Musadi Lake Town Bulbul police flat gun
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy