প্রতীকী ছবি।
‘দুগ্গা’ ‘দুগ্গা’ করে মাঠে নেমে পড়েছেন চেয়ারম্যান পারিষদ থেকে কাউন্সিলরেরা!
দুর্গাপুজোর প্রস্তুতির জন্য নয়। বরাহনগর পুরসভার জনপ্রতিনিধিরা এ বার আগেভাগে রাস্তায় নেমেছেন ডেঙ্গি মোকাবিলা মোকাবিলায়। যদিও শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গির থাবা থেকে নিজেদের এলাকাকে কতটা আগলে রাখতে পারবেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না কেউই।
পুর কর্তাদের দাবি, গত বারের থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বারে আগাম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। চলছে জোরদার সমীক্ষা ও প্রচারও।
কিন্তু পরিকাঠামোগত অভাব অবশ্য রয়েই গিয়েছে। পুরসভায় কোনও পতঙ্গবিদ নেওয়া হয়নি এবং যে সব পুরকর্মী সমীক্ষা চালাচ্ছেন, তাঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, বরাহনগর ও কামারহাটি পুরসভা এক সঙ্গে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের করবে। তাতেই স্বাস্থ্য কর্মীদের ডেঙ্গি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
পুরকর্তারা যাই দাবি করে থাকুন না কেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কিন্তু অভিযোগের শেষ নেই। তাঁরা বলছেন, পুরকর্মীরা অনেকেই দায়সারা ভাবে কাজ সারছেন। গোপাললাল ঠাকুর রোডের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘বেশ কয়েক বার বাড়িতে পুরকর্মীরা এসে শুধু জানতে চেয়েছেন কারও জ্বর হয়েছে কি না। কিন্তু বাড়ির ভিতরটা দেখতে চাননি।’’ এক পুরকর্তার মন্তব্য, ‘‘এর জন্য ফ্যামিলি কার্ড করা হয়েছে। পুরকর্মীরা বাড়িতে গিয়ে ঠিকঠাক সমীক্ষা করলেন কি না, তার ভিত্তিতে ওই কার্ডে সই করবেন বাসিন্দারা। এতে দায়সারা কাজ বন্ধ হবে।’’
গত বছর বর্ষার শুরুতেই বরাহনগর জুড়ে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সেই জ্বরে প্রায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যদিও পুর কর্তাদের দাবি, সেগুলি যে সবই ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে, এমন কোনও তথ্য প্রমাণ মেলেনি। তাঁদের দাবি, গত বছরে ডেঙ্গিতে তিন-চার জনের মৃত্যু হয়েছে। বরাহনগরের ৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে গত বছরে কমবেশি ১০টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। তার মধ্যে বসাক বাগান, সতীন সেন নগর, শীতলামাতা কলোনি, স্বাধীন পল্লি, রবীন্দ্রনগর, আলমবাজার, নিউ ন’পাড়া কলোনি-সহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পুর এলাকা ছাড়াও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং কেন্দ্রীয় অস্থি চিকিৎসা কেন্দ্রে ডেঙ্গির মশার লার্ভা খুঁজে পেয়েছিলেন পুরকর্মীরা।
এ বার কয়েক দিনের বৃষ্টির পরে দেখা গেল বরাহনগরের বেশ কিছু বাড়িতে, পুকুরের ধারে এবং কারখানায় জল জমে রয়েছে। ওই জলেই ম্যলেরিয়া, ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা ডিম পাড়ে। বরাহনগরের চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক জানান, অনেক বাড়ি তালা বন্ধ হয়ে পরে রয়েছে। সেখানে ঢোকা যাচ্ছে না। আবার ব্যক্তিগত মালিকানার জমি ও পুকুর সাফাই করার জন্য পুরসভা সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে ওই সমস্ত মালিকদের নোটিস পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি, কারখানা ও টায়ারের দোকানদারদেরও কাউন্সিলরেরা গিয়ে বারবার করে সতর্ক করে আসছেন।
শুধু তাই নয়, বাইরে থেকে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে কেউ বরাহনগরে আসছেন কী না তার উপরেও নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বাইরে থেকে আসা রোগীদের থেকেই রোগ ছড়াচ্ছে। তাই বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। কারও বাড়িতে বাইরে থেকে জ্বর নিয়ে কেউ এলে পুরসভাকে তা জানাতে বলা হয়েছে। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলছেন, ‘‘বাইরে থেকে আসা লোকেদের উপরে নজরদারি করাটা জরুরি।’’
তবে এ পরেও ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া থেকে রেহাই মিলবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ কাটছে না বরাহনগরের বাসিন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy