Advertisement
E-Paper

ঘুষ দিতে না চেয়ে প্রহৃত, নালিশ

তাঁর বাড়ি নবদ্বীপে। বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন স্ত্রী ও ছোট ছেলে। পারিবারিক এই অবস্থায় পাঁচ বছর আগে রাজ্য দমকল বাহিনীতে যোগ দেন ৩৫ বছরের গদাধর হালদার। তখন থেকেই কলকাতায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৮

তাঁর বাড়ি নবদ্বীপে। বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন স্ত্রী ও ছোট ছেলে।

পারিবারিক এই অবস্থায় পাঁচ বছর আগে রাজ্য দমকল বাহিনীতে যোগ দেন ৩৫ বছরের গদাধর হালদার। তখন থেকেই কলকাতায়। চাইলেও ছুটি বিশেষ পান না। বাবা-মার অসুস্থতার কারণে বদলির জন্য মাস ছয় আগে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গদাধর।

ভয়ঙ্কর এক অভিযোগ নিয়ে তিনি এখন শয্যাশায়ী। অভিযোগ, যাঁদের কাছে গদাধরবাবু সাহায্য চেয়েছিলেন, তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের সেই চার নেতা বদলির আশ্বাস দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চান। গদাধরবাবু দিতে না চাওয়ায় তাঁকে দমকলের বেল্ট দিয়ে বেধড়ক মারা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে লালবাজারের দমকল ইউনিটের ঘরে। আরও অভিযোগ, মারধর করে সারা রাত গদাধরবাবুকে আটকেও রাখা হয়।

ঘটনাটি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে দমকল। ডিজি সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্তব্যরত অবস্থায় যে ভাবে দমকলের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। বিভাগীয় তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত চার কর্মীকে উত্তরবঙ্গে বদলি করা হয়েছে।’’

গত ১০ নভেম্বর এই ঘটনার পরদিন গদাধরবাবুকে ভর্তি করা হয় কলকাতা মেডিক্যালে। এক সপ্তাহ পরে ছাড়া পেয়ে এখন বাড়িতে তিনি। বাঁ চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না। শনিবার চক্ষু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছেন।

১২ নভেম্বর হাসপাতালে গিয়ে গদাধরবাবুর বয়ান নেয় পুলিশ। তার ভিত্তিতেই অভিযুক্ত চার কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযুক্ত রমিত ঘোষ, মনোজ বিশ্বাস, নবরঞ্জন মণ্ডল, শুভ মজুমদার ১৬ নভেম্বর ব্যাঙ্কশাল কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন। রমিত তৃণমূল প্রভাবিত ওয়েস্ট বেঙ্গল ফায়ার সার্ভিস এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের উত্তর কলকাতার সম্পাদক। মনোজ সংগঠনের লালবাজার শাখার ইউনিট সেক্রেটারি। বাকিরা সংগঠনের সদস্য।

ঠিক কী ঘটেছিল? গদাধরবাবুর কথায়, ‘‘বদলি করিয়ে দেবে বলে রমিত ও মনোজ ৫০,০০০ টাকা চায়। আমি দিইনি। ৮ নভেম্বর ওরা ফের কুড়ি হাজার টাকা চায়। আমি রাজি ছিলাম না। এর পরে ওরা চাপ সৃষ্টির চেষ্টা শুরু করে।’’

গত ১০ নভেম্বর রাতে লালবাজারে ডিউটিতে যান গদাধরবাবু। তাঁর অভিযোগ, আগের দিন ফোনে নবরঞ্জন তাঁকে টাকা আনতে বলেন। তিনি নিয়ে যাননি। গদাধরবাবু জানান, ডিউটিতে থাকাকালীন রাত ১১টা নাগাদ রমিত ও মনোজ টাকা চায়। তিনি দিতে না চাইলে রমিত, মনোজ নিজের অফিসের পোশাকের বেল্ট খুলে তাঁকে মারে।

গদাধরবাবুর কথায়, ‘‘ওরা মারতে মারতে দোতলায় রিক্রিয়েশন ক্লাব রুমে নিয়ে যায়। ঘরে তখন নবরঞ্জন ও শুভ ছিল। চার জন মিলে আমার পেটে, বুকে, মুখে ক্রমাগত লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে। শুভ ভাঙা বোতল নিয়ে আমার পেটে আঘাত করতে চেয়েছিল। বাধা দিলে আমার হাত কেটে যায়।’’ অভিযোগ, সেই সময়ে লালবাজারের ওই ইউনিটের দায়িত্বে থাকা অফিসার সুবীর ঘোষ সব দেখলেও, গদাধরবাবু সাহায্য চাওয়া সত্ত্বেও চুপ করেছিলেন।

পুলিশকে গদাধরবাবু জানান, প্রায় এক ঘণ্টা মারধরের পরে ওই ক্লাব ঘরে তাঁকে আটকে চার জন বেরিয়ে যান। গদাধরবাবুর কথায়, ‘‘আমার কোনও জ্ঞান ছিল না। গভীর রাতে জ্ঞান ফিরতে নীচে নেমে পালানোর চেষ্টা করি। গেট দিয়ে বেরোতেই ওরা আমাকে দেখে ফেলে। রমিতরা টানতে টানতে ফের উপরে নিয়ে গিয়ে ক্লাব রুমের বাইরে থেকে ছিটকিনি দিয়ে দেয়।’’

গদাধরবাবুর অভিযোগ, ওই ঘরে সারারাত কাটানোর পরে ভোর চারটে নাগাদ ডিউটি শুরুর আগে ওই চার জন দরজা খুলে তাঁকে টেনে নীচে নিয়ে গিয়ে ডিউটি করতে বলেন। লালবাজার ফায়ার স্টেশনের ওসি তাপস কুরেশি সকাল ন’টা নাগাদ অফিসে ঢুকে আহত গদাধরবাবুকে এক জায়গায় বসে থাকতে দেখেন। গোটা ঘটনার কথা জানতে পেরে গদাধরবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন তিনিই।

দমকল সূত্রে খবর, নবরঞ্জন ও শুভ লালবাজার ফায়ার স্টেশনের কর্মী নন। নবরঞ্জন দমকলের সদর দফতর ও শুভ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ফায়ার স্টেশনের কর্মী। নবরঞ্জন তৃণমূল সংগঠনের সেন্ট্রাল কমিটির অফিস সেক্রেটারিও। লালবাজার দমকল ইউনিটের কর্মী না হয়েও কী ভাবে রাতে ঢোকার অনুমতি পেলেন তাঁরা? লালবাজারের ফায়ার স্টেশনের ওসি তাপস কুরেশি বলেন, ‘‘ ১০ তারিখ রাতে ঘটনার সময়ে ছিলাম না। স্টেশনের দায়িত্বে ছিলেন সুবীর ঘোষ। দুই বহিরাগতকে ঢুকতে দেওয়ার জন্য তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে।’’

তৃণমূল পরিচালিত এই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অরূপ রায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। অভিযুক্ত চার জনকে সংগঠনের তরফে শো-কজ করা হয়েছে। যথাযথ জবাব না পেলে তাঁদের বহিষ্কার করা হবে।’’ যদিও ঘটনার কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত রমিত ঘোষ বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে।’’ বাকি তিন জনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও পাওয়া যায়নি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি তাঁরা।

TMC Extortion lalbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy