আশ্বিনের শারদপ্রাতে উত্তর কলকাতার ৭, রামধন মিত্র লেনের বাড়িতে ঘনঘন বেজে উঠছিল টেলিফোন। প্রথম কণ্ঠ নাট্যকার মন্মথ রায়ের, “বীরেন, এটা কী হল?” এর পরে সারা দিন ফোনের বন্যা। উত্তর দেননি বিরূপাক্ষ। বাড়ির লোক বাধ্য হয়ে টেলিফোন নামিয়ে রাখেন।
মহালয়া ঘিরে দু’টি ঘটনা ঘটে সত্তরের দশকের সেই বছরটিতে। শোনা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশেই মহালয়ার সকালে সে বার আকাশবাণী ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র বদলে বাজিয়েছিল ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’। যেখানে মূল ভাষ্যপাঠ করেছিলেন উত্তমকুমার। সংলাপ বলায় পারদর্শী কণ্ঠ আর সুরেলা ভাষ্যপাঠের বিশেষ আবেদনের মধ্যে সে দিন তফাত খুঁজে পেয়েছিল বাঙালি। শ্রোতাদের চাপেই পাঁচ দিন পরে মহাষষ্ঠীর সকালে রেডিয়োয় বাজল ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির...।’ ইতিহাস ছুঁয়ে ফেললেন বিরূপাক্ষ, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বাঙালি যেন স্থির করে ফেলল, আজীবন বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠের আলোর বেণুর সুরেই দেবীপক্ষের প্রথম প্রভাত মুখরিত হবে।
২০২০ সালের এই অতিমারির বাতাবরণে মঙ্গলবার সকালে তেতলার ঘরে বসে সেই কাহিনি শোনাচ্ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণের নাতি সায়ম ভদ্র। বিজ্ঞাপন জগতের উচ্চপদস্থ কর্মী, ব্যস্ত ছিলেন ওয়ার্ক ফ্রম হোমে। তেতলায় পৌঁছতে হল ঘোরানো কাঠের সিঁড়ি পেরিয়ে। পুরনো কলকাতার খড়খড়ির জানলা দিয়ে সিঁড়ির হাতলে ছিটকে পড়ছে শরতের রোদ। দোতলায় ওঠার পথে দেওয়ালে ঝুলছে বেলজিয়াম কাচের বিরাট আয়না।