বিপদ: এখানে-সেখানে বসে গিয়ে বিপজ্জনক অবস্থা বিজন সেতুর। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
পোস্তায় বিবেকানন্দ রোডের উপরে নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরেও টনক নড়েনি রাজ্য সরকারের। ওই দুর্ঘটনার পরে শহরের সব সেতু এবং উড়ালপুলের উপরে কড়া নজরদারির সুপারিশ করেছিল একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিন্তু তাতে যে কোনও ফল হয়নি সম্প্রতি বাঘা যতীন উড়ালপুলের চাঙড় খসা এবং অরবিন্দ সেতুতে ফাটলই সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর হাল যে খারাপ সেটিও নজর এড়িয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকারের।
সূত্রের খবর, দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে বাইপাস সংযোগকারী বিজন সেতুর একটি অংশ বসে অসমান হয়ে গিয়েছে। গড়িয়াহাট থেকে কসবা পর্যন্ত বিস্তৃত ওই ব্যস্ত সেতুর রাস্তা উঁচু নিচু হওয়ায় গাড়ি চলাচল শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। ফলে যানজট নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট গাড়ি গর্তে পড়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
১৯৭৮ সালের ১৫ এপ্রিল বিজন সেতু চালু হয়। কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (কেআইটি) সেতুটি তৈরি করলেও বর্তমানে কেএমডিএ সেতুর দেখভালের দায়িত্বে। ওই সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘বালিগঞ্জ স্টেশনের উপরে বিজন সেতুতে দিন দিন গাড়ির চাপ বাড়ছে। নিয়ম করে সেতুর দেখভাল হলেও রাস্তা অসমান হওয়ায় অটো, মোটরসাইকেল কিংবা ছোট গাড়িতে যাতায়াতের সময় বেশ জোরে ঝাঁকুনি লাগছে।’’ কেএমডিএ-এর এক কর্তা জানান, বিষয়টি তাঁদের নজরেও এসেছে। তাঁর দাবি, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারেরা সব দিক খতিয়ে দেখছেন। শুধু বিজন সেতুই নয়, শহরের সমস্ত সেতুর উপরে নজরদারি চলছে। প্রয়োজন মতো মেরামতি করা হচ্ছে।’’
কসবা থেকে গড়িয়াহাট রুটের এক অটোচালকের কথায়, ‘‘প্রতি দিন আমাদের যাত্রী নিয়ে যেতে হয়। বসে যাওয়া অংশে গাড়ির গতি না কমিয়ে গেলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। এর জেরে সেতুতে গাড়ি চলাচল মন্থর হয়ে পড়ছে। অফিসের ব্যস্ত সময়ে যানজট হচ্ছে। হিমসিম খাচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশ। এক গাড়ি চালক বলেন, ‘‘অসমান অংশ দিয়ে যেতে গেলে মনে হয় এই বুঝি গাড়ি উল্টে যাবে। কিন্তু কোনও উপায় নেই। এ ভাবেই যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’
পোস্তার ঘটনার পরে রাইট্স যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে বলা ছিল, শুধুমাত্র সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাই যথেষ্ট নয়, নিয়মিত প্রতিটি সেতুতে নজরদারি করতে হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু সেতুর দুরবস্থার ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে যে দেখভাল কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। কেএমডিএ সূত্রের খবর, শহরের সেতুগুলি বেশির ভাগই প্রায় ৩০ বছরের পুরনো। সেতুর অবস্থা কেমন তা মাঝে মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারদের পরীক্ষা করে দেখার কথা। কিন্তু অনেক সময়ই কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে সেই পরীক্ষা ঠিক মতো হয় না।
সূত্রের খবর, গৌরীবাড়িতে অরবিন্দ সেতুও এ রকম অসমান হয়ে পড়েছিল। দ্রুত সেই অংশ সারিয়ে গাড়ি চলাচলের পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছিল সরকার। কেএমডিএ সূত্রের খবর, সম্প্রতি বাঘা যতীন সেতুর একাংশও ভেঙে গিয়েছিল। তার পরেই শহরের অম্বেডকর সেতু, অরবিন্দ সেতু এবং বাঘা যতীন সেতুর স্বাস্থ্য সমীক্ষার দায়িত্ব ‘রাইট্স’কে দেয় কেএমডিএ।
কসবার বিধায়ক জাভেদ খান অবশ্য বিজন সেতুর এই দুরবস্থার কথা জানেন না। বৃহস্পতিবার তাঁকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জানাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy