Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

করোনা রুখতে খাস কলকাতায় গোমূত্র পান! আয়োজক বিজেপি নেতা

জোড়াসাঁকো এলাকার বিজেপি নেতা নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় সোমবার গোমূত্র পান করালেন অনেককে।

গোমূত্র পান করাচ্ছেন  বিজেপি নেতা নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

গোমূত্র পান করাচ্ছেন বিজেপি নেতা নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ২২:৫২
Share: Save:

করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর নামে আর এক ‘সংক্রমণ’। গোমূত্র পান করা এবং করানোর হুজুগ দিল্লি থেকে সংক্রামিত হল কলকাতাতেও। দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিল হিন্দু মহাসভা, উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রধান চক্রপাণি মহারাজ নিজেও। সোমবার কলকাতায় গোমাতার পুজো এবং এবং গোমূত্র পানের আসর বসালেন বিজেপি নেতা। করোনার কোনও প্রতিষেধক যে হেতু এখনও আবিষ্কার হয়নি, সে হেতু গোমূত্র পানই বাঁচার একমাত্র উপায়— জোর গলায় বললেন সেই বিজেপি নেতা। তবে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব জানালেন, ওই কর্মসূচির সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই।

জোড়াসাঁকো এলাকার বিজেপি নেতা নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় সোমবার গোমূত্র পান করালেন অনেককে। প্রথমে ধুপ-ধুনো-ফুল-ফল-মিষ্টান্নে গোমাতার পুজো, রুটি খাইয়ে গরু এবং বাছুরের সেবা। তার পরে ঘটিতে করে গোমূত্র বিলি। প্রকাশ্যেই স্থানীয় লোকজনের মুখে আলগোছে গোমূত্র ঢেলে দিতে দেখা গিয়েছে ওই বিজেপি নেতাকে। করোনা রোধের নিদান হিসেবে গোমাতার পুজো এবং গোমূত্র পানের ওই আসরে যাঁরা হাজির হয়েছিলেন, তাঁদেরও বেশ অকাতরেই গোমূত্র পান করতে দেখা গিয়েছে। ঘটনাস্থলে হাজির এক পুলিশ কনস্টেবলের হাতেও গোমূত্র ঢেলে দেন বিজেপি নেতা। হাতের তালুতে চুমুক দিয়ে তিনি তা খেয়েও নেন।

শুধু গোমূত্র অবশ্য নয়, লাড্ডুও ছিল গোমাতার প্রসাদ হিসেবে। তবে লাড্ডু খেতে হলে আগে গোমূত্র পান করতে হবে— এই রকম শর্ত রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
করোনা রুখতে গোমূত্র পান! তা-ও কলকাতার বুকে! ঘটনার ছবি সামনে আসতেই প্রবল প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। কলকাতার ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে বলেছেন, ‘‘যাঁদের চিড়িয়াখানায় থাকার কথা, তাঁরা বাইরে থাকলে এই রকমই হয়।’’ আর কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর উদ্বেগ, ‘‘বিজ্ঞানের উল্টো পথে হেঁটে করোনা সংক্রমণ রোখার নামে যে ভাবে গোমূত্র পান করানো হচ্ছে, তার ভয়ঙ্কর ফল হতে পারে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গ্রামাঞ্চলে মানুষ যদি দলে দলে গোমূত্র পান করে নতুন কোনও সংক্রমণের শিকার হন, তা হলে কে দায়ী থাকবে?’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টি নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। করোনা মোকাবিলার জন্য তিনি যে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন, তা শেষ হওয়ার পরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ওই সংক্রান্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, কোনও বিতর্কিত বিষয়ে তিনি কথা বলতে চান না।

আরও পড়ুন: রাজ্যে জারি মহামারী আইন, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ

তবে চিকিৎসকরা এই কাণ্ডের সমালোচনায় সরব। ভায়ারোলজিস্ট অমিতাভ নন্দীর মতে, ‘‘গোমূত্রের মাধ্যমে ভাইরাস ভাল হওয়ার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত বিশ্বে পাওয়া যায়নি। এই ভাইরাস আগে কখনও ভারতে আসেনি। এর বয়স মোটে তিন মাস। তাও ভারতে এসেছে এই সবে। যাঁরা এ সব প্রচার চালাচ্ছেন, তাঁরা কোন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করলেন? কী ভাবে নিশ্চিত হলেন যে এতে রোগ সারে? এই অপপ্রচার অবৈজ্ঞানিক ও ভণ্ডামি ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।’’

আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে ভোট পিছনোয় বহু পুরসভায় বসতে পারে প্রশাসক

গোমূত্র পান করানোর হোতা যিনি, সেই নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এ দিন গেরুয়া পোশাক পরে এবং বুকে পদ্মফুলের ব্যাজ লাগিয়ে সবার মুখে গোমূত্র ঢালছিলেন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বলছেন, নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের ওই আয়োজনের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘ওই কর্মসূচির সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কারওকে এই রকম কোনও কর্মসূচি আয়োজন করতে বলেননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও বলেননি যে, করোনা রুখতে গোমূত্র পান করান। যিনি এ সব করেছেন, তিনি নিজের দায়িত্বে করেছেন।’’ কিন্তু লোককে গোমূত্র পান করানোর সময়ে নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বুকে যে পদ্মফুলের ব্যাজ লাগানো ছিল? সায়ন্তন বলেন, ‘‘পদ্মফুল যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন। ওটা জাতীয় ফুল। পদ্মফুল মানেই বিজেপি নয়।’’

যিনি এই কাণ্ডের প্রধান আয়োজক ছিলেন, সেই নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিন্দুমাত্র বিচলিত নন। তিনি জোর গলাতেই বার বার বলেছেন যে, করোনা রুখতে পারে শুধুমাত্র গোমূত্রই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Cow Urine BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE