Advertisement
E-Paper

‘জতুগৃহ তৈরি করেছি আমরাই’

রোগের দাওয়াই আছে। কিন্তু সেই ওষুধ কী ভাবে খেতে হয়, তা জানা নেই। ফলে সারছে না রোগ।দাহ্য পদার্থ ঘরের মধ্যে ডাঁই করে রাখা। বিদ্যুতের ওয়্যারিংয়ে কোনও ছিরিছাঁদ নেই। শর্ট সার্কিট হয়ে যে কোনও মুহূর্তে আগুন লাগার আশঙ্কায় ভুগছেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৭ ০১:৫৪

রোগের দাওয়াই আছে। কিন্তু সেই ওষুধ কী ভাবে খেতে হয়, তা জানা নেই। ফলে সারছে না রোগ।

দাহ্য পদার্থ ঘরের মধ্যে ডাঁই করে রাখা। বিদ্যুতের ওয়্যারিংয়ে কোনও ছিরিছাঁদ নেই। শর্ট সার্কিট হয়ে যে কোনও মুহূর্তে আগুন লাগার আশঙ্কায় ভুগছেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই। আগুনের মোকাবিলা করতে ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে ঘরে ঘরে বসেছে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। কিন্তু সেই যন্ত্র চালানোর নিয়মই জানেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে কোনও প্রশিক্ষণই হয়নি কারও।

শুধু তা-ই নয়, যন্ত্র লাগানোর পরে কখনও কোনও রকম সার্ভিসিং হয়নি অনেক ক্ষেত্রেই। তাই যন্ত্রগুলি আদৌ সক্রিয় রয়েছে কি না, তা জানার উপায় নেই। হঠাৎ আগুন লাগলে যন্ত্র কাজ করবে কি না, তা জানেনই না অনেকে। বুধবার ১২ নম্বর পর্তুগিজ চার্চ স্ট্রিটে অগ্নিকাণ্ডের পরে বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের বড় একটা অংশ নিজেদেরই দুষতে শুরু করেছেন। এক ব্যবসায়ীর স্বীকারোক্তি, ‘‘জতুগৃহে ব্যবসা করছি আমরা। এই জতুগৃহ তৈরি করেছি আমরা নিজেরাই।’’

কোনও কোনও ব্যবসায়ী আবার বলছেন, ‘‘অ্যাসোসিয়েশনের কথা শুনে যন্ত্র লাগিয়েছি। কিন্তু আগুন লাগলে এ যন্ত্র কী ভাবে কাজ করবে, তা জানি না।’’ সোডা ব্যবসায়ী এস এস পানসারি বলেন, ‘‘লোক এসে যন্ত্র বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। বলেছে আগুন লাগলে হাতল ধরে টানতে। এর বেশি কিছু জানি না।’’

শুধু পর্তুগিজ চার্চ স্ট্রিট নয়, লাগোয়া বর্নফিল্ড রোডেও রয়েছে সারি সারি রাসায়নিকের দোকান। ঘিঞ্জি গলির ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায়, উপর থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে জট পাকানো বিদ্যুতের তার। ওই চত্বরের ‘ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানান, কয়েক বছর আগে নন্দরাম বাজারে বড় অগ্নিকাণ্ডের পরে বড়বাজারের সুরক্ষা নিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল সিইএসসি, দমকল, কলকাতা পুলিশ। তখন অনেক পুরনো ওয়্যারিং বদলানো হয়েছিল, বসানো হয়েছিল অনেক অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। কিন্তু যন্ত্রগুলি কাজ করে কি না, তা জানতে একটা আগ্নিকাণ্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

এ রকম ঝুঁকি নিয়েই চলবে এত বড় ব্যবসা? ব্যক্তিগত সচেতনতা যে তাঁদের অনেকেরই নেই, তা স্বীকার করেছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। এক জনের মন্তব্য, ‘‘কাঠ, প্লাস্টিক, রবারের সামগ্রী, রাসায়নিকের মতো দাহ্য বস্তু মজুদ করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভাবনা-চিন্তা করা দরকার।’’ আর এক ব্যবসায়ী নিজের গুদামে প্লাস্টিকের সামগ্রী ভরে রেখেছেন। এ দিন তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমাদেরই আগে সতর্ক হওয়া উচিত।’’ দিনকে দিন অনুমোদনহীন দোকানের সংখ্যা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী জীবন বণিক।

একটি বহুতল বাড়ির খোলা মিটার বক্সের দিকে দূর থেকে আঙুল দেখিয়ে এক ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, ‘‘আজ আপনাকে দেখাচ্ছি। বুধবারই এ পাড়ায় আগুন লেগেছিল। আগামী দু’-তিন দিন এ নিয়ে চর্চা চলবে। তার পরে আমরাই ভুলে যাব।’’ দেখা গেল, বক্সেও জট পাকিয়ে আছে বিদ্যুতের তার। স্থানীয় কাউন্সিলর সুনীতা জওহরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনিও বলেন, এত ঘিঞ্জি এলাকায় সামান্য আগুনের ফুল্কিও বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে ওঠে। তাঁর দাবি, গত কয়েক বছরে এই এলাকায় যেটুকু উন্নতি হয়েছে, তা ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই।

Fire extinguisher Businessmen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy