Advertisement
E-Paper

রাজ্যের ‘হাতের লক্ষ্মী’ ছিনিয়ে নিল কেন্দ্র

চমৎকার সুযোগ ছিল রাজ্যের হাতে। কিন্তু স্রেফ সদিচ্ছার অভাবে ও সময়মতো উদ্যোগী হতে না-পারায় রাজ্যের ‘আমও গেল, ছালাও গেল!’ মাঝখান থেকে ঝোপ বুঝে কোপ মেরে গেল কেন্দ্র! এ কথা রাজ্য ইএসআইয়ের কর্তাদের একটা বড় অংশই এখন আফশোসের সুরে স্বীকার করছেন, আম কোনটা?

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১২
Share
Save

চমৎকার সুযোগ ছিল রাজ্যের হাতে। কিন্তু স্রেফ সদিচ্ছার অভাবে ও সময়মতো উদ্যোগী হতে না-পারায় রাজ্যের ‘আমও গেল, ছালাও গেল!’ মাঝখান থেকে ঝোপ বুঝে কোপ মেরে গেল কেন্দ্র! এ কথা রাজ্য ইএসআইয়ের কর্তাদের একটা বড় অংশই এখন আফশোসের সুরে স্বীকার করছেন, আম কোনটা?

প্রায় ১৫ কোটি টাকার অজস্র আধুনিক যন্ত্রপাতি, যার বেশির ভাগই সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে ব্যবহার করা যেত। ২০০৯-’১০ সালে যা কেন্দ্রীয় সরকার কিনে পাঠিয়েছিল রাজ্যের মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু তা বাক্সবন্দিই থেকে গিয়েছিল।

ছালা কোনটা?

মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে ১০টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম (এমডি) চালু করার পরিকল্পনা।

অর্থাৎ রাজ্যের হাতছাড়া হয়েছে কেন্দ্রের পাঠানো বিপুল টাকার যন্ত্রপাতি ও মেডিক্যালে স্নাতকোত্তরের একাধিক আসন।

আসনগুলি আগেই গিয়েছিল। এ বার যন্ত্রও গেল।

এর মধ্যে কেন্দ্র আবার মাঝখান থেকে কী ভাবে কোপ মেরে গেল?

মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে পড়ে থাকা কোটি-কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেন্দ্রের ইএসআই কর্পোরেশন কার্যত ছিনিয়ে নিয়ে গেল!

জানুয়ারি মাসেই সে সব তারা দিব্যি বসিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র-পরিচালিত জোকা ইএসআই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জোকায় ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’(এমসিআই)-এর পরিদর্শন আসন্ন। রাজ্যের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে যাওয়া যন্ত্র দেখিয়েই তারা জুটিয়ে ফেলতে চায় এমসিআই-এর অনুমোদন। জোকার কর্তাদের কথায়, ‘‘ছয় বছরেও যখন কেন্দ্রের দেওয়া যন্ত্রপাতি রাজ্য ব্যবহার করতে পারল না, তখন আমাদের দেওয়া জিনিস আমরাই ফেরত নিয়ে গেলাম!’’

রাজ্য ইএসআইয়ের একাধিক কর্তারই এখন আফশোস, কেন্দ্রের ভরসায় না-থেকে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে রাজ্য নিজে উদ্যোগী হয়ে কিছু চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর টেকনিশিয়ান নিয়োগ করে ওই যন্ত্রগুলি ব্যবহার করতে পারতো। তা হলে ১৫ কোটি টাকার যন্ত্রকে ৬ বছর বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকতে হত না। আর কেন্দ্রও সেগুলি কেড়ে নিয়ে যেতে পারত না। বরং এর সুবিধা পেতে পারতেন এই রাজ্যের ইএসআই প্রকল্পের আওতায় থাকা বহু দুঃস্থ রোগী।

আপাতত এই সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর তুঙ্গে উঠেছে। চলছে পারস্পরিক দোষ চাপানোর পর্ব।

রাজ্য ইএসআইয়ের অধিকর্তা মৃগাঙ্কশেখর কর এবং মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালের অধিকর্তা ময়ূখ রায়ের দাবি, ২০০৮ সালে কেন্দ্রের ইএসআই কর্পোরেশন জানিয়েছিল, তারা মানিকতলায় গাইনি, পেডিয়াট্রিক্স, মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, রেডিওলজি, প্যাথোলজি, অ্যানেস্থেশিয়া প্রভৃতি ১০টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালু করতে চায়। সেই কারণে আগেভাগেই কেন্দ্র ১৫ কোটি টাকার যন্ত্র কিনে মানিকতলায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষক-চিকিৎসক নিয়োগ করেছিল শুধু প্যাথোলজি ও অ্যানেস্থেশিয়ার জন্য। ফলে অন্য কোনও বিষয়ে পাঠ্যক্রম চালু হয়নি। যন্ত্রও ব্যবহার করা যায়নি। রাজ্যের আরও অভিযোগ, যন্ত্রগুলি রক্ষণাবেক্ষণ কারা করবে তা নিয়েও কেন্দ্র সমস্যা তৈরি করেছিল।

অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় কর্তারা পাল্টা জানিয়েছেন, ওই যন্ত্রগুলো ব্যবহারের জন্য এবং স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালানোর জন্য অনেক জায়গা দরকার ছিল। হাসপাতাল ভবন সংস্কার করে মানিকতলা হাসপাতালে সেই জায়গা বার করতে হত। কিন্তু এই কাজে রাজ্য তাদের বার বার বাধা দিয়েছে। ফলে কাজ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কেন্দ্রীয় ইএসআই কর্পোরেশনের এক শীর্ষকর্তার অভিযোগ, ‘‘ওদের মেশিন ব্যবহারের ইচ্ছা থাকলে ওরা আমাদের নির্মাণ সংস্থার কাজে অসহযোগিতা করত না। বা এতদিনে নিজেরা বিশেষজ্ঞ ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ করে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আসলে ওই যন্ত্রগুলো চালু হয়ে গেলে বেসরকারি জায়গায় রোগী রেফার করে পশ্চিমবঙ্গের ইএসআইয়ের এক শ্রেণির চিকিৎসক যে কাটমানি খান তা বন্ধ হয়ে যেত।’’

তার বিরোধিতা করে রাজ্যের কর্তাদের দাবি, ‘‘আমরা ডাক্তার-টেকনিশিয়ান নিয়োগ করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু রাজ্যের এত কম মাইনে যে কেউ এই চাকরিতে আসতে চান না। সবাই কেন্দ্রের ইএসআই হাসপাতালের চাকরি করতে চান। সেখানে অনেক বেশি বেতন।’’ একে অবশ্য ‘অজুহাত’ হিসেবে উল্লেখ করে কেন্দ্রের আওতাধীন জোকা ইএসআইয়ের অধ্যক্ষা জয়শ্রী মিত্রের মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্র স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালু করেনি বলে এত ভাল আর দামি যন্ত্র রাজ্য ব্যবহার করতে পারেনি, এটা কোনও যুক্তি হতে পারে না। স্নাতকোত্তরে অতগুলি সিটে অর্থ দফতরের অনুমোদন মিলে গিয়েছিল। তার পরে রাজ্যের দিল্লিতে একটু দৌড়োদৌড়ি করলেই কাজ হয়ে যেত। সেই পরিশ্রমটুকু ওরা করল না। সুযোগ হারালো।’’

জয়শ্রীদেবীর আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা যন্ত্রগুলো নিয়ে এসে আমাদের হাসপাতালে চালু করে দিয়েছি। রাজ্য সরকারকে সেগুলি ফেরত দেওয়ার কোনও নির্দেশ দিল্লি থেকে আসেনি।’’

ESI Manicktala Central

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}