Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

নিয়ন্ত্রণের প্রথম দিনে ঘরে থাকাই বাছল শহর

অধিকাংশের দাবি, জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের মত, “কর্মনাশা লকডাউন নয়, এখনকার মতো কিছু বিধিনিষেধেই কাজ হবে।’’

ফাঁকা: আংশিক লকডাউনের কারণে রাস্তায় লোকজন কম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, ধর্মতলায়।

ফাঁকা: আংশিক লকডাউনের কারণে রাস্তায় লোকজন কম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২১ ০৬:১৯
Share: Save:

অবশেষে কি হুঁশ ফিরল শহরের?

এই মুহূর্তে করোনার একরোখা দাপট কমাতে লকডাউনই একমাত্র পথ কি না, তা নিয়ে যখন জল্পনা তুঙ্গে, তখন শহর কলকাতার চেহারায় বৃহস্পতিবার ছিল কার্যত হুঁশ ফেরারই লক্ষণ। দিনভর ফাঁকাই রইল মূল রাস্তাগুলি। সন্ধ্যার পরে যা আরও জনশূন্য চেহারা নিল। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্র্যাফিকের জট অনেকটাই কম। সরকার নির্ধারিত সময় ছাড়া খুলল না কোনও দোকান। পারতপক্ষে দেখা মিলল না উদ্ ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকা ভিড়েরও। তবু যাঁরা এ দিন বেরিয়েছিলেন, অনেকের মুখেই ছিল মাস্ক। অধিকাংশের দাবি, জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের মত, “কর্মনাশা লকডাউন নয়, এখনকার মতো কিছু বিধিনিষেধেই কাজ হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, আপাতত দু’সপ্তাহ বন্ধ থাকবে লোকাল ট্রেন। মেট্রো-সহ গণপরিবহণও অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্ক ও বাজার-হাট খোলা রাখার সময়। কারখানা, চটকল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি ক্ষেত্রেও উপস্থিতি করা হয়েছে ৫০ শতাংশ। যার জেরে এ দিন থেকেই শহরে কার্যত ‘সেমি লকডাউন’ চালু হয়ে গিয়েছে বলে অনেকের মত।

এ দিন পথে নেমেও সেই চিত্রই দেখা গেল। সকাল ১০টায় গমগম করা শ্যামবাজার, উল্টোডাঙা, হাজরা, যাদবপুর ৮বি মোড় কার্যত ফাঁকা। দুপুর গড়াতে প্রায় খাঁ খাঁ গড়িয়াহাট, ধর্মতলার মতো বাজার এলাকা। আপাদমস্তক সুরক্ষা নিয়ে গড়িয়াহাটে আসা সুলেখা কর্মকার নামে এক মহিলা বললেন, “জরুরি কিছু জিনিস কিনতে বেরিয়েছি। সরকার না করলেও মানুষই লকডাউন করে নিয়েছে। অনেকেই বুঝেছেন, এখনও সতর্ক না হলে আবার লকডাউন হবে। বহু মানুষ কাজ হারাবেন।’’ একই দাবি করলেন ধর্মতলায় আসা স্নেহাংশু বর্ধন নামে এক ব্যক্তি। তাঁর মন্তব্য, “অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক সব বন্ধ হচ্ছে দেখছি। তবে পুরো লকডাউন না হলেও আগামী ১৪ দিন আমি আর আমার পরিবার বাড়িবন্দি হয়ে স্বত:প্রণোদিত লকডাউনে থাকব।”

এ দিন সবচেয়ে ফাঁকা ছিল শিয়ালদহ, দমদমের মতো ব্যস্ত স্টেশনগুলি। তবে লোকাল ট্রেন বন্ধের ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেও এ দিন কয়েক জন শিয়ালদহে গিয়েছিলেন ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরার আশায়। কিন্তু উপায় না দেখে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে এসে ভিড় জমান। তাঁদেরই এক জন, হাসনাবাদের রুজিরা সুলতানা বললেন, “যে কারখানায় কাজ করতাম, সেখানে এক মাসের বেতন দিয়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আগে বাড়ি ফিরতে চাই।”বাসের ভরসায় দাঁড়িয়ে থাকা জনা কুড়ি লোক ছাড়া এ দিন দুপুরে তেমন কেউ ছিলেন না ইএম বাইপাসের রুবি মোড়ে। সেখানেই অপেক্ষারত এক ব্যক্তির মন্তব্য, “সংক্রমিতের সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর পরেও যদি আমাদের চৈতন্য না হয়, তা হলে কিছু বলার নেই।”

কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানালেন, এ দিন তিনি নিজে ঘুরে পরিস্থিতি দেখেছেন। যে রাস্তা অন্য সময়ে যেতে ৪৫ মিনিটেরও বেশি সময় লাগে, এ দিন সেই পথই ২০ মিনিটে পৌঁছনো গিয়েছে। ওই কর্তার মতে, “এর বড় কারণ, ট্রেনে রোজ কলকাতায় আসা কয়েক লক্ষ লোকের অনুপস্থিতি। সেই সঙ্গে মাস্ক ছাড়া কাউকে দেখা গেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেটাও বাইরে না বেরোনোর একটা কারণ।’’ তবে ট্র্যাফিক বিভাগ জানাচ্ছে, গণপরিবহণ কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরবাইকের সংখ্যা বেড়েছে। কী প্রয়োজনে তাঁরা বেরিয়েছেন, জানতে চাওয়া হয়েছে চালকদের কাছে। অকারণে ঘোরাঘুরি দেখলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্র্যাফিক পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শহরের বিভিন্ন মোড়ে নাকা তল্লাশি শুরু করা হচ্ছে। চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগী বললেন, “এই মুহূ্র্তে আমার অধীনে ৫৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসকদের পরিবারও তার বাইরে নেই। এখনও যদি কেউ সতর্ক না হন, আর সুযোগ কোথায়?”

কিন্তু সারা সকাল ও দুপুর শহরবাসীর সচেতন ভাবে ঘরে থাকার চিত্র সন্ধ্যায় যেন কিছুটা ফিকে হলই বড়বাজার এবং মানিকতলা চত্বরে। পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকার সুযোগে কেনাকাটার হুড়োহুড়িতে সেখানে দূরত্ব-বিধি মানতে দেখা যায়নি অনেককেই। যদিও এর সম্পূর্ণ উল্টো ছবি ছিল হাতিবাগান বাজারে। সেখানে সন্ধ্যা ছ’টাতেও বেশির ভাগ দোকান বন্ধ। খোকন হালদার নামে সেখানকার ব্যবসায়ী কমিটির এক সদস্য বললেন, “জিনিস কিনবেন কে? কার জন্যই বা কিনবেন? গোটা শহর এখন রোগের সঙ্গে লড়ছে। প্রায় প্রতি ঘরে করোনা। বিক্রিবাটা কম হোক ক্ষতি নেই। আগে মানুষ বাঁচুক, তার পরে তো ব্যবসা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE