Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বাড়িতে মিলল গন্ধগোকুল, জেনেও এল না বন দফতর

পুলিশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এ বার বন দফতরের কর্মীরা। সাধারণ মানুষকে বেশি হেনস্থা কে করতে পারেন।

উদ্ধারের পরে। — নিজস্ব চিত্র

উদ্ধারের পরে। — নিজস্ব চিত্র

বিতান ভট্টাচার্য ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৫
Share: Save:

পুলিশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এ বার বন দফতরের কর্মীরা। সাধারণ মানুষকে বেশি হেনস্থা কে করতে পারেন।

অভিযোগ জানাতে এক থানায় গেলে অন্য থানায়, তার পরে আরও একটি থানা— এমন অভিজ্ঞতা এ বাংলায় নতুন নয়। এ বার বাড়িতে ঢুকে পড়া একটি গন্ধগোকুলকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরাতে চেয়ে শুক্রবার রাতে বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরে এমনই অভিজ্ঞতা হল উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ার এক বাসিন্দার।

বন দফতরের একটি নম্বরে ফোন করলে তাঁকে আর একটি নম্বর দিয়ে সেখানে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এই ভাবে এক নম্বর থেকে অন্য নম্বরে বার কয়েক যাওয়ার পরে শেষমেশ ওই ব্যক্তিকে বলা হয়, ‘‘শনি-রবিবার অফিস বন্ধ। ছুটির দিন। বুঝতেই তো পারছেন। আপনিই বরং প্রাণীটাকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসুন।’’

শনিবার সকালে সেটাই করেছেন কাঁকিনাড়ার কেউটিয়া এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন সরকার। উপায়ান্তর না-থাকায় গন্ধগোকুলটিকে গাড়িতে চাপিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে, কল্যাণীর কাছে একটি বনে ছেড়ে দিয়ে এসেছেন পেশায় কৃষিজীবী ওই ব্যক্তি।

এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) প্রদীপ ব্যাস। তাঁর কথায়, ‘‘এটা হতে পারে না। ছুটির দিন আবার কী? বন দফতরের কাজ ২৪ ঘণ্টার। কেউ সাহায্য চাইলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটাই নিয়ম। আমি ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছি। তিনি লিখিত অভিযোগ জানালে আমি ব্যবস্থা নেব।’’ এক নাগরিক বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বন দফতরের হাতে তুলে দিতে উদ্যোগী হলেও তাদের সাহায্য না পাওয়ায় কর্তাদের একাংশ ক্ষুব্ধ।

কলকাতার আশপাশে বনে-জঙ্গলে খাবার না পেয়ে গৃহস্থ বাড়িতে গন্ধগোকুলদের ঢুকে পড়ার ঘটনা নতুন নয়। সেই জন্য সল্টলেক-সহ বিভিন্ন এলাকায় বন দফতরের রেসকিউ সেন্টার আছে। যত শীঘ্র সম্ভব বন দফতরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা প্রাণী উদ্ধার করতে না পারলে গৃহস্থ ও প্রাণী— দু’পক্ষেরই ক্ষতির ভয়। নিরঞ্জনবাবু প্রথম ফোনটি করেছিলেন রেসকিউ সেন্টারেই। কিন্তু লাভ হয়নি।

বৃহস্পতিবার রাতে নিরঞ্জনবাবুর বাড়িতে প্রাণীটি ঢুকে পড়ে নিঃশব্দে। সবাই তখন ঘুমোচ্ছেন। ফ্রিজের উপরে রাখা আপেল ও কলা নিয়ে সে ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের আহারও সেরেছিল। তার পরে লেপের ওমে আরাম করে শুয়েও পড়েছিল। ওই লেপেই মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল নিরঞ্জনবাবুর ছ’বছরের ছেলে। হঠাৎ গন্ধগোকুলের লেজ ছেলেটির মুখে পড়তেই সে ধড়মড় করে উঠে পড়ে। তার চিৎকারে অন্যদের ঘুম ভেঙে যায়। গন্ধগোকুলটিকে ঝুড়ি চাপা দিয়ে ধরে পরিত্যক্ত খাঁচায়। শুক্রবার নিরঞ্জনবাবু ফোন করেন বন দফতরে।

কেন তিনি সাহায্য পেলেন না, তা নিয়ে বন দফতরের কর্তাদের একাংশ সেই যুক্তি দিচ্ছেন, যা কোনও থানা অন্য থানায় যেতে বলার ক্ষেত্রে শোনা যায়। তাঁদের বক্তব্য, নিরঞ্জনবাবু সল্টলেকের অফিসে ফোন করেন, কিন্তু কেউটিয়া ওই অফিসের নয়, পড়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বন দফতরের আওতায়। আবার উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া জেলায় বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রে কর্মী কম, পরিকাঠামোরও অভাব। রাতবিরেতে বা ছুটির দিনে বন্যপ্রাণীর খোঁজ মিললে উদ্ধার করার লোক মেলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

negligence Civer Cat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE