Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

নবজাতক-চিকিৎসার কেন্দ্র ঘিরে ‘সংঘাত’ দুই চিকিৎসকের

এসএসকেএম হাসপাতালে প্রস্তাবিত ‘ইনস্টিটিউট অব পেরিনেটোলজি’ ঘিরে ফের প্রকাশ্যে দুই প্রবীণ তথা খ্যাতনামা চিকিৎসকের বিবাদ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

এসএসকেএম হাসপাতালে প্রস্তাবিত ‘ইনস্টিটিউট অব পেরিনেটোলজি’ ঘিরে ফের প্রকাশ্যে দুই প্রবীণ তথা খ্যাতনামা চিকিৎসকের বিবাদ।

দিন কয়েক আগে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, এসএসকেএমে প্রস্তাবিত ওই কেন্দ্রের অধিকর্তার দায়িত্বে আসছেন প্রখ্যাত নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহ। ‘পেরিনেটোলজি’ মানে সন্তান ধারণের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং তার তিন বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত নবজাতক ও মায়ের পরিষেবা। কী ভাবে পেরিনেটোলজির কাজ হতে পারে, তার একটা ধারণা কয়েক মাস আগে লিখিত ভাবে স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছিলেন অরুণবাবু। তা গৃহীত হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর তাঁকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে।

এর পরেই অরুণবাবুর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ তথা রাজ্যে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যে নজরদারির জন্য গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, বছর সাতেক আগে ত্রিদিববাবুর সঙ্গে সংঘাতের জেরেই এসএসকেএমের নিওনেটোলজি বিভাগের প্রধানের পদ ছেড়ে দিল্লিতে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা পদে যোগ দেন অরুণবাবু। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, আবার যখন এত দিন পরে তাঁর রাজ্যে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখনই সংঘাতের বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে।

অরুণবাবু সম্পর্কে ত্রিদিববাবুর বক্তব্য, ‘‘উনি অনেক কিছু করতে পারেন। কিন্তু সারা পৃথিবীতে সবাই জানে, সদ্যোজাতের চিকিৎসার উন্নতি করতে গেলে আগে দরকার প্রসূতি চিকিৎসার উন্নতি। উনি তার কী জানেন?’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘পিজিতে মাত্র ২৫ শয্যার যে নিওনেটোলজি বিভাগে উনি (অরুণবাবু) ছিলেন, তার অবস্ট্রেটিক্স বা প্রসূতি চিকিৎসার কী অবস্থা ছিল সবাই জানেন। আমি এসে অবস্ট্রেটিক্স মেন্টর গ্রুপ, নিওনেটাল মেন্টর গ্রুপ তৈরি করেছিলাম, যাকে পূর্ণাঙ্গ পেরিনেটোলজি বলে। কারও সঙ্গে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। তবে সব তৈরি হওয়ার পরে উনি এসে কী করবেন?’’

এর পাল্টা অরুণবাবু বলেন, ‘‘আমার ভাবনা রাজ্য গ্রহণ করেছে। এই রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে এমন একটা দিনও যায়নি যে দিন পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেউ পরামর্শ চেয়ে আমাকে ফোন করেননি। এর চেয়ে সৌভাগ্যের আর কী হতে পারে যে, আমি যে ধারণার ভিত্তিতে পুরুলিয়ায় সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) বানিয়েছিলাম, সেটা গ্রহণ করেই ত্রিদিববাবু পশ্চিবঙ্গে এসএনসিইউ করেছেন। অর্থাৎ, আমাকে তাড়ালেও আমার ভাবনাকে কেউ তাড়াতে পারেননি।’’

ত্রিদিববাবু কিন্তু স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘সরকারের এটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। অরুণবাবু এক সময়ে আমাকে গালিগালাজ করেছিলেন। তাতে ওঁকে রাজ্য ছাড়তে হয়। আবার উনি এলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অরুণবাবু এলে আমরা দু’জনে কী কাজ করব, তা নির্ভর করবে ভোটের পরে গঠিত নতুন সরকারের উপরে।’’ আর অরুণবাবুর কথায়, ‘‘আমি একটা ভাবনা সরকারকে দিয়েছি। তারাই ঠিক করবে, কে ওই কেন্দ্র চালাবেন। আসল দরকার হচ্ছে মানুষের পরিষেবা পাওয়া।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এক সময়ে শাসক দলের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন ত্রিদিববাবু। কিন্তু বছরখানেক হল তিনি সরকারের ততটা নেকনজরে নন। দীর্ঘ কয়েক মাস টাস্ক ফোর্সের কোনও বৈঠক, জেলার সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স বা এসএনসিইউ পরিদর্শন তিনি করেননি। সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার খবর শোনা গিয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের মতে, এর পরেই হয়তো ত্রিদিববাবুর বিরোধী হিসেবে পরিচিত অরুণ সিংহকে আবার ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানেও ত্রিদিববাবু হাজির ছিলেন। তার পরেই চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE