Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কাঁচা মাটির আকালে ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’

ভরা বর্ষায় প্রতিবারই মাটির অভাবে এমন হাহাকারের ছবি ধরা পড়ে শহরের ভাঁড়পট্টিতে। এ বার উত্তর কলকাতার ১৩, ১৪ এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঁড়পট্টিগুলিতে সেই হাহাকার যেন আরও বেশি।

খুশি: প্রতীক্ষার শেষে পৌঁছেছে মাটি, চলছে ভাঁড় তৈরির প্রস্তুতি। শুক্রবার, ক্যানাল ইস্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

খুশি: প্রতীক্ষার শেষে পৌঁছেছে মাটি, চলছে ভাঁড় তৈরির প্রস্তুতি। শুক্রবার, ক্যানাল ইস্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

সকাল থেকে প্রবল তৎপরতা শ্যামচাঁদ প্রজাপতির দালানে। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই ভাঁড় পোড়ানোর ভাটি তৈরির জোগাড়ে নেমে পড়েছেন তিনি। ব্যস্ত হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘‘এত দিন বাদে মাটির খবর এসেছে। ডায়মন্ড হারবারের এক জনকে পাওয়া গিয়েছে। তিনি দাম বেশি চাইছেন। তাও ঠিক আছে, কাজ একেবারে বন্ধ রাখার থেকে এই ভাল!’’

ভরা বর্ষায় প্রতিবারই মাটির অভাবে এমন হাহাকারের ছবি ধরা পড়ে শহরের ভাঁড়পট্টিতে। এ বার উত্তর কলকাতার ১৩, ১৪ এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঁড়পট্টিগুলিতে সেই হাহাকার যেন আরও বেশি। সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কলকাতায় এমনিতেই প্রয়োজন মতো মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। বর্ষার সময়ে মাটি তোলার জায়গা জলের নীচে চলে যায়, তখন মাটি পাওয়া আরও শক্ত। তবু ডায়মন্ড হারবার বা ক্যানিং থেকে দক্ষিণ কলকাতায় মাটি এলেও উত্তরে পৌঁছচ্ছে না। সব মিলিয়ে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, দিনের পর দিন কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই সুযোগে মাটি-কারবারিরা শহরে পাঠানো লরি পিছু মাটির দাম হাঁকছেন দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি। কাজ বন্ধ ছিল শ্যামচাঁদদেরও। মাটি আসার খবরে তাঁর দালানে তাই খুশির হাওয়া।

ক্যানাল ইস্ট রোডের ভাঁড়পট্টির ব্যবসায়ী কুন্দন মণ্ডল জানান, একটি লরিতে ৯-১০ টন মাটি আসে। প্রতি টন মাটি থেকে ১৫-২০ হাজার ভাঁড় তৈরি হয়। ১০০ ভাঁড় বাজারে বিক্রি হয় ৪০ টাকা দরে। এ দিকে, বেশ কয়েক মাস ধরে ক্রয় ক্ষমতা থাকলেও কোনও এক জন ভাঁড় ব্যবসায়ীকেই গোটা লরির মাটি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তিন-চার ভাগে সেই মাটি নিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কুন্দনের কথায়, ‘‘এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানও হচ্ছে না। প্লাস্টিকের বদলে ভাঁড়ের ব্যবহারের কথা বলা হলেও প্রশাসন মাটির সমস্যা মেটাতে উদাসীন। দিনের পর দিন কাজ না করতে পেরে আন্দোলনে নামতে হতে পারে আমাদের।’’

উত্তর কলকাতার করবাগান, জওহরলাল দত্ত লেনের ভাঁড়পট্টিগুলিতে ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ ব্যবসায়ীর ভাটি বন্ধ। ভাঁড় তৈরির চাকাগুলিতেও মাটি পড়েনি বেশ কয়েক দিন। ভাঁড় শুকোনোর প্লাস্টিকে বর্ষার জল জমে। অব্যবহারের ছাপ স্পষ্ট। সঞ্চিত সর্বশেষ মাটি গুলে ভাঁড় তৈরির চাকায় বসিয়ে বৃদ্ধ সনাতন মণ্ডল বললেন, ‘‘দশ দিনের মধ্যে মাটি না এলে সংসার চলবে না।’’

ওয়েস্ট বেঙ্গল আর্থ পটমেকার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহনলাল প্রজাপতি অবশ্য বলছেন, ‘‘রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড বা বিহারের মতো আমাদের রাজ্যেও মাটি কালা বোর্ড গঠন হলে এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধান হওয়া সম্ভব।’’ তাঁর দাবি, এ রাজ্যে বালির মতো রয়্যালটি দিয়ে খনি থেকে মাটি তোলা হয় না। ইট ভাঁটার মালিকেরাই মাটি তোলেন। ইট তৈরির পরে বাকি মাটি তাঁরাই কলকাতায় পাঠান। গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের ইচ্ছে মতো গাড়ি পিছু মাটির দাম চাইছেন তাঁরা। বললেন, ‘‘রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছি। নবান্ন থেকে ফোনে আমাদের সঙ্গে দেখা করার আশ্বাস দিয়েছে। রাজ্যপালেরও দ্বারস্থ হয়েছি আমরা। সরকার এখানেও মাটি কালা বোর্ড গঠন করুক। মাটি তোলা বাবদ, আমরাও সরকারকে রয়্যালটি দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Clay Pot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE