পোশাকি নাম কমিউনিটি পোলিসিং (কপস)।
নিরাপত্তা ও নজরদারির এই বিশেষ পরিকল্পনার কথা সম্প্রতি ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ পুরকায়স্থ। সেই ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হচ্ছে সল্টলেক। আপাতত পরীক্ষামূলক এই ব্যবস্থায় সাফল্য মিললে পরবর্তী পর্যায়ে বাকি এলাকাগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিধাননগরের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ।
জেলা পুলিশের আওতায় থাকা বিধাননগরে বছর চারেক আগে কলকাতার ধাঁচে আলাদা করে তৈরি হয়েছে কমিশনারেট। তাতেও অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, নজরদারির প্রশ্নে গুণগত বদল হয়নি বলেই বরাবর অভিযোগ বাসিন্দাদের। এ বার তাই মূল অসুখ চিহ্নিত করে রোগ নির্ণয়ের কাজে নামল সল্টলেক পুলিশ। কমিউনিটি পোলিসিং তারই অঙ্গ।
প্রশ্ন উঠেছে— মূল অসুখটা ঠিক কোথায়? কী ভাবে রোগ নির্ণয় হচ্ছে এবং তার প্রতিকারই বা হচ্ছে কী ভাবে?
সল্টলেক পরিকল্পিত উপনগরী। তবে তার সঙ্গে এক দিকে রয়েছে সংযুক্ত এলাকা, অন্য দিকে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা শহরও। ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা, ৭২টি ব্লকের এই উপনগরীর চরিত্র বদলেছে গত কয়েক দশকে। তথ্যপ্রযুক্তি তালুক থেকে শুরু করে প্রতিটি ব্লকে সরকারি-বেসরকারি অফিস যেমন রয়েছে, তেমনই শপিং মল-মাল্টিপ্লেক্স থেকে শুরু করে রকমারি বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ফলে কাজ এবং বিনোদন, দুই সুত্রেই অসংখ্য বহিরাগতের যাতায়াত। আবাসন ছাড়া এক একটি ব্লকে অসংখ্য প্রবেশপথ।
সব মিলিয়ে তাই প্রতিদিন প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতে হয় পুলিশকে। সে কারণে ইতিমধ্যেই সল্টলেকের ৫টি সেক্টরের জন্য চারটি থানা, সাইবার, মহিলা পুলিশ থানাও রয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেটে সব মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ জন পুলিশকর্মী নিরাপত্তা বজায় রাখার কাজে নিয়োজিত। আর সেখানেই পুলিশের পরিকাঠামো এবং নজরদারির প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন তুলছিলেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, থানা-পিছু যত পুলিশ কর্মী রয়েছেন, তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।
যদিও কর্মীর সংখ্যা বাড়ার পরেও অভিযোগ থামেনি। এ বারে অভিযোগ, জনসংযোগের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে সময়ে খবর পৌঁছয় না। ইতিমধ্যেই অবশ্য পরিকাঠামো আরও বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। মোটরবাইক, এসইউভি গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, আপাতত যত কর্মী রয়েছেন, সেই সংখ্যার উপরে ভিত্তি করেই কমিউনিটি পোলিসিং-এর পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
কী রয়েছে এই পরিকল্পনায়?
পুলিশের দাবি, ব্লক-পিছু অফিসার, তাঁদের গতিবিধি ও কাজের মূল্যায়নের জন্য কমিশনারেট স্তরে একটি সেল গঠন করা হচ্ছে। মূলত ব্লক অফিসারদের কাজও নির্দিষ্ট করা হয়েছে— যেমন, ব্লকের ম্যাপ, ব্লকের মধ্যে সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ব্যাঙ্ক, সিনেমা হল, প্রেক্ষাগৃহ, এটিএম, সাইবার কাফের তালিকা ও যোগাযোগের নম্বর নথিভুক্ত রাখা। এর পাশাপাশি স্থানীয় দুষ্কৃতীদের গতিবিধি, ভাড়াটে থেকে শুরু করে পরিচারক-পরিচারিকা, কেয়ারটেকারদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আলাদা করে প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
ঠিক হয়েছে, ব্লকে ব্লকে আরজি পার্টি তৈরি করা, ব্লক অফিসাদরদের ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে দু’বার ব্লকে পরিদর্শন এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠক করতে হবে। অফিসারদের কাজ খতিয়ে দেখে প্রতি মাসে রিপোর্ট দেবেন ঊর্ধ্বতন অফিসাররা। সফল অফিসারদের পুরস্কৃতও করা হবে।
যদিও কয়েক দশক আগেই এমন পরিকল্পনা কার্যকরী করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু দুর্বল পরিকাঠামোর জন্য তা সফল হয়নি। সেই অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই এ বার কমিউনিটি পোলিসিং-এর পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সল্টলেকের মতো পরিকল্পিত উপনগরীর বৈশিষ্ট্যগুলিকে মাথায় রেখে নজরদারির বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে বাসিন্দাদের এই পরিকল্পনায় যুক্ত করার উপরেই এর সাফল্য নির্ভর করছে।’’
সল্টলেকবাসীদের একটি সংগঠনের নেতা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘অতীতেও চেষ্টা হয়েছিল। ফলপ্রসূ হয়নি। তবে নিশ্চিত ভাবেই এই পরিকল্পনায় আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy