টাকা দিতে না-পারলেও চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না, মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর নিজেদের ‘পথ’ খুঁজতে অভিনব পন্থা নিল শহরের এক বেসরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ, রোগীর পরিবার টাকা দিতে পারবে না বুঝে তারা রোগীকে শহরের এক সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে উদ্যোগী হল। তবে যে সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা হয়েছিল, সেই হাসপাতাল রাজি হয়নি।
গত মঙ্গলবারের ওই ঘটনা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে অপ্রত্যাশিত।
কী করেছে ওই বেসরকারি হাসপাতাল? রোগীকে হাসপাতাল থেকে বার করে দেওয়ার বা চাপ দেওয়ার সাহস হাসপাতাল দেখায়নি। পাছে নবান্নে খবর চলে যায়! কিন্তু ওই বেসরকারি হাসপাতাল নিজেদের কর্মীদের সঙ্গে দিয়ে রোগীর বাড়ির লোককে সটান পাঠিয়ে দেয় নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে। তাঁরাই নীলরতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে থাকেন যাতে ওই রোগীকে সেখানে ভর্তি করে নেওয়া হয়!
স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, ‘‘টাকা পাওয়া যাবে না বুঝতে পেরে রোগীর দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার এ এক অভিনব পন্থা! এতে বেসরকারি হাসপাতালকে কম টাকায় বা বিনা পয়সায় রোগীকে পরিষেবা দিতে হল না। তারা রোগীকে কোনও সরকারি জায়গায় ঠেলে দিল! নিজেরা ভাল সাজল! আর তাদের যে শয্যাটা খালি হল সেখানে নতুন রোগী ভর্তি করে আবার চড়া টাকা নিল। অন্য দিকে, সরকারি হাসপাতালের চাপ বাড়তেই থাকল।’’
যে হাসপাতালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেটি হল আলিপুরের ‘উডল্যান্ডস’। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় হাসপাতালের তরফ থেকে মুখপাত্র শ্যামসুন্দর দে দাবি করেছেন, ‘‘রোগীর বাড়ির লোকই খরচ চালাতে না-পেরে সরকারি হাসপাতালে যেতে চাইছিলেন। আমরা ওঁদের একটু সাহায্য করার জন্য সঙ্গে লোক পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, যাতে প্রক্রিয়াটি সহজ হয়।’’ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, প্রত্যেক বেসরকারি হাসপাতালেরই কিছু রোগীকে কম পয়সায় দেখার কথা, তা হলে এই রোগীকে সেটা করা হল না কেন? কেন সরকারি হাসপাতালে ঠেলার চেষ্টা হল? তার উত্তর মেলেনি।
আরও প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁদের রোগী বেসরকারি হাসপাতালের খরচ বহন করতে পারছেন না বলে বেসরকারি হাসপাতালই উদ্যোগী হয়ে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করছে— এমন ঘটনার নজির দূর বা নিকট অতীতে আদৌ রয়েছে? এরও উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন উডল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ।
যে রোগীকে নিয়ে এত কিছু তার বয়স মাত্র ১৪। হাওড়ার বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সন্দীপ শর্মা। মাস দুয়েক আগে এক দুর্ঘটনায় খাদ্যনালী-সহ একাধিক অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় তাঁর। এতদিন পর্যন্ত চিকিৎসার বিল হয়েছে ১৪ লক্ষ টাকা। বাড়ির লোক দিতে পেরেছেন ৩ লাখ। আরও অন্তত আড়াই মাস তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে। সন্দীপের বাবা অরুণ শর্মা কিন্তু বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমে সরকারি জায়গায় যেতে চাইনি। কিন্তু উডল্যান্ডসই আমাদের বলে, আমরা যেহেতু এত খরচ চালাতে পারব না তাই ওঁরাই রোগীকে নীলরতনে ভর্তি করে দেবেন। উপায় না-দেখে আমরাও রাজি হই।’’
নীলরতন কর্তৃপক্ষ কিন্তু সন্দীপের কাগজপত্র দেখেই জানিয়ে দেন, এই রোগীর যা শারীরিক অবস্থা তাতে সামান্য নাড়াচাড়া করলেই মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে। সেই ঝুঁকি নেওয়া অসম্ভব। সেটা শুনে রোগীর বাড়ির লোক বেঁকে বসতেই পিছোতে বাধ্য হন উডল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy