Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩
heritage building

Heritage: শহরের ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব কি কমিশনের একার, প্রশ্ন পুরসভার

প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিস্থিতি এমন যে কলকাতা পুরসভা জানে না, অথচ শহরের কোনও বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করে দিচ্ছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

কলকাতার ‘হেরিটেজ’ আর শুধু এই শহর বা রাজ্যের ভাবমূর্তির বিষয় হয়ে থেমে নেই। বিষয়টি রাজনীতির ক্ষেত্রেও এমনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শহরে এসে হেরিটেজ ভবন সংরক্ষণ নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও তা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের মধ্যে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিস্থিতি এমন যে কলকাতা পুরসভা জানে না, অথচ শহরের কোনও বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করে দিচ্ছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। যদিও তাঁদের ‘অন্ধকারে’ রেখে কোনও বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করার নজির অতীতে সে ভাবে ছিল না বলেই জানাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

কলকাতার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কোনও বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করতেই পারে। কিন্তু সেটা তাদের পুরসভাকে জানানো দরকার। কারণ বাড়ির নকশা অনুমোদন, মিউটেশন অথবা সংস্কার সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত পুরসভাই নেয়। তাদের না জানিয়ে একক ভাবে কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’’

অন্য দিকে, রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের বক্তব্য, রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। সেখানে আলাদা করে পুরসভাকে জানানোর দরকার হয় না। কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বলছেন, ‘‘তা ছাড়া হেরিটেজ সংক্রান্ত কোনও জটিলতা তৈরি হলে আদালত কমিশনের মতকেই মান্যতা দেয়।’’

Advertisement

গত ৩ জুলাই শরৎ বসু রোডে একটি বাড়িকে কমিশন হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। যা নিয়ে পুরসভা কিছুই জানে না! কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘শরৎ বসু রোডের ওই বাড়িটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। কলকাতা পুরসভা এত দিন ধরে সেটা হেরিটেজ ঘোষণা করে উঠতে পারেনি। তাই ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদেরই সক্রিয় হতে হয়েছে।’’

শহরের কোনও বাড়ি, ভবন, প্রতিষ্ঠান-সহ মর্যাদাযোগ্য যে কোনও ‘এস্টাব্লিশমেন্ট’-কে হেরিটেজ ঘোষণার ক্ষেত্রে এত দিন ‘অলিখিত’ নিয়ম ছিল, যাবতীয় সিদ্ধান্ত কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটি নেবে। কারণ, এটি শহরের হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয়। রাজ্যের অন্যত্র হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। কিন্তু সম্প্রতি সেই নিয়মে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

শুধু তা-ই নয়, কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ তালিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। শুভাপ্রসন্নের কথায়, ‘‘পুরসভার হেরিটেজ তালিকা অনেক আগে করা। সেখানে গ্রেডেশনের ক্ষেত্রে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। যেটা গ্রেড ওয়ান মর্যাদা পাওয়ার কথা, সেটি গ্রেড টু করা হয়েছে। আবার গ্রেড টু মর্যাদা যেখানে পাওয়ার কথা, সেটা গ্রেড থ্রি করা হয়েছে।’’

যার পরিপ্রেক্ষিতে হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ঐতিহ্য রক্ষার কাজ দায়িত্ব নিয়ে কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান করলে তা ভালই। কিন্তু সেখানে বিভ্রান্তি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয়ে জটিলতা তৈরি হলে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক পুরসভাতেই যোগাযোগ করেন। পুর হেরিটেজ কমিটি সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে। কিন্তু ‘সমান্তরাল ভাবে’ কমিশন এই কাজ করলে এবং তা পুরসভা জানতে না পারলে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

সেই জটিলতা দূর করার জন্য হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানাচ্ছেন ফিরহাদ। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে পুরসভা। বিষয়টি দু’তরফেই হওয়া বাঞ্ছনীয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.