Advertisement
E-Paper

দাদা-দিদির দ্বন্দ্বে জল ঢালতে ভরসা কানন

মানিকতলার ‘দাদা’ আর শ্যামপুকুরের ‘দিদি’র বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ায় বিব্রত দলনেত্রী। এতদিন যে বিরোধ ছিল উত্তর কলকাতার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, পুরভোটের মুখে তা প্রকাশ্যে এসেছে। প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই সেই বিরোধের আব্রু খসে গিয়েছে। কোথাও দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে শ্যামপুকুর-কাশীপুর এলাকার ‘দিদি’র স্নেহধন্য ‘নির্দল’ দাঁড়িয়ে পড়ছে, কোথাও আবার সেই দিদিরই ‘কৃপাধন্য’ এলাকার নেতা দলের টিকিট না পেয়ে বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন।

সঞ্জয় সিংহ

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০২:৩৩
সাধন পাণ্ডে ও শশী পাঁজা

সাধন পাণ্ডে ও শশী পাঁজা

মানিকতলার ‘দাদা’ আর শ্যামপুকুরের ‘দিদি’র বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়ায় বিব্রত দলনেত্রী।

এতদিন যে বিরোধ ছিল উত্তর কলকাতার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, পুরভোটের মুখে তা প্রকাশ্যে এসেছে। প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই সেই বিরোধের আব্রু খসে গিয়েছে। কোথাও দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে শ্যামপুকুর-কাশীপুর এলাকার ‘দিদি’র স্নেহধন্য ‘নির্দল’ দাঁড়িয়ে পড়ছে, কোথাও আবার সেই দিদিরই ‘কৃপাধন্য’ এলাকার নেতা দলের টিকিট না পেয়ে বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। এইরকম ৬০টি ওয়ার্ডের কোথাও না কোথাও প্রার্থী নিয়ে ‘দাদা-দিদি’র আকচাআকচি নিয়ে জেরবার দলীয় নেতৃত্ব। বিষয়টি দলনেত্রীর কাছেও পৌঁছেছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দাদা-দিদি আলাদা আলাদা ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে দলনেত্রীর কাছে নালিশও জানাতে গিয়েছিলেন। উপায়ান্তর না দেখে তৃণমূলে সকলের ‘দিদি’ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিতে ‘জল’ ঢালার ভার দিয়েছেন তাঁর ‘কানন’ অর্থাৎ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে।

শ্যামপুকুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের বর্তমান কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ পার্থপ্রতিম হাজারির বিরুদ্ধে দলের ‘বিক্ষুব্ধ’ এক প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। ওই ‘বিক্ষুব্ধ’ এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী এবং প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ অধুনা প্রয়াত অজিত পাঁজার পুত্রবধূ শশী পাঁজার ‘স্নেহভাজন’ বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ হয়ে ‘দাদা’ সাধন পাণ্ডে সটান দলনেত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। শশীদেবীও গিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইদানীং মুকুল-বিরোধিতার জন্য দলনেত্রীর কাছে সাধনবাবুর নম্বর কিছুটা বেড়েছে। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের সঙ্গে আরও দু’টি দফতর মুখ্যমন্ত্রী সাধনবাবুকে দিয়েছেন। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শেই সাধনবাবু অভিযোগ জানান মেয়রকে। ওই ‘বিক্ষুব্ধ’ দলের নাম ভাঙিয়ে ট্যাবলো ব্যবহার করছে বলে মেয়র পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই ট্যাবলো ঘোরানো বন্ধ হয়েছে। সাধনবাবু খুশি হয়ে বলেছেন, “দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তবে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তাপ কমেনি। সাধনবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, ওই ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রাথর্ীর্কে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে না? শোভনবাবু ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, উত্তর কলকাতার কোথাও দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ কেউ দাঁড়িয়েছেন বলে তাঁদের কাছে খবর নেই। আর যদি কেউ দাঁড়িয়েও থাকেন, তা হলে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। তার পরেই যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা দল নেবে।

আবার ১৯ নম্বরেও ‘বিদ্রোহে’র অভিযোগ উঠেছে। এখানকার তৃণমূলের প্রার্থী শিখা সাহা দলীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে সাধনবাবুর এক অনুগামী ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দাদা-দিদির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তাত লেগেছে এলাকার ৭, ৮, ১০, ২৬-র মতো বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডেও। ১০ নম্বরে দিদির ‘স্নেহভাজনকে প্রার্থী করায় বেজায় চটেছেন দাদার অনুগামীরা। তাঁদের স্বীকারোক্তি, “আমরা ওয়ার্ডে কোনও কাজ করছি না। বসে গিয়েছি।” ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত বার কাউন্সিলর হয়েছিলেন শশীদেবী নিজে। সেখানে সাধন-ঘনিষ্ঠ সমাজসেবী শঙ্কর সরকারকে এ বার প্রার্থী করা হয়নি। দিদি-ঘনিষ্ঠকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে দাদার অনুগামীরা চটেছেন। আবার ৮ নম্বরে তৃণমূলের বর্তমান কাউন্সিলর পার্থ মিত্র এ বারও প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এলাকার বিধায়ক দিদির ‘স্নেহধন্য’ মানস কর প্রার্থী হতে না-পেরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দাদার অনুগামীদের অভিযোগ, এলাকার বিভিন্ন স্কুলের পরিচালন কমিটিতে মানসবাবু রয়েছেন বিধায়কের সুপারিশে। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে পার্থবাবু কেন তাঁকে ওই সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন না? পার্থবাবু অবশ্য বলেছেন, “খোঁজ নিয়ে দেখব।” আর শশীদেবী সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। দলের নির্দেশ মেনেই বিধায়ক হিসেবে আমার বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে যা নাম এসেছে, তা বিবেচনা করে প্রার্থীদের নাম দিয়েছি। আমার এলাকায় কোনও সমস্যা নেই।”

শশীদেবী সমস্যা নেই বললেও, সাধনবাবু বলছেন সমস্যা আছে। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর অভিযোগ, দলে যাঁরা ‘যোগ্য’ তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তিনি দলের সর্বোচ্চ মহলে জানিয়েছেন। এই ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলছেন, “আমার যা বলার, আবেদন করার দলের কাছে করব। সংবাদমাধ্যমে কেন বলতে যাব?” কিন্তু তিনি না-বললেও, দুই মন্ত্রীর কাজিয়ায় উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। শশীদেবীর শ্বশুর অজিত পাঁজার সঙ্গে সাধনবাবুর ‘মধুর সম্পর্কে’র কথা সর্বজনবিদিত। এখন অজিতবাবুর পুত্রবধূও সেই সম্পর্কের ঘূর্ণিতে পড়েছেন। তৃণমূলের এক রসিক নেতার মন্তব্য, “অজিত-সাধন ঝগড়ার ট্র্যাডিশন এখনও চলছে।”

Shashi Panja Sadhan Pande KMC election shyampukur Trinamool TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy