পুরসভার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এ বার ঠিকাদারদের সঙ্গে বৈঠক করবে পুর প্রশাসন।
পুরকর্তাদের একাংশের ধারণা, বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার কারসাজিতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে পুরসভার। এ বার তাই রাজ্যের বিভিন্ন সংস্থায় নানা কাজে যুক্ত ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠক করতে চায় কলকাতা পুরসভা। পুরসভার কাজে সরাসরি যুক্ত, এমন ঠিকাদারদেরও ডাকা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ওই সব সংস্থার মালিকদের বলা হবে, এ বার থেকে পুরসভার টেন্ডারে যেন অংশ নেন তাঁরাও। আগামী ১১ জুলাই সেই বৈঠক হবে পুরভবনে। উপস্থিত থাকবেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের ঠিকাদারদের গোচরে বিষয়টি আনতে দু’-এক দিনের মধ্যেই সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেবে পুরসভা। তাতে উল্লেখ করা হচ্ছে, চলতি বছরে পুরসভায় ৫০ লক্ষ থেকে ১৫০ কোটি টাকার কাজের বরাত দেওয়া হবে।
কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ?
পুরসভা সূত্রের খবর, বেশ কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে বড়সড় কাজের ক্ষেত্রে টেন্ডার ডাকা হলেও প্রথমে তাতে যোগ দিচ্ছেন না ঠিকাদারেরা। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হল, প্রথম দফায় কম পক্ষে তিনটি টেন্ডার পড়তেই হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনটি টেন্ডার জমা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নিয়মানুসারে পুর প্রশাসনকে সেই টেন্ডার বাতিল করতে হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় টেন্ডার ডাকার নিয়ম হল, কোনও এক জন দরপত্র দিলেই হবে। সেটিই গ্রহণ করতে হবে পুর প্রশাসনকে। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, প্রথম বার দরপত্রে গরহাজির থেকে
দ্বিতীয় বারের সুযোগ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সেখানে প্রতিযোগিতা না থাকায় দরও পড়ছে বেশি। নিয়মের ফাঁদে পড়ে, তা গ্রহণও করে নিতে হচ্ছে পুর প্রশাসনকে। এ দিকে, এই প্রবণতার জেরে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে বেশি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতা রুখতেই এ বার প্রি টেন্ডার বৈঠক ডাকার পরিকল্পনা। পুরসভার ইতিহাসে এমনটা আগে হয়নি বলেই জানান ওই আধিকারিক।
এক আমলার কথায়, বর্তমানে পুরসভার কাজের দরপত্র চেয়ে কেএমসি পোর্টাল এবং টেন্ডার বার্তায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু কম প্রচারিত সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, পুরসভার কাজের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারেরাই দরপত্র দেন। গত বেশ কিছু দিন ধরে দ্বিতীয় টেন্ডারে অংশ নেওয়ার প্রবণতা দেখে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনুমান হয়েছে, এর পেছনে একটি চক্র কাজ করছে। তারাই বেশি মুনাফার লোভে ‘সিঙ্গল টেন্ডার’-এর ফায়দা লুটছে।
পুরসভার এক এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘এক শ্রেণির ঠিকাদার পুরসভায় মৌরসিপাট্টা চালাচ্ছে। এতে কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশেরও মদত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁদেরই কেউ কেউ বকলমে চালাচ্ছেন এই ঠিকাদার চক্র।’’ সবটা টের পেয়েও নিয়মের ফাঁদে পড়ে অন্যায় মেনে নিতে হচ্ছে পুর প্রশাসনকে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে পুরবোর্ডের কর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। তার পরেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রি টেন্ডার বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত হয় বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
ঠিক হয়েছে শুধুমাত্র পুরসভার পোর্টাল নয়, কেএমডিএ, পূর্ত দফতর, সেচ দফতর-সহ রাজ্য সরকারের একাধিক দফতরের পোর্টালেও এ বার পুরসভার টেন্ডারের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। পূর্ত দফতরের এক ঠিকাদারের বক্তব্য, ‘‘এখন যা অবস্থা, তাতে এক দফতরের ঠিকাদার অন্য দফতরে সহজে ঢুকতে পারে না। সেটা ভাঙা দরকার।’’ পুর আমলার কথায়, ‘‘বৈঠকে হাজির হওয়া ঠিকাদারদের তরফে কোনও অসুবিধের কথা উল্লেখ করা হলে তার কারণ জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সকলেই যাতে টেন্ডারে অংশ নেয়, তার জন্য আবেদন জানানো হবে। শোনা হবে তাদের কথাও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy