Advertisement
১১ মে ২০২৪
coronavirus

দায় নিয়ে টানাপড়েন, ১৬ ঘণ্টা পড়ে কোভিডে মৃতা

এক জন সংক্রমিত রোগীর দেহ কেন এত ঘণ্টা ধরে বাড়িতে পড়ে থাকবে? প্রশ্ন তুলছেন মৃতার আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা।

মর্মান্তিক: যাদবপুর হরিসভার এই এলাকাতেই করোনায় মৃতার দেহ দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার।

মর্মান্তিক: যাদবপুর হরিসভার এই এলাকাতেই করোনায় মৃতার দেহ দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৭
Share: Save:

করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ। কিন্তু সেই নথি না থাকায় সঙ্কটজনক অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে ঠাঁই মেলেনি। পাননি অক্সিজেন। শেষে বাড়িতেই মৃত্যু হল করোনা আক্রান্ত বছর চুরাশির এক বৃদ্ধার। অভিযোগ, বৃদ্ধার আত্মীয়েরা স্থানীয় থানা ও পুরসভায় মৃত্যুর খবর দিলেও শববাহী গাড়ি বহু দেরিতে আসে। পুলিশ না পুরসভা দায়িত্ব কার? সেই টানাপড়েনেই ১৬ ঘণ্টার মতো দেহ পড়ে থাকে বাড়িতে। গত বছরে সংক্রমণ যখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল, করোনা সংক্রমিত রোগীর দেহ তখনও বাড়িতে পড়ে থাকার অভিযোগ শোনা যেত। তবে কি ফিরে এল সেই দিন?

ঠিক কী ঘটেছিল? শনিবার গরফা থানা এলাকার যাদবপুর হরিসভার ওই ঘটনায় মৃতার ছেলে জানান, তাঁর মায়ের জ্বর আসে দিন তিনেক আগে। পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে আনেন বৃদ্ধার নাতনি। ওই রিপোর্ট যে সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যায়, তা তাদের জানা ছিল না বলেই দাবি পরিবারের। বৃদ্ধার ছেলে বলেন, “পরে ফোন করে শুধু আমাদের বলা হয়, মায়ের রিপোর্ট পজ়িটিভ।”

বৃদ্ধার বৌমা জানান, তত ক্ষণে ওই বাড়ির আরও তিন জন সংক্রমিত। যাঁদের মধ্যে দু’জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ফলে দিশাহারা পরিবার বৃদ্ধাকে প্রথমে বাড়িতেই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ছেলে বলেন, “মাকে ভর্তি করানোর জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ফোন করি। কিন্তু হাতে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কোনও হাসপাতালই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। তাই বাড়িতেই অক্সিজেন দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু অক্সিজেন মেলেনি। রাত আটটা পাঁচ মিনিট নাগাদ মায়ের মৃত্যু হয়।”

এর পরেই অন্য হয়রানির শুরু। ওই বৃদ্ধার পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানালে তাঁদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আনানোর ব্যবস্থা করে দেন তিনিই। তখনই তাঁরা জানতে পারেন যে ওই রিপোর্ট সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। সেটা তাঁদের কেন জানায়নি পুরসভা, সেই প্রশ্ন তুলছেন মৃতার ছেলে। আর এক বৌমা বলেন, “পুরসভার হেল্পলাইনে ফোন করে শববাহী গাড়ি পাঠাতে বললে স্থানীয় থানাকে বিষয়টি জানাতে বলেন সংশ্লিষ্ট কর্মী। পুলিশ জানায় ওই কাজ পুরসভা করবে। এই টানাপড়েনে সারা রাত শাশুড়ির দেহ ঘরেই পড়ে থাকে।”

পরিবারের দাবি, শুক্রবার সকালে ফের তারা গরফা থানায় যায়। তখন থানাই ফের পুরসভাকে জানায় শববাহী গাড়ির কথা।

এ দিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দেহ বাড়িতে পড়ে থাকায় এলাকায় সংক্রমণের আতঙ্ক ছড়ায়। তীব্র গরমে দেহে পচন ধরতেও শুরু করে। আতঙ্কে জানলা-দরজা বন্ধ করে দেন প্রতিবেশীরা। অবশেষে শববাহী গাড়ি আসে বেলা সাড়ে বারোটার পরে।

এক জন সংক্রমিত রোগীর দেহ কেন এত ঘণ্টা ধরে বাড়িতে পড়ে থাকবে? প্রশ্ন তুলছেন মৃতার আত্মীয় এবং প্রতিবেশীরা।

কলকাতা পুরসভা ও স্থানীয় থানার দাবি, তারা ঘটনাটি জানতে পেরেই তৎপর হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। গরফা থানার এক অফিসারের দাবি, “করোনায় মৃতের গাড়ির ব্যবস্থা করে পুরসভা। ওই বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর শোনার পরেই বরো অফিসে খবর দিয়েছিলাম। গাড়ি পাঠানোর জন্য কয়েক বার বরো অফিসকে তাগাদাও দিয়েছি।”

তা হলে কেন এত দেরি? কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরীর আবার দাবি, “মৃতার পরিবার বৃহস্পতিবার রাত দুটোয় পুরসভাকে মৃত্যুর খবর জানায়। ওই পরিবারের কাছে তখনও নথিই ছিল না। কী কী নথি লাগবে, সেটা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ওদের জানায়। নথি নিয়ে পরিজনেরা শুক্রবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে আবার জানান। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স গরফা থানায় রওনা দেয়। সেখান থেকে ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে যায় মৃতার বাড়ি।”

যদিও মৃতার পরিজনেদের দাবি, “আমরা প্রক্রিয়ার বিষয়টি ভাল ভাবে জানতাম না। পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগে ফোন করা হলে আমাদের বিষয়টি ঠিক মতো বুঝিয়ে বলা হয়নি। থানা আর পুরসভা― এই দৌড় করিয়েই সবাই দায় এড়িয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID19 cremation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE