Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

‘প্রতিষেধক রাজনীতি’র আশঙ্কাই শেষে সত্যি হল?

বহির্বিশ্বের পাশাপাশি অন্তর্দেশীয় প্রতিযোগিতা, অর্থাৎ রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিষেধক পাওয়ার ক্ষেত্রে হুড়োহুড়ি পড়বে কি না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৫:৫৭
Share: Save:

আশঙ্কা একটা ছিলই। ‘প্রতিষেধক-রাজনীতি’র সেই আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি প্রমাণিত হল বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তবে এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষেধক বণ্টনে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবই দায়ী বলে মনে করছেন তাঁরা।

তাঁদের মতে, অতিমারি পর্বে প্রতিষেধক-রাজনীতি যে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তা বছর ১২ আগে সোয়াইন ফ্লু-র সময়েই বোঝা গিয়েছিল। যখন বিশ্বের ধনী দেশগুলি প্রতিষেধকের অগ্রিম বুকিং করে রেখেছিল‌। অর্থাৎ, প্রতিষেধক কার্যকর প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী সংস্থা ওই দেশগুলিকে তা দিতে বাধ্য থাকবে। যার ফল হয়েছিল, আফ্রিকার মতো বহু দেশ সে সময়ে প্রথম পর্যায়ে প্রতিষেধকই পায়নি। কারণ, তারা অর্থ দিয়ে আগাম বুক করে রাখতে পারেনি।

সেই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ভারত সরকার কেন আগে থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রতিষেধক বুক করে রাখেনি? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞেরা। বিশেষ করে বিশ্বের সর্বাধিক প্রতিষেধক উৎপাদনকারী দেশের নাম যেখানে ভারতই! বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, অথচ গত বছর প্রতিষেধক যখন বাজারে আসেনি, তখন থেকেই একটা চর্চা শুরু হয়েছিল‌। তা হল বহির্বিশ্বের পাশাপাশি অন্তর্দেশীয় প্রতিযোগিতা, অর্থাৎ রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিষেধক পাওয়ার ক্ষেত্রে হুড়োহুড়ি পড়বে কি না। তখন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আশ্বস্ত করা হলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, সেই আশ্বাস ছিল অন্তঃসারশূন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা এবং ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রতিষেধক সরবরাহের অর্ডার করা হয়নি। তাই এই সঙ্কট।’’ আবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার যেই হোক না কেন, আগে যে প্রতিষেধক বুক করবে, সেই পাবে।’’

আর এখানেই চলে আসছে প্রতিষেধক-রাজনীতির প্রসঙ্গটি। কারণ, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিন, এই দু’টি প্রতিষেধকেরই এই মুহূর্তে চাহিদা তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষেধক নীতি অনুযায়ী, রাজ্য সরকার এবং হাসপাতালগুলি উৎপাদনকারী সংস্থার থেকে সরাসরি প্রতিষেধক কিনতে পারবে। তার পরেও একাধিক রাজ্য জানাচ্ছে, প্রতিষেধক উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় তারা সার্বিক ভাবে ‘ভ্যাকসিনেশন ড্রাইভ’ শুরু করতে পারছে না। প্রসঙ্গত, তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যাতে বিনামূল্যে প্রতিষেধক পান এবং এ জন্য রাজ্য যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই চিঠি।

এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে কেন্দ্রীয় সরকার জুলাই মাসের মধ্যে ৩০ কোটি নাগরিককে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞেরা। পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি প্রতিষেধকের ডোজ় (প্রথম ও দ্বিতীয়) দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষক জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষেধক উৎপাদন ও বণ্টনের নীতিতে ফাঁক থাকার কারণেই বর্তমান সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এমনকি, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা না মিটিয়েই প্রতিষেধক বাইরের দেশে সরবরাহ করা হল। মনে হচ্ছে, পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতেই সরকার ব্যর্থ।’’

আর এই ‘ব্যর্থতা’-র মাসুল কত দিন দিতে হবে, সেটাই সব থেকে চিন্তার বিষয় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata Corona antidote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE