Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus

লকডাউনে সুযোগ বুঝে ফাঁদ পাতছে সাইবার প্রতারকেরা

বাগুইআটির এক বৃদ্ধ দম্পতির কাছে সম্প্রতি এমনই একটি ফোন এসেছিল, যেখানে এক মহিলা নিজেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। উত্তরে ওই দম্পতি জানান, তাঁদের একটি স্থায়ী আমানত ফের নতুন করে করাতে হবে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

আর্যভট্ট খান ও শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০৪:৫৫
Share: Save:

‘‘লকডাউনে ব্যাঙ্কে যেতে পারছেন না? তাই ব্যাঙ্কই এখন হাজির আপনার বাড়িতে। লকডাউনের জন্য ব্যাঙ্কে জরুরি কোনও কাজ আটকে থাকলে বলুন, ফোনেই সেই কাজ হয়ে যাবে।’’— এ ভাবেই লকডাউনকে হাতিয়ার করে সাইবার প্রতারণার নতুন চক্র সক্রিয় হয়েছে বলে জানাচ্ছে লালবাজার। প্রতারকদের লক্ষ্য মূলত শহরের প্রবীণ নাগরিকেরা। প্রবীণদের অনেকেই ওই চক্রের পাল্লায় পড়ে টাকা খুইয়েছেন বলে জানিয়েছে লালবাজার।

বাগুইআটির এক বৃদ্ধ দম্পতির কাছে সম্প্রতি এমনই একটি ফোন এসেছিল, যেখানে এক মহিলা নিজেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। উত্তরে ওই দম্পতি জানান, তাঁদের একটি স্থায়ী আমানত ফের নতুন করে করাতে হবে। কিন্তু লকডাউনের কারণে ব্যাঙ্কে যেতে পারছেন না। এর পরেই ওই দম্পতির আমানতের অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং ডেবিট কার্ডের নম্বর চাওয়া হয়। বলা হয়, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এসে যাবে।

কিন্তু ডেবিট কার্ডের নম্বর জানতে চাওয়ায় সন্দেহ হয় ওই দম্পতির। তাঁরা ফোন রেখে দেন। ফের একই নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয় যে, বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ার কারণে ওই ফিক্সড ডিপোজিট নতুন করে করানো সম্ভব হল না। উপরন্তু তথ্য না দেওয়ায় অ্যাকাউন্টটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর পরে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে ফোন করলে ওই দম্পতি জানতে পারেন যে, ব্যাঙ্ক থেকে কোনও ফোন করা হয়নি।

লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, উপস্থিত বুদ্ধির কারণে ওই দম্পতির টাকা বেঁচে গেলেও অনেকেই কিন্তু এ ভাবেই প্রতারকদের পাল্লায় পড়ছেন। বর্তমানে লকডাউনের জন্য প্রায় সব কাজই হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু ইন্টারনেটে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা তেমন সড়গড় না হওয়ায় সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে প্রতারকেরা। অনলাইনে ব্যাঙ্কের সব কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য জেনে নিয়ে নিমেষে টাকা গায়েব করছে প্রতারকের দল।

সাইবার প্রতারণায় কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাংই লকডাউনে এই নতুন ফন্দি এঁটেছে বলে মনে করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। বেশির ভাগ সময়ে হিন্দির টানে বাংলা

বলছে এই প্রতারকেরা। এমনকি, তথ্য না দিলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে। আর তাতেই অনেকে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। লালবাজারের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, প্রতারকেরা অনেক সময়ে আস্থা অর্জনের জন্য ডেবিট কার্ডের ষোলো সংখ্যার নম্বরের কয়েকটি সংখ্যা বলে দিচ্ছে। বাকি নম্বরগুলি জানতে চাইছে। ডেবিট কার্ডের প্রথম কয়েকটি নম্বর মিলে গেলে বাকি নম্বরগুলি বিশ্বাস করে বলে দিচ্ছেন গ্রাহকেরা। বলে দিচ্ছেন পিন নম্বরও।

লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, লকডাউনের মধ্যে প্রতারকদের উপার্জনেও টান পড়েছে। তাই মরিয়া হয়ে নতুন নতুন ফন্দি আঁটছে তারা। পুলিশ জানাচ্ছে, এ নিয়ে সাবধান হতে কোনও লিঙ্ক মোবাইলে এলে তা ক্লিক করা উচিত হবে না। কারণ, জালিয়াতরাই মূলত ওই লিঙ্ক পাঠিয়ে গ্রাহককে তা খুলতে বলছে। আর কেউ সেই লিঙ্কে ক্লিক করলে নিমেষে ফোনের নথি চলে যাচ্ছে প্রতারকদের কাছে। এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, ব্যাঙ্ক থেকে কখনও গ্রাহককে ফোন করে অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হয় না। ফলে লকডাউনের সময়ে অনলাইনে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত কাজ করে দেওয়া হবে বলে ফোন এলেই ধরে নিতে হবে যে তা প্রতারকদের কাজ।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE