Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
madhyamgram

গ্রাহককে ‘না জানিয়ে’ লকার ভাঙায় নির্দেশ ক্ষতিপূরণের

তাঁদের না জানিয়েই কী ভাবে লকার ভেঙে ফেলা হল,  একাধিক বার জানতে চেয়েও তার সদুত্তর পাননি ওই দম্পতি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৪১
Share: Save:

ব্যাঙ্কের লকারে গয়না-সহ কিছু সামগ্রী রেখেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এক দম্পতি। অভিযোগ, ওই দম্পতিকে না জানিয়েই ব্যাঙ্ক সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে তাঁদের লকার ভেঙে ফেলে। ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, ওই লকারের কোনও
অস্তিত্ব নেই।

তাঁদের না জানিয়েই কী ভাবে লকার ভেঙে ফেলা হল, একাধিক বার জানতে চেয়েও তার সদুত্তর পাননি ওই দম্পতি। বাধ্য হয়ে তাঁরা ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ২০১৬ সালে আবেদন করেন। ২০১৮ সালে আদালত বারাসতের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে কঠোর সমালোচনা ও ভর্ৎসনা করে কর্তৃপক্ষকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, লকার ভাঙার আগের সম্পূর্ণ নথি রায় বেরোনোর ৪৫ দিনের মধ্যে অভিযোগকারীকে জমা দিতে নির্দেশ দেয় আদালত। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যান। যদিও সেখানেও জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ই বহাল রাখা হয়।

মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা শ্রাবণী বিশ্বাস ও তাঁর স্বামী অশোক বিশ্বাসের বারাসতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ১৯৯৯ সাল থেকে শ্রাবণীদেবী ওই ব্যাঙ্কের লকারে তাঁর গয়না ও কিছু দামি পাথর রাখতে শুরু করেন। নিয়ম মতো লকারে জিনিসপত্র রাখা বাবদ তাঁরা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট ভাড়া দিতেন। কিন্তু অশোকবাবুর অসুস্থতার কারণে ২০১০-’১১ সাল পর্যন্ত লকারের ভাড়া বাবদ টাকা দিতে পারেননি শ্রাবণীদেবী।

অভিযোগ, ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল ওই দম্পতি ব্যাঙ্কে গেলে তাঁদের বলা হয়, লকারের কোনও অস্তিত্ব নেই। ২০১৮ সালে অশোকবাবুর মৃত্যু হয়। শ্রাবণীদেবীর অভিযোগ, তাঁদের কিছু না জানিয়েই পুরোপুরি বেআইনি ভাবে লকার ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এমনকি লকার ভাঙার কারণ জানতে
চাইলে ওই দম্পত্তির সঙ্গে ব্যাঙ্কের তরফে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ, সিজ়ার লিস্টে দেওয়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও গায়েব হয়ে গিয়েছিল। শ্রাবণীদেবীর অভিযোগ, ‘‘আমার স্বামী তখন বেশ অসুস্থ। ওঁর চিকিৎসার জন্য লকার ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক সেই সময়ে লকারের অস্তিত্ব নেই বলায় হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।’’

শ্রাবণীদেবী জানান, ব্যাঙ্ক লকার ভেঙে দেওয়ার যথাযথ কারণ না দেখানোয় তাঁরা বাধ্য হয়ে ২০১৬ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। ২০১৮ সালে আদালত বিশ্বাস দম্পতির পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে যথেচ্ছ সমালোচনা করে ৩৫
হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ-সহ লকার ভাঙার উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দেখাতে বলে। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ব্যাঙ্কের তরফে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে আবেদন করা হয়। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত ব্যাঙ্কের ভূমিকার চরম সমালোচনা করে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের নির্দেশই বহাল রাখেন।

এই রায় প্রসঙ্গে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১০-’১১ সালে ওই দম্পতি লকারের ভাড়া না দেওয়ায় একাধিক বার তাঁদের বাড়িতে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা আমল না দেওয়ায় নিয়মানুযায়ী লকার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় প্রসঙ্গে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, আইনি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Couple compensation madhyamgram Bank Locker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE