রাজনীতির ভোটের অঙ্ক তো শুধু জেতা-হারায় আটকে থাকে না। ছবি: সংগৃহীত
বাংলায় বামেদের রক্তক্ষরণ কি তাহলে বন্ধ হল? বৈশাখের তপ্ত আবহাওয়ায় বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম, খানিকটা হলেও ঠান্ডা বাতাস বইয়ে দিলেন আলিমুদ্দিনের অন্দরে। রাজ্যে এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী বিজেপি প্রার্থীকে পিছনে ফেললেন প্রায় ১৮ হাজার ভোটে। তবে শেষ বিচারে হেরেছেন ঠিকই, কিন্তু ২০০৬ সালের পর এই প্রথম বাম ভোটে বৃদ্ধির সুবাতাস।
অতীতে স্বামী বা পরিচিতদের হয়ে ভোটের প্রচার করেছিলেন। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আন্দোলনেরও একেবারে প্রথম সারিতে ছিলেন। কিন্তু নিজে ভোটের ময়দানে এই প্রথম লড়তে নেমেছিলেন। তিনি— বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম।
মুখে দাবি করলেও, বাস্তব বলেছিল, জেতার আশা প্রায় নেই-ই। প্রয়াত সিপিএম নেতা তথা বিধানসভার স্পিকার হাসিম আবদুল হালিমের পুত্রবধূ সায়রা এ বার ভোটে নেমেছিলেন মূলত দু’টি চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে। প্রথমত, ২১-এর নীলবাড়ির লড়াইয়ে সিপিএম প্রার্থী তথা স্বামী ফুয়াদ হালিমের প্রাপ্ত ভোটের অঙ্ক টপকানো। দ্বিতীয়ত, বালিগঞ্জ বিধানসভার নিরিখে গত বছরের কলকাতা পুরসভা ভোটে বামেদের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা। ভোটের ফল বলছে, দুই-ই হল।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল অন্যরকম। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ তথা রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী তৃণমূলের সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সামনে কার্যত কিছুই করে উঠতে পারেনি কোনও বিরোধীই। সুব্রতর জয়ের ব্যবধান ছিল ৭৫ হাজার ৩৫৯ ভোট। সায়রার স্বামী ফুয়াদ পেয়েছিলেন ৮,৪৭৪ ভোট। দীপাবলির রাতে সুব্রতর প্রয়াণে বালিগঞ্জে উপনির্বাচন হতই। সেই ঘোষণার আগেই অবশ্য ২০২১-এর শেষ লগ্নে কলকাতা পুরসভা ভোটের বিধানসভাওয়াড়ি ফলে সামান্য হলেও বালিগঞ্জে বামেদের রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল। ওই বিধানসভা এলাকায় বামেরা পুরভোটে পায় ১১,২৪২ ভোট। সেখানে বামেদের থেকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের তকমা সরিয়ে নেওয়া বিজেপি পায় ১০,১৫৭ ভোট। কংগ্রেস অবশ্য দুই বিরোধীর চেয়ে সামান্য বেশি ভোট পেয়েছিল।
এই প্রেক্ষাপটে বালিগঞ্জে উপভোটের আপাত-অসম লড়াইয়ে নেমেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি সায়রা। তবে চ্যালেঞ্জ আরও ছিল। কারণ, প্রতিপক্ষ তো কেবল বাবুল সুপ্রিয় ছিলেন না। ভাঙাচোরা সংগঠন নিয়ে লাল ঝান্ডা কাঁধে সায়রাকে লড়তে হয়েছে দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের প্রবল সাংগঠনিক শক্তির বিরুদ্ধেও। প্রচারে চেষ্টার ত্রুটি করেননি ফুয়াদ-জায়া। নাম ঘোষণা হতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন প্রচারে। তার পর থেকে দিনরাত এক করে প্রচার সেরেছেন। শনিবারের ফল বলছে, হেরে গিয়েছেন সায়রা।
কিন্তু রাজনীতির ভোটের অঙ্ক তো শুধু জেতা-হারায় আটকে থাকে না। কত ভোট পেলেন, আগের চেয়ে বেশি না কম, সেই অঙ্কও কষতে হয় রাজনীতিকদের। সায়রাও কষবেন নিশ্চিত। রাজনৈতিক মহল বলছে, ভোটের লড়াইয়ে হয়তো হেরেছেন। কিন্তু লড়াইয়ের পথে তাঁর যাত্রা তারিফ কুড়িয়েছে। জীবনে প্রথম ভোটে লড়ে আপাতত এটাই প্রাপ্তি সায়রা শাহ হালিমের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy