Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিমা বিসর্জনের পথেও বেলাগাম শব্দবাজি, ডিজে

মুহুর্মুহু শব্দবাজি ও ডিজে-র আওয়াজে সব কিছু যেন লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার অবস্থা।

উল্লাস: সুকান্তনগরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অবাধেই বাজছে ডিজে। বুধবার রাতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

উল্লাস: সুকান্তনগরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় অবাধেই বাজছে ডিজে। বুধবার রাতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০৩
Share: Save:

কালীপুজো, দীপাবলিতে শব্দবিধি ভাঙার যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, তার বৃত্ত সম্পূর্ণ হল বুধবার, বিসর্জনের দিন। যে দিন শহর জুড়ে চলল শব্দতাণ্ডব। শব্দবাজি আর ডিজে-মাইকের যোগসাজশে শব্দতাণ্ডবে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত এ দিন যেন ছিল খোলা মাঠ।

কসবা, গরফা, হরিদেবপুর, বেহালা-সহ একাধিক এলাকায় এ দিন বোঝার উপায়ই ছিল না যে, শব্দবাজি বা ডিজে বাজানো নিষিদ্ধ! মুহুর্মুহু শব্দবাজি ও ডিজে-র আওয়াজে সব কিছু যেন লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার অবস্থা। ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, থানায় ফোন করা হলেও ফোন বেজে গিয়েছে। কোথাও আবার বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী নেই। কালীপুজো, দীপাবলির আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে জনসচেতনতার জন্য একটি লিফলেট বিলি করা হয়েছিল। সেখানে শব্দবাজি ও ডিজে নিষিদ্ধ বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই লিফলেটে যে কোনও কাজই হয়নি, নিয়মভঙ্গকারীরা নিজেদের মতো করে নিয়ম ভেঙে গিয়েছে, বুধবার রাতই ছিল তার সব থেকে বড় প্রমাণ। এমনটাই জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে ফোন করেও অভিযোগ জানানোর উপায় ছিল না। কারণ, পর্ষদের কন্ট্রোল রুমই ছিল না এ দিন। পর্ষদ শনিবার, রবিবার ও সোমবারের জন্য শুধু কন্ট্রোল রুম খুলে রেখেছিল।

পরিবেশকর্মীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে কি পর্ষদ ধরেই নিয়েছিল যে, বিসর্জনে কিছু হবে না? সব থেকে বড় কথা, কসবা, গরফা, হরিদেবপুরের মতো একাধিক এলাকাকে আগে থেকেই শব্দ-উপদ্রুত বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেখানে বাড়তি নজর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল পুলিশ-প্রশাসনের তরফে। কিন্তু তার পরেও সেখানে এই নৈরাজ্য দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘নিজেদের খুব অসহায় লাগছিল। সারা শহরেই যে এমন পরিস্থিতি হতে পারে, সেটা এ বার সত্যিই কল্পনা করতে পারিনি। বিশেষ করে পর্ষদ-পুলিশের পক্ষ থেকে এত দাবি করার পরেও।’’ আর এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘শব্দ-আইন বলে যে কিছু আছে, তা দেখে মনে হচ্ছিল না। প্রকাশ্য রাস্তায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি যেমন ফাটানো হয়েছে, তেমনই ডিজে বাজাতে বাজাতে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় গিয়েছে অনেক ক্লাব।’’ পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত আবার বলছেন, ‘‘শব্দ নিয়ন্ত্রণ করাটা পুলিশের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু বিসর্জনের শোভাযাত্রার মত্ত নাচ আর ডিজে-র দাপট দেখে মনে হচ্ছিল না যে, পুলিশ বলে কিছু আছে!’’

কালীপুজো, দীপাবলিই দেখিয়েছিল, যে সমস্ত এলাকা শব্দদূষণের নিরিখে ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত হয়েছিল, সেই সমস্ত জায়গা থেকেই সব থেকে বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু বিসর্জনের দিন দেখা গেল, যে সমস্ত জায়গায় শব্দবাজির দাপট ছিল না, সেখানেও বিনা বাধায় রাস্তায় ডিজে বেরিয়েছে। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফেটেছে। কসবা, গরফা, হরিদেবপুরের মতো ‘দাগি’ এলাকায় তো পুজোর উদ্যোক্তারাই নিষিদ্ধ শব্দবাজি নিয়ে রাস্তায় হেঁটেছেন ও দু’মিনিট অন্তর তা ফাটিয়েছেন। কসবার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এত প্রচারের পরেও এটা যে প্রকাশ্য রাস্তায় হতে পারে, তা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কোথায় পুলিশ, কোথায় কী!’’

কসবা থানার পুলিশ অবশ্য ঘটনার কথা অস্বীকার করে জানিয়েছে, কোথাও ডিজে বক্স বাজেনি। কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে শব্দবাজি ফেটেছে শুধু। গরফা থানার পুলিশ আবার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। যদিও লালবাজার জানিয়েছে, বুধবার রাতে এ নিয়ে পুলিশের কাছে ১০৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে, গ্রেফতার হয়েছে ২৩৮ জন। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম বলেন, ‘‘যে যে থানা এলাকায় অভিযোগ জমা পড়েছে, সেখানকার ডিভিশনাল অফিসারদের কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে আমাদের তরফে আগেই বলা হয়েছিল। আমাদের হাতে যেটুকু ছিল, সেটা আমরা করেছি। এফআইআর করেছি অনেক জায়গায়।’’

কিন্তু সেটা তো কালীপুজো, দীপাবলির সময়ে। বিসর্জনের দিন? পর্ষদ বলছে, কোনও এফআইআর হয়নি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crackers Firecracker DJ Kali Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE