Advertisement
E-Paper

বিমানবন্দরে বাড়ছে সোনা পাচার, উদ্বিগ্ন শুল্ক দফতর

যাঁরা এত দিন ব্যাঙ্ককে নিয়মিত জামাকাপড় ও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি নিয়ে যাতায়াত করছিলেন, যাঁরা ‘কেরিয়ার’ হিসেবে পরিচিত, তাঁদেরই এখন সোনা পাচারের কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৫

যাঁরা এত দিন ব্যাঙ্ককে নিয়মিত জামাকাপড় ও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি নিয়ে যাতায়াত করছিলেন, যাঁরা ‘কেরিয়ার’ হিসেবে পরিচিত, তাঁদেরই এখন সোনা পাচারের কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, ইদানীং সোনা পাচারের প্রবণতা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে প্রায় নিত্য দিন সোনা পাচারের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাঙ্কক থেকে বিমানে কলকাতায় নামার পরে কেরিয়ারের কাছ থেকে ধরা পড়ছে সোনা। শুল্ক অফিসারেরা সেই চোরাই সোনা ধরে ফেললে তা অফিসারদের জিম্মায় রেখে হাসিমুখে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন সেই কেরিয়ারেরা।

বিমানবন্দরের এক শুল্ক অফিসারের কথায়, ‘‘এ ভাবে সোনা পাচারের কোনও ঝুঁকিও নেই।’’ কারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যে সোনা পাচার হয়ে কলকাতায় আসছে তার পরিমাণ ২০ লক্ষ টাকার বেশি নয়। ৩০০ গ্রাম, ৪০০ গ্রাম এমনকী ২০০ গ্রাম সোনাও পাচার করার সময়ে ধরা পড়ে যাচ্ছেন অনেকে। নিয়ম বলছে, বিদেশ থেকে ২০ লক্ষ টাকার কম সোনা ভারতে আনার সময়ে ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে গ্রেফতার করবে না শুল্ক দফতর। সোনা বাজেয়াপ্ত করে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ওই সোনা বাজেয়াপ্ত করার সময়ে শুল্ক দফতর একটি সরকারি চালান ধরিয়ে দেয় যাত্রীর হাতে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যাঁর হয়ে সোনা পাচার করছেন যাত্রী, তাঁর হাতে ওই সরকারি কাগজ তুলে দিয়ে বলছেন, ‘শুল্ক দফতর সোনা নিয়ে নিয়েছে’। ব্যাস, শেষ হয়ে যাচ্ছে তাঁর দায়। শুল্ক দফতরের অফিসারদের কথায়, ‘‘আগে এক
জন অনেকটা বেশি সোনা পাচার করতেন। এখন সেই সোনা টুকরো টুকরো করে অনেক যাত্রীর হাত দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। রবিবার বিমানবন্দরে এমন একটি অর্ধেক কেটে নেওয়া সোনার বাট ধরা পড়েছে।’’

এক কেরিয়ার জানিয়েছেন, এই কম পরিমাণ সোনা পাচারের শর্তেই রাজি হচ্ছেন তাঁরা। ব্যাঙ্কক থেকে এক জন কেরিয়ারের হাতে সোনা দিয়ে দিচ্ছেন। তিনি সেই সোনা নিয়ে কলকাতায় নেমে যদি শুল্ক অফিসারদের চোখ এড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারেন তা হলে প্রতি বার ২-৩ হাজার টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। আর শুল্ক অফিসার ধরে ফেললে, সেই সোনা রেখে চালান নিয়ে বেরিয়ে আসছেন।

এক কেরিয়ারের কথায়, ‘‘আমরা এখন বাধ্য হয়ে এই পথে নেমেছি। ব্যাঙ্কক-এ যাতায়াত ভাড়া কমপক্ষে ১৮ হাজার টাকা। ভিসার খরচ আরও ২ হাজার টাকা। ওখানে এক সঙ্গে দু’তিন দিন থাকলে, এক সঙ্গে ১০ জন মিলে রান্না করে খেলেও জন প্রতি খরচ ১ হাজার টাকা খরচ। এই ২১ হাজার টাকা জামাকাপড় বিক্রি করে আসছে না।’’

হিসেব দিয়ে কেরিয়ার জানাচ্ছেন, বিমানে নিয়মিত যাতায়াত করার জন্য বেশির ভাগ কেরিয়ারের সঙ্গে বিমানের গোল্ড কার্ড রয়েছে। যার জন্য ৫০ কিলোগ্রাম মাল নিয়ে তিনি আসতে পারেন। সঙ্গে ৭ কিলোগ্রামের হাতব্যাগ। কেরিয়ারের কথায়, ‘‘জামাকাপড়ে কিলোগ্রাম প্রতি লাভ ২৮০ টাকা। হিসেব করে দেখুন প্রায় ১৬ হাজার টাকা হচ্ছে। দু’টি বিদেশি মদের বোতল নিয়ে এসে তা বিক্রি করলে আরও ১৫০০ টাকা। ফলে, ৩৫০০ টাকা প্রতি ট্রিপে লোকসান।’’ এই লোকসান ঠেকাতেই তাঁরা সোনা পাচারের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে কেরিয়ারদের দাবি।

অভিযোগ, সম্প্রতি বিমান ভাড়া বেড়েছে। তার উপরে বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি আগে এনে যতটা লাভ হচ্ছিল, শুল্ক দফতর ইদানীং কড়াকড়ি শুরু করায় সেই বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি আর আনা যাচ্ছে না। ফলে লাভের পরিমাণ কমে গিয়েছে। এক কেরিয়ারের কথায়, ‘‘সোনা নিয়ে এসে প্রতি ট্রিপে ২-৩ হাজার টাকা পাচ্ছি বলেই তো যাতায়াত করছি। নয়তো ব্যাঙ্কক যাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। হয়তো দশ বারের মধ্যে এক বার শুল্ক দফতর ধরে ফেলছে। তখন সোনা তাঁর হাতে দিয়ে চলে আসছি। কিন্তু, বাকি ৯ বার তো বেরিয়ে যাচ্ছি।’’

যে কেরিয়ারেরা নিয়মিত হংকং, চিন, সিঙ্গাপুর যাতায়াত করেন তাঁদের অবশ্য এই সমস্যা নেই। সেখানে বিমান ভাড়া ব্যাঙ্ককের মতো বাড়েনি। আর ওই সব দেশে সোনাও সস্তা নয়। সেখান থেকে সোনা পাচারও হয় না।

Gold smuggle Airport
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy