সাইবার অপরাধের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে জেলায় জেলায় সাইবার থানা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। চলছে প্রশিক্ষণও। কিন্তু মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার ক্ষেত্রে পুলিশের একাংশের মনোভাব যে সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে তা ফের প্রমাণ হল বেলঘরিয়ায় এক যুবকের অভিজ্ঞতায়!
কৌস্তুভ ভট্টাচার্য নামে ওই যুবক জানিয়েছেন, ২৬ মে চাকরি দেওয়ার নামে অনলাইনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। খোয়া গিয়ে ৬০ হাজার টাকা। এই পরিস্থিতিতে বেলঘরিয়া থানায় গিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে অভিযোগ দায়েরের জন্য ব্যাঙ্কের পাসবই এবং আধার কার্ডের নথি চাওয়া হয়। অ্যাকাউন্ট ব্লক করা রয়েছে বলে সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য (স্টেটমেন্ট) পাওয়া যাবে না, এ কথা জানানোর পরে তাঁকে বলা হয়, ছ’দিন পরে ব্যাঙ্ক থেকে ওই তথ্য নিয়ে থানায় যেতে।
কৌস্তুভের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী অপর্ণা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বলা হয়, শনিবার অভিযোগ জানালেও যা হবে, সোমবার জানালেও একই হবে। টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না।’’ অপর্ণা জানান, শনিবার রাতেই সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে স্টেটমেন্ট জোগাড় করা হয়। তার পর ফের থানায় গিয়ে অভিযোগ জমা দেন তাঁরা। তা জেনারেল ডায়েরিতে নথিভুক্ত করে ছে়ড়ে দেওয়া হয়, এফআইআর রুজু করা হয়নি। পরে অবশ্য একটি সূত্র মারফত পুলিশের উপরতলায় যোগাযোগ করলে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের অপরাধ বা়ড়ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের কাছ থেকে তড়িঘড়ি পদক্ষেপই কাম্য।
পুলিশের শীর্ষকর্তারাও সে কথা মেনে নিচ্ছেন। বেলঘরিয়া থানার এই মনোভাব বিস্মিত করেছে তাঁদেরও। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কোন অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে তা দেখে পুলিশ টাকা আটকাতে পারে। সে ক্ষেত্রে লোপাট হওয়ার টাকার একাংশ ফেরতও পেতে পারেন অভিযোগকারী।’’
কৌস্তুভ জানান, ২৮ মে বেসরকারি ব্যাঙ্কের শ্যামবাজার শাখায় যোগাযোগ করেন তাঁরা। সেখানে অভিযোগ নথিবদ্ধ হওয়ার পরে লালবাজারে যান। সেখানে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অফিসারেরা লেনদেনের তথ্য নিয়ে টাকা আটকানোর জন্য ই-মেল পাঠিয়েছেন। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে কত পরিমাণ টাকা আটকানো সম্ভব সেটা নিয়ে ধন্দে তাঁরাও। লালবাজারের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, এই কাজটাই বেলঘরিয়া থানার করা উচিত ছিল। নাগরিকের প্রতি কর্তব্যের কথা মাথায় রেখেই তাঁরা সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু যে হেতু বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাই তদন্তের মূল দায়িত্ব বেলঘরিয়া থানা বা ব্যারাকপুর কমিশনারেটের হাতে।
কিন্তু সেই কমিশনারেটের একাংশেরই এমন মনোভাব কেন?
পুলিশ সূত্রের খবর, এমন ঘটনা যে ঘটেছে তা উচ্চপদস্থ কর্তাদের কানেই পৌঁছয়নি। স্বাভাবিক ভাবে ঘটনা জেনে ‘বিব্রত’ তাঁরাও। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এমন জালিয়াতির ঘটনায় মামলা রুজু করতেই হবে। পুলিশের তরফে গাফিলতি থাকলে যথাযোগ্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’