আমনাগরিকের চরম ভোগান্তি এবং প্রশাসনের অস্বস্তির ঠিক মাঝখানে রয়েছেন তাঁরা। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত শহরে লড়াই করছেন যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে।
ছিন্নভিন্ন হাইটেনশন তার, মুখ থুবড়ে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি, পথ আটকানো গাছের সঙ্গে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের ঘাড়ধাক্কা খাওয়াটাও যেন সম্প্রতি তাঁদের কাজের ‘পোর্টফোলিয়ো’র মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মঙ্গলবার সকালে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কালিন্দী-লেক টাউন থেকে যাদবপুরের রিজেন্ট এস্টেটে এসে থমকে গিয়েছিলেন সিইএসসি-র অভিজ্ঞ সুপারভাইজ়ার প্রসেনজিৎ দাস। এক যুগ ধরে কাজ করছেন। আয়লার পরেও লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু এমন বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তাণ্ডবের চিহ্ন তাঁরও আগে দেখা হয়নি। ‘‘পাবলিক রেগে যায়, গালিগালাজ করে, তবু আজকের ঝামেলাটা বেশ অনেক ক্ষণই গড়িয়েছিল।’’ বিকেলে রিজেন্ট এস্টেটের একটা উঁচু ছাদে কাজের ফাঁকে বলছিলেন প্রসেনজিৎ। এ দিন সকালে কাজ শুরু হতেই পাশের শ্রীকলোনির বাসিন্দারা চড়াও হন বলে অভিযোগ। প্রসেনজিতের সহকর্মী সুরজিৎ বাগকে কার্যত ‘অপহরণ’ করে ওই তল্লাটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল বলে জানাচ্ছিলেন সিইএসসি-র আপৎকালীন ‘গ্যাং’-এর সদস্যরা। শেষে যাদবপুর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কাজ বন্ধ ছিল।
আমপান ধাক্কা দেওয়ার পরে, ২০ মে থেকে একবেলাও বাড়ির মুখ দেখেননি প্রসেনজিতেরা। এত দিন তাঁদের দলবল উত্তর শহরতলিতে ব্যস্ত ছিল। সেখানেও গণবিক্ষোভ, গালমন্দের স্বাদ পেয়েছেন। যেমন, শনিবার বরাহনগরের যাদবচন্দ্র ঘোষ লেনের গোলমালের মধ্যে পড়েছিলেন তাঁরা। রবিবার গোলমাল বাধে দমদমের রেডিয়ো গলিতে। সে দিনও টানাহেঁচড়া করে গোটা দলকে ‘হাইজ্যাক’-এর চেষ্টা করেছিল পাশের কোনও পাড়া। তবে রিজেন্ট এস্টেটে এ দিনের ঝামেলা আরও চড়া সুরে বাঁধা বলে তাঁদের মনে হয়েছে। প্রসেনজিৎ অবশ্য এ সব গায়ে মাখছেন না। উঁচু ছাদ থেকেই মৃদু হেসে বললেন, ‘‘দত্তপুকুরে আমার বাড়িতেও বিদ্যুৎ নেই। বৃদ্ধ বাবা হার্টের রোগী, ছেলেটার এক বছর বয়স। ওটা বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের এলাকা। আমি চাইলেও কিছু করতে পারব না।’’