Advertisement
০২ মে ২০২৪

গুজব, মশকরায় হঠাৎ যেন শহরে ‘ফণী দিবস’

গুজবপ্রেমী বাঙালি তত ক্ষণে বিশ্বাস করে ফেলেছেন যে, বিকেল পাঁচটার পরে আর ট্রেনের দেখা পাওয়া যাবে না। ফলে দেরি না করে দুপুর-দুপুর কাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন অনেকেই।

কৌতুক: দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেছে এমনই মিম।

কৌতুক: দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরেছে এমনই মিম।

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

দুপুরে সামান্য বৃষ্টির পরেই আবার চারদিক খটখটে। আকাশের হাল্কা মেঘ শুধু আশ্বাস দিচ্ছে, রাতের খিচুড়ি-ডিম ভাজার মেনু এখনই না বাতিল করলেও চলবে। তবে দেরি করেও তো লাভ নেই। কখন মেঘ কেটে যায়, কে জানে? দুপুর দু’টোর পর থেকেই তাই ভিড় জমতে দেখা গেল শহর-শহরতলির বিভিন্ন রেলস্টেশনে।

কেন?

গুজবপ্রেমী বাঙালি তত ক্ষণে বিশ্বাস করে ফেলেছেন যে, বিকেল পাঁচটার পরে আর ট্রেনের দেখা পাওয়া যাবে না। ফলে দেরি না করে দুপুর-দুপুর কাজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন অনেকেই। ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে যে ভিড় থাকবে বাসেও! তবে একা তো যাওয়া যায় না, সকলকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। আতঙ্ক তাই ঘুরপাক খেতে খেতে গুজব হল জোরদার। ঘুরতে ঘুরতে বাড়ল গুজব। কেউ বললেন, সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার যানবাহন খুবই কমে যাবে পথঘাটে। ঝোপ বুঝে কোপ বসাল অ্যাপ-ক্যাবও। বৃষ্টির ছাঁট ঝিরঝিরে তো কী? ঘূর্ণিঝড়ের গাম্ভীর্য ধরে রাখতে ভাড়ায় আগুন দেখিয়ে কিছু ক্ষণ ফণীর আতঙ্ক বহাল রাখল বিভিন্ন সংস্থাও।

চার দিকে যখন এ ভাবেই চলছে ‘বিপর্যয় মোকাবিলা’-র বন্দোবস্ত, তখন মোবাইলের পর্দায় ঘুরতে শুরু করল, ‘ফণীকে ফণীর মতো আসতে দাও...’। ‘ডরনা মানা হ্যায়’ মন্ত্রে বিশ্বাসী শহুরে বাঙালি গুজবে-ঠাট্টায় আসন্ন ঝড়ের ভরসায় সপ্তাহান্ত শুরু করে ফেললেন এক দিন আগেই। ছুটিপ্রিয় শহর কলকাতায় আতঙ্ক-উচ্ছ্বাসে হঠাৎ মেজাজটা তৈরি করে দিল ‘ফণী দিবস’। ফোনে ফোনে ঠিক হয়ে গেল, ছুটির মেজাজে ডিমভাজাটা বদলে যাক মাছের ডিম বড়া বা পমফ্রেট-কাতলা ফ্রাইতে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও ‘হ্যাপি ফণী ডে’ ভেসে উঠেছে তখন। কেউ আবার লিখে দিয়েছেন ‘মন, প্রেম, চুল উড়ুক হাওয়ায়...বাড়ি, গাড়ি মানুষ থাকুক মাটিতেই... ভালয় ভালয় কাটুক ফণী দিবস...’। সাপের ছবি দিয়ে আবার কেউ লিখেছেন ‘ইতনা সন্নাটা কিঁউ হ্যায় ভাই? কিঁউ কি নাগিন ডান্স শুরু হোনে ওয়ালি হ্যায়!’ গুজবে কান দেবেন না, অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফণীর গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ দিন ছড়িয়েছে গুজব-ঠাট্টা, হাতে হাত রেখে।

দুনিয়া জুড়ে যখন চলেছে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা, তেমনই ভোটের মরসুমে হঠাৎ দল-রং-পার্টির থেকে নেটিজেনদের দু’দণ্ড বিরতি দিয়েছে ফণী। যাঁরা তা সত্ত্বেও ভোট-জ্বর কাটিয়ে উঠতে পারেননি, সকাল থেকে তাঁরা ছড়িয়েছেন নেতা-নেত্রীদের নাম করে নানা অডিয়ো-ভিডিয়ো ক্লিপ, ছবিও। কোন নেতারা ফণীকে টক্কর দিতে সক্ষম, তা নিয়েও ছড়িয়েছে কৌতুক-বার্তা। ফোনে ফোনে যেমন পৌঁছল, ‘দিদির আয়লায় আগমন, ফণীতে গমন’-এর মতো মিম।

সোশ্যাল মিডিয়াতেই আবার উঠল এ নিয়ে প্রতিবাদও। নিজের প্রোফাইলের দেওয়ালে কেউ লিখলেন ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে যাঁরা খিল্লি করছেন, তাঁরা আমার বন্ধু থাকবেন না।’ কেউ আবার লিখে দিলেন, ‘কে কে ‘সেফ’ আছেন, জানতে চাই না। আপনারা খেয়াল রাখুন, অনেকেরই ‘সেফ’ থাকার সুযোগ নেই।’ তবে ছুটির মেজাজ যে ঝড়ের আতঙ্ককে কয়েক গোল দিয়েছে, তা স্পষ্ট করে দিল উদ্বিগ্নদের পোস্টের উত্তরে ধেয়ে আসা ঠাট্টা। ঝড়ের সময়ে পশু-পাখিদের আশ্রয় দেওয়ার বার্তার উত্তরে জনৈক বন্ধু পাঠিয়ে বসলেন— ‘ফণীর গতিবেগ দু’শো ছাড়াবে শুনলাম। ভাগ্য ভাল থাকলে পুরীর বিখ্যাত

কাকাতুয়ার গজা হাতে এসে পড়তে পারে। জয় জগন্নাথ।’

সেই আহ্লাদেই ছড়িয়ে পড়ল বাঙালির একে-অপরকে নিয়ে মশকরা। জানলায় বসা বিড়ালের ছবি দিয়ে মিম দেখাল ঘূর্ণিঝড়ের দাপট দেখতে কত উৎসুক হয়ে চায়ের কাপ হাতে অপেক্ষা করছেন শহরবাসী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fani Cyclone ফণী Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE