পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাতে ভেঙে পড়েছে একটি গাছ। ছবি: অর্চিষ্মান সাহা
পূর্বাভাস ছিল।আতঙ্ক গ্রাস করেছিল শহর কলকাতাকে।উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ নিয়ে রাতে ঘুমিয়েছিল কলকাতা। তবে সকালে ঘুম ভাঙতেই শঙ্কার মেঘ উধাও। ফণীর প্রভাবে মহানগরে রাতে কয়েক দফা বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া আর সকালের আকাশ কালো মেঘ ছাড়া মহানগরে ফণীর প্রভাব কার্যত নেই বললেই চলে। বেলা একটু বাড়তেই যেন আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়ল শহর। তাল মিলিয়ে ১০টা নাগাদ মেঘের আড়াল ঠেলে প্রকাশ্যে এল সূর্যও। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সল্টলেক থেকে রাজারহাট— সব প্রান্তে ফিরল স্বভাবসিদ্ধ শহুরে ব্যস্ততা।স্বাভাবিক হল কলকাতা। উড়ান চালু হলে দমদম বিমানবন্দরে। স্বাভাবিক ট্রেন এবং গণ পরিবহণ ব্যবস্থাও।
পুরীতে আছড়ে পড়ার পর থেকেই কলকাতার হৃদপিণ্ডে ফণী-কম্পন শুরু হয়েছিল। যত রাজ্যের দিকে এগোচ্ছিল, আতঙ্ক বাড়ছিল। স্কুল ছুটি, শপিং মল বন্ধের ঘোষণা, পুরসভা থেকে পুলিশ-প্রশাসনের কর্মীদের রাত জেগে পাহারা দেওয়া, একের পর এক রাজনৈতিক সভা বাতিল, খড়্গপুর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর তদারকি— সব দেখে তাণ্ডবের প্রহর গুনতে শুরু করেছিল মহানগর। তার উপর রাতের দিকে শুরু হয়েছিল ভারী বৃষ্টি এবং দমকা হাওয়া। ফলে ধরেই নেওয়া হচ্ছিল, আবহাওয়ার পূর্বাভাস মতোই গভীর রাতে বা ভোরের দিকে শহরে বড় আঘাত হানবে ফণী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্যোগ এড়িয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল কলকাতা।
তাহলে কি কোনও প্রভাবই পড়েনি কলকাতায়? আবহবিদরা বলছেন, কার্যত ফণীর লেজের ঝাপটা লেগেছে কলকাতার গায়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর দিয়ে প্রবেশ করেছিল ফণী। তার পর হুগলির আরামবাগের উপর দিয়ে গিয়ে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ হয়ে ফণী প্রবেশ করবে বাংলাদেশে। সেই পথেই সীমান্ত অতিক্রম করেছে ফণী। ফণীর ব্যাস ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ ব্যাসার্ধ ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটারের মতো। খড়্গপুর থেকে কলকাতার দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটারের মতো। খড়্গপুরকে কেন্দ্রবিন্দু ধরলে কলকাতার উপর শেষ প্রান্তের যে প্রভাব পড়ার কথা, সেটাই পড়েছে, বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ফণীর দশা কাটল অল্পের উপর দিয়েই, দুর্বল সাইক্লোন নিম্নচাপ হয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে
হাওয়া অফিসের খবর, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত আলিপুরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৬৬ মিলিমিটার। এর থেকেই পরিষ্কার, টানা ভারী বৃষ্টি হয়নি। ভূপ্রাকৃতিক ভাবে আকার গামলার মতো হলেও শহরের কোথাও জল জমার খবর নেই। ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, হাতে গোনা দু’-একটি গাছ উপড়ে বা ভেঙে পড়লেও যানবাহন চলাচলে তার প্রভাব পড়েছে সামান্যই। বেনিয়াটোলায় টালির ছাদ ভেঙে পাঁচ জন আহত হয়েছেন। সকাল থেকেই মহানগরের সব পরিষেবা কার্যত স্বাভাবিক। মেট্রো পরিষেবাও চলছে অন্যান্য দিনের মতোই। শুধু পূর্ব ঘোষণা মতো কমানো হয়েছে যাত্রার সংখ্যা। ফলে দু’টি ট্রেনের মাঝের সময়ের ব্যবধান কিছুটা বাড়লেও তাতে যাত্রী পরিষেবায় খুব একটা প্রভাব পড়েনি। বদলায়নি শুরু এবং শেষ মেট্রোর সময়ও।
খুলে গেল আকাশপথও। শনিবার সকাল আটটার পর থেকেই স্বাভাবিক বিমান পরিষেবা চালু হয়েছে দমদম বিমানবন্দরেও। প্রথমে ঘোষণা হয়েছিল, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার সন্ধে ৬টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে কলকাতা বিমানবন্দরে। কিন্তু ফণী নির্ধারিত সময়ের আগেই পুরীতে আছড়ে পড়া এবং সেই মতো বাংলার দিকে এগিয়ে আসার কারণে সময় আরও এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ)। বিকেল তিনটে থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় সব উড়ান। এর পর আজ শনিবার ৯টা ৫৭ মিনিটে কলকাতা-আগরতলার উদ্দেশে টেক অফ করে প্রথম উড়ান। ১০টা ১০ মিনিটে প্রথম রানওয়েতে নামে দিল্লি-কলকাতা উড়ান।
সকালের দিকে মেঘাচ্ছন্ন কলকাতার আকাশ। ছবি: অর্চিষ্মান সাহা
রাস্তায় লোকজনের সংখ্যাও সকালের দিকে ছিল হাতে গোনা। আর পাঁচটা দিনের মতো চাঞ্চল্য, তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি। ফুটপাতের হকার-দোকানদাররা যাঁরা দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিলেন, বেলা বাড়তেই তাঁদের দেখা গিয়েছে,পসরা সাজিয়ে বসার তোড়জোড় করতে। আবার সরকারি-বেসরকারি বাসেও বেলা বাড়তেই ভিড় বেড়েছে। ছিল পর্যাপ্ত অটোও। ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাবেও কোনও প্রভাব পড়েনি। উত্তর থেকে দক্ষিণ, বেহালা থেকে বেলেঘাটা, বেলগাছিয়া থেকে বালিগঞ্জ— সর্বত্রই ছবিটা একই রকম।
স্বাভাবিক ছন্দে কলকাতা। ধর্মতলায় ছবি তুলেছেন অর্চিষ্মান সাহা
আরও পডু়ন: মোবাইল টাওয়ারগুলো যেন কে উ খেলনার মতো ভেঙে দিয়েছে, ইটের চাঙড় উড়ে এসে পড়ল গাড়িতে
ফণীর কেন্দ্রবিন্দু কলকাতার ধারেকাছে না এলেও, আলোচনা কেন্দ্রে কিন্তু ছিল সেই ফণীই। কী ভাবে কলকাতার কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেল, কতদূর এগোল, বাংলাদেশে ঢুকল কিনা, পুরীর কতটা ক্ষতি হল— চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে সেই সব নিয়েই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy