Advertisement
E-Paper

রোজের ব্যবহারের চেনা জিনিসও সাজাবে মণ্ডপ

চেনা জিনিসও অচেনা হয়ে উঠতে পারে! সৌজন্য শহরের উৎসব কাপ। নামী-দামি উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কথা তো শোনাই যায়। কিন্তু নিত্যদিনের চেনা জিনিস, ফেলে দেওয়া জিনিসও যে মণ্ডপসজ্জার কাজে লাগতে পারে, সেটা বোঝাতেই বোধ হয় এ বার কোমর বেঁধেছেন মহানগরের শিল্পীরা।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩১

চেনা জিনিসও অচেনা হয়ে উঠতে পারে! সৌজন্য শহরের উৎসব কাপ।

নামী-দামি উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর কথা তো শোনাই যায়। কিন্তু নিত্যদিনের চেনা জিনিস, ফেলে দেওয়া জিনিসও যে মণ্ডপসজ্জার কাজে লাগতে পারে, সেটা বোঝাতেই বোধ হয় এ বার কোমর বেঁধেছেন মহানগরের শিল্পীরা।

ছোটবেলায় দিদিমা-ঠাকুরমার কাছে রূপকথার গল্প শোনা হয়তো এখনকার কচিকাঁচাদের অনেকেরই অচেনা। কিন্তু ত্রিশের কোঠা যাঁরা পেরিয়েছেন, তাঁরাও এমন গল্প শুনেই বড় হয়েছেন। আজও দেশ-বিদেশে, অফিস কিংবা শপিং মলে তাঁদের ‘পিছুটান’ সেই সব স্মৃতিই। এই পিছুটানের স্মৃতিই এ বছর ফিরে আসছে দক্ষিণ কলকাতা হিন্দুস্থান পার্কে। থিম সাজাতে সেখানে শিল্পী অনির্বাণ দাস বেছে নিয়েছেন ঠাকুরমার চশমা, জাঁতি, সুপুরি, লাঠি, কাঁথা স্টিচের কাজ। এমনকী, মণ্ডপ দেখতে দেখতে কানে ঢুকবে ‘ঠাকুরমার’ কথাও!

হিন্দুস্থান পার্কের মণ্ডপে তৈরি হচ্ছে রথ। রথের সাজ, ঘোড়া, হাতি, পাখি, সৈন্যসামন্ত সবই তৈরি হচ্ছে জাঁতি দিয়ে। লম্বা রাস্তার দু’পাশে থাকছে সুপুরির গাছ। আর সেই গাছের পাতায় থাকছে কাঁথাস্টিচের কাজ। কাঁথা বুনতে ব্যবহার করা পরিচিত ফ্রেমকেও মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করছেন শিল্পী। যাবতীয় কাঁথাস্টিচের কাজ করছেন মেদিনীপুর, হাওড়ার বিভিন্ন গ্রামের মা-ঠাকুরমা-দিদিমারাই। হিন্দুস্থান পার্কের ঠাকুরমার গলাতেও থাকছে চমক। শোনা যাচ্ছে, টলিউ়ডের এক প্রবীণ নায়িকার গলাতেই ফুটে উঠবে থিমের ভাবনা। ঠাকুরমার কাছে শোনা রূপকথার পক্ষীরাজ ঘো়ড়ারাও হাজির হবে মণ্ডপে।

বাঙালি গেরস্থ বাড়ির অতি পরিচিত চামচও এ বার উঠে আসছে শহরের মণ্ডপে। খিদিরপুর ২৫ পল্লির মণ্ডপে শিল্পী রিন্টু দাস তুলে ধরছেন সৃষ্টির আদি রহস্যকে। সেই থিমেই মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করছেন বড় থেকে ছোট নানা ধরনের চামচ। ধাতব চামচে আলোর প্রতিফলন মণ্ডপসজ্জায় নতুন মাত্রা দেবে বলেই মনে করছেন শিল্পী। ওই পুজোয় তিনি নতুন ভাবে তুলে ধরছেন কাঠ শিল্পকেও। সেই কাজ করতে নিয়ে এসেছেন বলাগড়ের নৌকো তৈরির কারিগরদের।

চেনা জিনিসের অচেনা হয়ে ওঠা অবশ্য এর আগেও বারবার ফুটে উঠেছে। গত শতকের শেষে ভাঁড় দিয়ে মণ্ডপ গড়ে তাক লাগিয়েছিল শহরের একটি পুজো কমিটি। বছর দুয়েক আগে উত্তর কলকাতার একটি পুজোর ফাইবারের থালা-বাটি-গ্লাস দিয়ে মণ্ডপসজ্জাও লোকের তারিফ কুড়িয়েছিল। পুজোর ময়দান বলছে, যত দিন গড়াচ্ছে, ততই চেনা জিনিসকে নতুন আঙ্গিকে ব্যবহার করছেন শিল্পীরা।

কুমোরটুলির নবকুমার পালের পরিচিতি ‘তারকা’ মৃৎশিল্পী হিসেবেই। কিন্তু এ বার তিনি ‘থিম মেকারের’ ভূমিকাতেও। শোভাবাজার সংগ্রামীতে থিম সাজাতে তিনি বেছে নিয়েছেন কোষাকুষির মতো চেনা জিনিসকেই। থাকছে আমবাঙালির পরিচিত ধাতুর কাজও।

বাঙালি বাড়িতে চাটাই পেতে বসাটাও অচেনা ছবি নয়। পাতিপুকুর বসাকবাগানের পুজোর অন্যতম উপাদান সেই চাটাই। এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছকেই থিম বেছে নিয়েছেন সেখানকার পুজোকর্তারা। মণ্ডপও সাজছে তালগাছেরই নানা অংশ দিয়ে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে তালগাছের পাতা জোগাড় করেছেন শিল্পী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। পাতাহীন, মরে যাওয়া তালগাছের গুঁড়ি জোগাড় করতে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জে। সোমনাথবাবুর টালা সার্কাস ময়দানের পুজোতেও থিম এবং উপাদান বাঙালির অতি পরিচিত। বাঘ বাঁচানোকে থিম করে মণ্ডপ সাজাতে সেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে কঞ্চি এবং বাঁশ। বাঘমামার গায়ের রং আনতে প্যারিসের উপরে পড়ছে হলুদ-কালো রং।

উত্তরের সব থেকে প্রাচীন বারোয়ারি পুজো বলে পরিচিত শ্যামপুকুর সর্বজনীনে শিল্পী বিমল ও মধুময় মাইতি মণ্ডপসজ্জার জন্য বেছে নিয়েছেন ঘুড়ি, লাটাই, পুতুলের মতো ছোটদের পরিচিত খেলনাকে। বেহালা ২৯ পল্লিতে শিল্পী শঙ্কর দে মণ্ডপসজ্জার একটা বড় অংশে ব্যবহার করছেন আইসক্রিমের চামচ। কাঠ কিংবা লোহার কাজে ব্যবহার হওয়া শিরীষ কাগজকে নতুন ভাবে চেনাচ্ছেন শিল্পী পরিমল পাল। মণ্ডপসজ্জার কাজে গেরস্থালির কলসি কিংবা মাটির প্রদীপও ব্যবহার করছেন তিনি। মাটির প্রদীপকে নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আসছে সোদপুরের উদয়ন সঙ্ঘও। মণ্ডপসজ্জার পাশাপাশি মণ্ডপের ভিতরে তৈরি জলাধারে প্রদীপও ভাসানো হবে। প্রদীপ এবং লন্ঠনকে মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরছে গড়িয়ার মিতালি সঙ্ঘও। একই সঙ্গে বাজার কাঁপানো এলইডি আলোকেও মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করছে তারা।

গড়ের মাঠে আটপৌরে যুবকও কোনও কোনও দিন তারকা হয়ে ওঠে। চেনা জিনিসের অচেনা রূপ কি এ বার উৎসব কাপে নতুন পাওনা হবে?

pandal Durga Idol
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy