মহালয়ার দিন থেকে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছিল গড়িয়ার মায়া গুপ্তর। রক্ত পরীক্ষা করার পরে চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত তিনি। দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন মায়াদেবী। অষ্টমীর রাত থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকেরা জানান, প্লেটলেট কমতে শুরু করেছে। দ্রুত প্লেটলেট দিতে হবে। কিন্তু সারা রাত শহরের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘুরেও মেলেনি প্লেটলেট।
হাইল্যান্ড পার্কের বাসিন্দা অনিন্দিতা সেনের পরিবারও একই ভোগান্তির শিকার। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত অনিন্দিতার জন্য প্লেটলেট জোগাড় করতে নাজেহাল হতে হয় তাদের।
শুধু মায়াদেবী কিংবা অনিন্দিতার পরিবারই নয়, বহু ডেঙ্গি রোগীর পরিজনেরাই জানিয়েছেন, পুজোর সময়ে রক্তের খোঁজে নাজেহাল হয়েছেন তাঁরা। পুজোর দিনগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় ঢিলেমি নিয়ে প্রতি বছরই নানা প্রশ্ন ওঠে। সেই সমস্যার সমাধানে এ বার স্বাস্থ্য দফতর সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনে কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করেছিল, যেখানে চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি পরিষেবা পাওয়ার কথা। তার পরেও অবশ্য পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কেই পুজোর বিশেষ রুটিন (২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর) করা হয়েছে। যার জেরে এক দিকে যেমন তৈরি হয়েছে কর্মী-সঙ্কট, তেমনই রক্ত সংগ্রহের কাজও প্রায় বন্ধ
ছিল। এসএসকেএম, এন আর এস এবং আর জি কর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের উপাদান ভাগ করার কাজ প্রায় হয়ইনি। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে সপ্তমী, অষ্টমী এবং দশমীতে রক্ত সংগ্রহ বন্ধ ছিল। ষষ্ঠী ও নবমীতে যে পরিমাণ রক্ত
সংগ্রহ হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় ছিল যৎসামান্য।
রক্তদান আন্দোলনকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে রক্তদান শিবির বিশেষ হয় না। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তারাও পুজোয় রক্তদান কর্মসূচি করতে উদ্যোগী হন না।
যার জেরে প্রতি বছরই রোগীদের নাজেহাল হতে হয়। তাঁদের অভিযোগ, রবিবার ১ অক্টোবর ছিল ‘জাতীয় রক্তদান দিবস’। তা সত্ত্বেও ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির পক্ষ থেকে ওই দিন রক্তদান শিবির করতে কিংবা রক্তদানে উৎসাহ দিতে কোনও কর্মসূচি চোখে পড়েনি। হাতে গোনা কয়েকটি শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহের কাজ চলেছে।
এ বছর কলকাতা, বিধাননগর, উত্তর ও দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির দাপট বেড়েছে। আর জি কর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন শুধুমাত্র দক্ষিণ দমদম এলাকা থেকেই গড়ে কুড়ি জন করে ডেঙ্গি রোগী সেখানে ভর্তি হচ্ছেন। এঁদের সকলকেই প্লেটলেট দেওয়া দরকার। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত রক্ত এবং বিভাজিত রক্ত না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ স্বাস্থ্য দফতর। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। পুজোর সময়ে সব ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত কর্মী ছিলেন। পরিকল্পনা করেই পুজোয় বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy