Advertisement
১১ মে ২০২৪
Dengue

বাথরুম পর্যন্ত রোগীর সারি

রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা কমলকৃষ্ণ পতির দাবি, বিভিন্ন জায়গাতেই অতিরিক্ত চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু কোথায়, কত চিকিৎসক এখনও পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে সেই পরিসংখ্যান তিনি জানাতে পারেননি।

রোগীদের ভিড়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রোগীদের ভিড়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১০
Share: Save:

শয্যা উপচে মেঝেতে তো রোগী আগেই ছিল। এখন মেঝে উপচে রোগীর ঠাঁই লিফটের সামনে, এমনকী শৌচাগারের দরজাতেও। শৌচাগারে যাওয়া আসার পথে, লিফটে ওঠা-নামার সময়ে বহু মানুষের পা ঠেকে যাচ্ছে রোগীদের গায়ে। কিন্তু জ্বরে নেতিয়ে থাকা অসংখ্য রোগীর সামনে এ ছাড়া কোনও উপায় নেই। এই পরিস্থিতিতে জ্বরের পরেও আরও অন্তত দু’দিন রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি রাখার নির্দেশ জারি হওয়ায় আতান্তরে পড়েছেন সব হাসপাতালের কর্তাই। তাঁদের বক্তব্য, যুক্তির দিক থেকে কথাটা ঠিকই। কিন্তু তা কার্যকরী করা হবে কী ভাবে? ‘‘এর পরে কি প্রত্যেক শয্যার সঙ্গে বাঙ্ক তৈরি করে রোগীকে রাখা হবে?’’ প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তা।

বস্তুত, এই প্রশ্ন শনিবার ঘুরপাক খেয়েছে রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালেই। বাড়তি চিকিৎসক, নার্সের ব্যবস্থা কেন করা হচ্ছে না, বাড়তি শয্যার বন্দোবস্ত কী ভাবে হবে, সে নিয়ে কেন কোনও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কম-বেশি সব হাসপাতালের প্রশাসকই। তাঁদের বক্তব্য, যে সব হাসপাতালে আক্রান্তের ভিড় বেশি, কেন সেখানে অন্য হাসপাতাল থেকে অতিরিক্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না? কোথাও কোথাও তো এমন পরিস্থিতি যে এক জন ডাক্তার বা নার্সকেই ৫০০ জন রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।

রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা কমলকৃষ্ণ পতির দাবি, বিভিন্ন জায়গাতেই অতিরিক্ত চিকিৎসক পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু কোথায়, কত চিকিৎসক এখনও পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে সেই পরিসংখ্যান তিনি জানাতে পারেননি। কেন চিকিৎসক পাঠানোর ব্যাপারে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) কোনও ভূমিকা নিচ্ছে না? সংগঠনের তরফে শান্তনু সেন বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সরকার এ ব্যাপারে ডাকেনি। ডাকলে অবশ্যই আইএএ-র সদস্যরা যাবেন।’’ কেন তাঁরা নিজেরাই সরকারকে সেই প্রস্তাব দিচ্ছেন না, সেই প্রশ্নের অবশ্য কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোটেই উদ্বেগজনক নয় বলে বুধবার নবান্নে জানিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে যাই বলে থাকুন না কেন, তার ঠিক আগেই স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার জন্য তাঁদের কড়া ভাষায় তিরস্কার করেন। এর পর দিনই বিভিন্ন হাসপাতালে নির্দেশিকা জারি হয়, জ্বরের রোগীকে ফেরানো যাবে না। জ্বর কমার পরে রোগীকে অন্তত আরও দু’দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এসএসকেএমের এক কর্তার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য প্রশাসন তো নির্দেশ জারি করেই খালাস, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এটা একেবারেই খাপ খায় না। প্রতি দিন কাতারে কাতারে রোগী আসছেন। কোথায় ঠাঁই দেব তাঁদের?’’

একই বক্তব্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষেরও। কলকাতার বাইরের হাসপাতালগুলিতেও একই পরিস্থিতি। সর্বত্রই ঠাঁই নেই হাহাকার। আরজিকরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এমনিতেই তুচ্ছ ঘটনায় মানুষ আমাদের উপরে মারমুখী হয়ে উঠছেন। তার উপরে বাড়তি পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না করে এমন ফতোয়া জারি করে আমাদের বিপদ আরও বাড়ানো হচ্ছে। এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুললেই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি খুব খারাপ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE