হেলমেট নেই, তবু পেট্রোল পাচ্ছেন বাইকচালক। শুক্রবার, ভবানীপুরের একটি পাম্পে। — দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই সার। কলকাতা পুলিশ থেকে পেট্রোল পাম্প মালিক— কারওরই হেলদোল নেই। যার জেরে পঞ্চমীর রাতেও প্রাণ গেল দুই কিশোরের। হেলমেটহীন অবস্থায় মোটরবাইকে ছিল তিন জন। অম্বেডকর সেতুর উপরে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। হাসপাতালে ভর্তি আর এক আরোহী।
গত জুলাই মাসে পথ-নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। তার পরদিনই পুলিশ কমিশনার নির্দেশ জারি করেন, কলকাতার প্রতি পেট্রোল পাম্পে চালু হবে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’। অর্থাৎ বাইক চালক এবং আরোহীর হেলমেট না থাকলে তাঁকে পেট্রোল দেওয়া যাবে না। আইন না মানলে পাম্প মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল ওই নির্দেশে।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার পুজো শুরুর দিন তিনেক আগে জানিয়ে দিয়েছিলেন, পুজোর সময়েও মোটরবাইক আরোহীদের হেলমেট পরতে হবে।
কিন্তু পঞ্চমীর রাতের ঘটনাই প্রমাণ করে দিচ্ছে, ঘোষণাই সার। হেলমেট ছাড়াই কলকাতার রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোটরবাইক।
সম্প্রতি শহর ঘুরেও একই চিত্র ধরা পড়েছে। মানিকতলা, রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস থেকে শুরু করে খিদিরপুর, ভবানীপুর, টালিগঞ্জ— সর্বত্রই পেট্রোল পাম্পে বড় বড় করে লেখা ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’। কিন্তু তার নীচে দাঁড়িয়ে হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নিয়ে যাচ্ছেন বাইক আরোহীরা।
মানিকতলায় এপিসি রোডের পাশের এক পেট্রোল পাম্পের কথাই ধরা যাক। দুপুরে পাম্পে ঢুকে সেখানকার কর্মীদের ইশারা করে দু’টি আঙুল দেখালেন বাইক আরোহী। দু’লিটার পেট্রোল দিতে বললেন। কিন্তু দেখা গেল, চালক বা আরোহী কারওরই হেলমেট নেই। অবলীলায় ওই কর্মী পেট্রোল দিয়েও দিলেন।
অন্য দিকে, প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর এলাকা ভবানীপুরের একটি পাম্পেও একই চিত্র। এক তরুণীকে মোটরবাইকের পিছনে বসিয়ে সোজা পাম্পে ঢুকলেন এক যুবক। কারওরই হেলমেট নেই। কিন্তু তাঁরাও অবলীলায় পেট্রোল নিয়ে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
পাম্প মালিকেরা বলছেন, ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’— এই নীতি কলকাতার কিছু এলাকায় সফল ভাবে বাস্তবায়িত হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়নি। এমনকী পাম্প মালিকেরা চাইলেও স্থানীয় ‘দাদা’দের দৌরাত্ম্যে তা বাস্তবায়িত করা কার্যত দূর অস্ত্। আর পেট্রোল পাম্প মালিকদের অভিযোগ, প্রশাসন সব জেনেও চুপ।
মানিকতলার এক পাম্প মালিকের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় ছেলেরা এসে উৎপাত করে। গত মাসেই হেলমেট না পরে আসায় পেট্রোল দেওয়া হয়নি। সে কারণে আমাদের কর্মীদের মারধর করা হয়েছিল।’’ পুলিশকে জানালে বিপদ আরও বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় তাঁরা অভিযোগও জানাননি। ওই মালিকের কথায়, ‘‘ভয়ে আইন ভাঙতে হচ্ছে। পুলিশ তো আমাদের সব সময়ে নিরাপত্তা দেবে না! তারা তো রাস্তাতেও হেলমেট না-পরা চালকদের ধরছে না। আমরা কড়াকড়ি করলেই বা শুনবে কেন! ’’
ভবানীপুরের একটি পাম্পের মালিকও বলেন, ‘‘স্থানীয় লোকদের পেট্রোল না দিলে ঝামেলা শুরু করে দেয়। বাধ্য হয়েই দিতে হয়।’’ তাঁরও বক্তব্য, রাস্তায় পুলিশ নজরদারি চালালে সকলের ক্ষেত্রেই ভালো হয়।
কী কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না স্থানীয় ‘দাদা’দের?
ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মীর বক্তব্য, ‘‘রাস্তার ভিড় সামলাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। হেলমেট না পরে পেট্রোল না দেওয়ার বিষয়টি পাম্পের মালিকদেরই দেখতে হবে।’’ কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘হেলমেট ছাড়া কেউ জোর করে পেট্রোল দিতে বাধ্য করলে পাম্প মালিকেরা ১০০ ডায়ালে ফোন করতে জানাতে পারেন। স্থানীয় থানা বা ট্রাফিক গার্ডকেও বলতে পারেন। কেন বলেন না?’’ পাশাপাশি বিনীতবাবুর দাবি, মোটরবাইক চালকেরা হেলমেট পরছেন কি না, তার উপরেও জোরকদমে নজরদারি চলছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষার সেন বলেন, ‘‘কেউ জোর করে হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নিতে এলে আমাদের কিছু করার নেই। সে ক্ষেত্রে পুলিশকেই কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। পুলিশ কমিশনারকে আমরা সে কথা জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy