এমন পথেই নিত্য যাতায়াত। ছবি: সুদীপ ঘোষ
টিটাগড় থেকে গঙ্গার জল পরিশোধিত হয়ে পৌঁছবে নিউ ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসত পুরসভার ঘরে ঘরে। সে জন্য শুরু হয়েছে রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজও। কিন্তু বর্ষার মুখে সেই কাজ করতে গিয়ে মাটি-কাদায় একাকার হয়ে যাতায়াত করাই সমস্যা হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর। সবচেয়ে বেহাল অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতের।
৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গার ওই পানীয় জল প্রকল্পের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে বারাসত পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডেই। টিটাগড় থেকে জল এসে জমা হচ্ছে কোরা এলাকায়। সেখানে পরিশোধনের পরে ৬টি জলাধারের জমা হচ্ছে জল। তার পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য রাস্তার নীচ দিয়ে মোটা পাইপ বসানো হচ্ছে। তাতেই দেখা দিয়েছে এমন বিপত্তি। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বারাসতের চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, ‘‘খুব দ্রুত যাতে কাজ শেষ হয়, সে ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
কেমন দুর্ভোগ? পূর্বাশার বাসিন্দা দীপঙ্কর রায় জানান, আশপাশের সব রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। পাঁচশো মিটার রাস্তা ঘুরপথে যেতে দেড় কিলোমিটার পেরোতে হচ্ছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পরে কোনও রকমে চলছিল। কিন্তু বৃষ্টির পরে যা হাল, বাইক চালানো প্রত্যেক মুহূর্তে ঝুঁকির হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীপঙ্কর জানালেন, ইতিমধ্যেই অনেককে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে কাদায় কার্যত গড়াগড়ি খেতে হয়েছে। স্কুটি নিয়ে ব্যবসার কাজে ঘুরতে হয় অনন্ত সেনকে। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট চাকার গাড়ি। প্রতি মুহূর্তে পিছলে পড়ার আশঙ্কা।’’ ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে মোটরবাইকই ভরসা প্রণব রায়ের। বললেন, ‘‘রাস্তাঘাটের যা হাল, বাইক চালাতে ভয় করে। তাই ছেলেকে রিকশায় স্কুলে পাঠাচ্ছি।’’
বারাসতবাসীর অভিজ্ঞতায়, যশোর রোড, কেএনসি রোডের মতো কিছু বড় রাস্তা বাদ দিলে ভিতরে অধিকাংশ রাস্তাই কমবেশি খোঁড়া হয়েছে। প্রতিটি রাস্তাই যেন সাক্ষাৎ দুর্ঘটনার ফাঁদ। রাতে লোডশেডিং হলে বিপত্তি বাড়ছে আরও। স্কুলপড়ুয়াদের পৌঁছে দিতে তিন চাকার ‘খাঁচাভ্যান’ চালান পলাশ বৈরাগী। বললেন, ‘‘সে দিনই চোখের সামনে দেখলাম একটা রিকশা কাদায় উল্টে পড়ল। খুব ভয়ে ভয়ে চালাতে হচ্ছে।’’
বারাসতের বিভিন্ন কলেজে এখন ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। রোজ বাইরে বাইরে থেকে প্রচুর ছেলেমেয়ে আসছে। শেঠপুকুর বাসস্টপে নেমে অনেককে হেঁটে আসতে হয় কলেজ পর্যন্ত। এক দিকে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে, তার উপরে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকছে টোটো, ভ্যান, রিকশা। হাবরা থেকে আসা পলি রায় নামে এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘সামান্য রাস্তাটুকু হেঁটে আসতে গিয়ে কাদায় পিছলে পড়ে জামার দফারফা। কনুইয়ের কাছে কেটেও গিয়েছে।’’
কিন্তু কেন বর্ষার মুখে কাজ শুরু হল? সুনীলবাবু বলেন, ‘‘নির্বাচন, পাইপের টেন্ডারে অসুবিধার জন্যই এই দেরি। তবে নবপল্লি, সার্কুলার রোড, স্বামীজি রোডের মতো বেশ কিছু জায়গায় পাইপ বসিয়ে মাটি চাপা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কাজের পরে সব রাস্তাই আগের মতো ভাল অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’’
বারাসতেরই দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘উন্নয়নের জন্যই এত কিছু—বুঝলাম। কিন্তু সে জন্য বড় বেশি মাশুল গুনতে হচ্ছে এত মানুষকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy