Advertisement
১১ মে ২০২৪
Dengue

মৃত্যু হতেই ডেঙ্গির নাম শুধুই জ্বর

গত শনিবার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা এলাকার বাসিন্দা, গৃহবধূ নমিতা গায়েন (২০) প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন।

নমিতা গায়েন

নমিতা গায়েন

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

এ যেন সেই ‘খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না’র মতো অবস্থা!

যে হাসপাতাল রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির উল্লেখ করেছে, সেই হাসপাতালই ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি লিখতে নারাজ। জ্বরেই রোগিণীর মৃত্যু হয়েছে বলে লিখে দেওয়া হয়েছে। শুধু উল্লেখ করা হয়নি ডেঙ্গি শব্দটি।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনের চাপেই কি ডেঙ্গির উল্লেখ করতে ভয় পাচ্ছে বারুইপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল? মৃতার পরিবার ও পরিজনদের অভিযোগ সে দিকেই ইঙ্গিত করছে।

গত শনিবার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা এলাকার বাসিন্দা, গৃহবধূ নমিতা গায়েন (২০) প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন। তাঁর পরিজনেরা জানিয়েছেন, সে দিন সকালেই সুভাষগ্রামে সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নমিতাকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সোমবারের আগে পাওয়া যাবে না। তাঁরা ওই রোগিণীকে এম আর বাঙুরে ‘রেফার’ করে দেন। নমিতার ননদ সুপর্ণা বলেন, ‘‘নমিতাকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হলেও সেখানে বেড মিলবে না বলে শুনেছিলাম। তাই নমিতাকে আমরা বারুইপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করি।’’

নমিতা গায়েনের রক্তের রিকুইজিশন স্লিপে, অসুখের নাম হিসেবে স্পষ্ট লেখা রয়েছে ডেঙ্গি। নিজস্ব চিত্র

নমিতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালেই গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গিয়ে নমিতাকে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গি ধরা পড়ে। হাসপাতালের তরফে ডেঙ্গির চিকিৎসা করা হচ্ছে বলেই লেখা হয় নমিতার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রে। এ দিকে, নমিতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। রক্তবমি হয়। তার পরে তাঁকে আইসিসিউ-তে ভর্তি করা হয়। বুধবার রাতে নমিতা মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতালের তরফে পরিবারকে জানানো হয়। পরিজনদের অভিযোগ, নমিতার ডেঙ্গি হয়েছিল বলে লিখিত ভাবে জানানোর পরেও ডেথ সার্টিফিকেটে হাসপাতাল ডেঙ্গির উল্লেখ করেনি। তাঁরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে খোদ জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানো হবে।

ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ এড়িয়ে যাওয়া হল কি প্রশাসনের ভয়ে?

অভিযোগ মানতে চায়নি হাসপাতাল। তাদের যুক্তি, নমিতা যখন ভর্তি হয়েছিলেন, তখন তাঁর রক্তচাপ প্রায় তলানিতে। ব্লাড সুগার নেমে গিয়েছে ৩০-এ। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে নমিতার ডেঙ্গি ধরা পড়লেও তাতেই মৃত্যু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কারণ, পরবর্তী পর্যায়ে ওই রোগিণীর প্রায় সব অঙ্গই অকেজো হয়ে গিয়েছিল। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখারও ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কোনও ভাবেই জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সেই কারণেই সরাসরি ডেঙ্গির উল্লেখ না-করে জ্বরেই মৃত্যু হয়েছে বলে লেখা হয়েছে।

ওই হাসপাতালের তরফে দাবি করা হয়েছে, নমিতা শারীরিক ভাবে দুর্বল ছিলেন। জ্বরের পাশাপাশি নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। সেই কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু নমিতার পরিজনদের বক্তব্য, মাস দুয়েক আগেও নমিতার নানা শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছিল। সমস্ত রিপোর্টই স্বাভাবিক ছিল। ডেঙ্গির প্রকোপেই নমিতা দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁদের দাবি।

নমিতা থাকতেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের গভর্নমেন্ট কলোনিতে। তাঁর দু’বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুর প্রশাসনের গাফিলতিতেই ওই এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ছে। পুর চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুর ঘটনাই দুঃখজনক। তবে ওই মহিলার ডেথ সার্টিফিকেট এখনও আমাদের হাতে আসেনি। পুরসভার তরফে ডেঙ্গি প্রতিরোধে সব রকম ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডেঙ্গি পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।’’ ডেঙ্গি প্রতিরোধে এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুরকর্মীরা নজরদারি ও সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছেন বলেও দাবি করেছেন পল্লববাবু।

ওই রোগিণীর মৃত্যুর বিষয়ে জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর বলেন, ‘‘আমার কাছে কেউ অভিযোগ জানাননি। কোনও অভিযোগ জমা পড়লে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। তবে জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতির সব রকম রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ব্লকে নজরদারি চলছে। বারুইপুরের মহকুমাশাসকের কাছ থেকে ওই মৃত্যুর ঘটনার রিপোর্ট নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Death Dengue Death certificate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE