Advertisement
E-Paper

‘সবজান্তা’ রোগীর প্রশ্নে জেরবার চিকিৎসকেরা

কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের এক প্রবীণ শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, ‘‘রোগের জন্য ওষুধ দিলে সে ওষুধ কী কী রাসায়নিক সমীকরণে তৈরি হয়েছে, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও কেন সেটা দেওয়া হচ্ছে, কী ভাবে অস্ত্রোপচার হবে, অস্ত্রোপচারে ইন্টারনেটে কুড়ি মিনিট সময় লাগবে বলে জানানো হলেও চিকিৎসক কেন এক ঘণ্টা বলছেন, এ ধরনের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের বড় অংশ নিজেরাই রোগীতে পরিণত হচ্ছেন।’’

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৭ ০২:২৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মাথা ব্যথা হোক বা পিঠের ব্যথা, আচমকা চোখে অন্ধকার দেখা কিংবা বমির ভাব— উপসর্গ যা-ই হোক, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে ইন্টারনেট ঘেঁটে নেওয়ার অভ্যাস ইদানীং বেড়েই চলেছে। কেউ কেউ আবার ইন্টারনেট দেখে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, কোন কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। তার পরে সেই রিপোর্ট নিয়ে পৌঁছন ডাক্তারের চেম্বারে। কিন্তু সেখানেই কি শেষ? ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়েও তাঁদের অজস্র মতামত। ‘‘এই ওষুধটা কেন দিলেন?’’ অথবা ‘‘এই ডোজটা আর একটু কম হলে ভাল হত না?’’

চিকিৎসার অ-আ-ক-খ নিয়ে ইন্টারনেট ঘাঁটা রোগীদের এমন হাজারো প্রশ্নে ইদানীং সমস্যায় পড়ছেন বহু ডাক্তার। ধৈর্য্যচ্যুতি তো হচ্ছেই, কেউ কেউ আবার চিন্তায় পড়েছেন, এ ভাবে চলতে থাকলে এখন থেকে ১৫-২০ বছর পরে তাঁদের অস্তিত্ব ঠিক কোথায় দাঁড়াবে? ইদানীং চিকিৎসক-রোগী সম্পর্কের সমীকরণ যে অবিশ্বাসের জমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেও এই প্রশ্ন আরও বেশি করে সামনে আসছে বলে জানান বহু ডাক্তার। এক সমীক্ষাতেও সামনে এসেছে এমন তথ্য।

একটি বেসরকারি সংস্থার করা ওই সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, রোগীদের এত প্রশ্নের জেরে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার সময়ে ৮২ শতাংশ চিকিৎসক মনে করেন, তাঁদের পরিষেবা দেওয়ার দক্ষতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রায় ৬০ শতাংশ চিকিৎসক মনে করেন, প্রযুক্তি তাঁদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে ও আগামী দিনে তাঁদের কাজ থাকবে না। এই মানসিক চাপের জেরে চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে নানা মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য ইতিবাচক নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। দেশের বিভিন্ন অংশে মোট দু’হাজার ডাক্তারের উপরে সমীক্ষাটি করা হয়েছিল। জাতীয় স্তরের সমীক্ষা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের কাছেও।

কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের এক প্রবীণ শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, ‘‘রোগের জন্য ওষুধ দিলে সে ওষুধ কী কী রাসায়নিক সমীকরণে তৈরি হয়েছে, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও কেন সেটা দেওয়া হচ্ছে, কী ভাবে অস্ত্রোপচার হবে, অস্ত্রোপচারে ইন্টারনেটে কুড়ি মিনিট সময় লাগবে বলে জানানো হলেও চিকিৎসক কেন এক ঘণ্টা বলছেন, এ ধরনের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে চিকিৎসকদের বড় অংশ নিজেরাই রোগীতে পরিণত হচ্ছেন।’’ একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা তথা গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট সুজিত কর পুরকায়স্থের কথায়, ‘‘রোগ নির্ণয়ের পর্বটাই সব চেয়ে জরুরি। সেই কাজ ইন্টারনেটের তথ্য করতে পারে না। তা ছাড়া, যে তথ্য দেখে রোগী রোগ সম্পর্কে ধারণা তৈরি করছেন, তা কতখানি নির্ভুল, বিচার করা দরকার।’’

আবার শিশু-রোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ মনে করছেন, রোগীদের হাতে বিপুল তথ্য থাকার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টো দিকই রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘রোগীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য চিকিৎসককে অনেক বেশি আপডেটেড থাকতে হয়। কিন্তু এর খারাপ দিকটি হল, কোনও রোগের উপসর্গ ইন্টারনেটে দেখে রোগী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।’’

ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের নানা কৌতূহল রয়েছে। সমীক্ষা বলছে, যে কোনও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনে সব চেয়ে বেশি ক্যানসার রোগের বিষয়ে জানতে চান সাধারণ মানুষ। কিন্তু তথ্য হাতে থাকলেই চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া যায় না বলেই মত ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষিত এবং চিকিৎসাবিদ্যায় শিক্ষিত, দু’টো আলাদা বিষয়। এক জন চিকিৎসক শুধু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে রোগীর চিকিৎসা করেন না। হাতেকলমে রোগীকে পরীক্ষা করে চিকিৎসা করেন। চিকিৎসকের সেই অভিজ্ঞতা রোগ নির্ণয় এবং নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’’

রোগীদের অবশ্য একটা বড় অংশ মনে করছেন, এটা তাঁদের অধিকার। তাঁদের বক্তব্য, এতে যেমন সময় বাঁচে, তেমনই রোগীকে ডাক্তারের তাচ্ছিল্য করার প্রবণতাও কমে।

Doctor Medical Treatment Patient ডাক্তার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy