Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বহুতলে আগুনে মৃত এক, প্রশ্নে অগ্নিসুরক্ষা

ঘুমের মধ্যেই শুরু হয়েছিল শ্বাসকষ্ট। ঠিক যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে। ঘুম ভাঙতেই বছর ছাব্বিশের রৌনক দত্ত দেখলেন, চারপাশ ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। কোনও মতে পাশে ঘুমিয়ে থাকা বন্ধুকে নিয়ে ফ্ল্যাটের বাইরে চলে এসেছিলেন তিনি। জুড়ে দেন চিৎকার।

গৌতম ধাড়া

গৌতম ধাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৮
Share: Save:

ঘুমের মধ্যেই শুরু হয়েছিল শ্বাসকষ্ট। ঠিক যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে। ঘুম ভাঙতেই বছর ছাব্বিশের রৌনক দত্ত দেখলেন, চারপাশ ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। কোনও মতে পাশে ঘুমিয়ে থাকা বন্ধুকে নিয়ে ফ্ল্যাটের বাইরে চলে এসেছিলেন তিনি। জুড়ে দেন চিৎকার। তত ক্ষণে ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন লেকটাউনের ‘বি’ ব্লকের ওই আবাসনের অন্য বাসিন্দারাও।

দমকল সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত আড়াইটে নাগাদ বি ব্লকের ওই আবাসনের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। দমকলের ১২টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় প্রায় ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দা গৌতম ধাড়া (৪৫)। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা গৌতমবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, মৃত্যুর কারণ হিসেবে হৃদরোগকে দায়ী করেছেন চিকিৎসক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন গৌতমবাবুর ছেলে নীল ধাড়া এবং তাঁর দুই বন্ধু রৌনক দত্ত ও সোহম ঘোষ। সোহম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। প্রাথমিক তদন্তে দমকলের অনুমান, পাঁচতলার ফ্ল্যাটটির এসি মেশিন থেকে আগুন লেগেছিল।

শনিবার ওই আবাসনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সদর দরজা আগলে রেখেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। অপরিচিত লোক দেখলেই ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন। ছবি তুলতে গেলেও নিষেধ করছেন। বলছেন, ‘‘পুলিশ ভিতরে ঢুকতে নিষেধ করেছে। একই নির্দেশ আবাসন কমিটির সম্পাদকেরও।’’ আবাসন কমিটির তরফ থেকে অবশ্য এ দিন কেউ কথা বলতে চাননি।

ছ’বছর আগে স্টিফেন কোর্ট অগ্নিকাণ্ডের পর শহরের বহুতলের অগ্নিসুরক্ষা খতিয়ে দেখতে কলকাতা পুরসভা, দমকল, পুলিশকে কমিটি গড়া হয়েছিল। কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন আবাসন পরিদর্শন করে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতেন। দমকল ও পুলিশ সূত্রে খবর, যে সব আবাসনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকত না, তাদের পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠানো হত। সময়সীমাও নির্ধারণ করা হত। সেই মতো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না করা হলে আবাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হত। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হত। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৪ পর্যন্ত প্রতি মাসে অগ্নিবিধি নিয়ে রিভিউ বৈঠকও হত। তাতে সভাপতিত্ব করছেন অতিরিক্ত কমিশনার পদের এক শীর্ষ কর্তা। এখনও সেই বৈঠক হয় বলে দাবি করেছে দমকলের একটি সূত্র।

কিন্তু অগ্নিবিধির এই কড়াকড়ি যে খাস কলকাতার সীমা পেরোলেই বদলে যায় তা দেখিয়ে দিয়েছে লেকটাউনের ওই আবাসন। প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, এই এলাকায় নিত্যনতুন বহুতল গজিয়ে উঠছে। তাতে লোকজন বাস করলেও অগ্নিসুরক্ষা বিধি মানা হচ্ছে না। এ দিন যেমন লেকটাউনের ওই আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, সাততলা বাড়িটিতে ৪৯টি ফ্ল্যাট রয়েছে। লিফটের পাশে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (আদতে এক ধরনের রাসায়নিকের সিলিন্ডার যা দিয়ে ছোট মাপের আগুন নেভানো যায়) রয়েছে। কিন্তু দমকল সূত্রের বক্তব্য, এই ধরনের বহুতলে জলের পাইপ, হাইড্র্যান্ট রাখতে হয়। নিরাপত্তারক্ষী রাখলে তাঁকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দিতে হবে। লেক টাউনের ওই আবাসনে নিরাপত্তারক্ষীদের তা ছিল কি?

এ দিন নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, শুক্রবার রাতে তাঁরা এতটাই হতচকিত হয়ে পড়েন যে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। তা ছাড়া, এমন অগ্নিকাণ্ড হলে দমকল আসার আগে কীভাবে সামাল দিতে হয় সে ব্যাপারে তাঁদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই বলেই তাঁরা জানান। তাঁদের কাজ, আবাসনে কে ঢুকলেন, গাড়ি পার্কিং ঠিক মতো হল কি না সে দিকে নজর রাখা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fire brigade Double stored building Fire incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE