Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩

প্রৌঢ়ার মৃত্যুতে সন্দেহ প্রোমোটার চক্রের দিকেই

ভবানীপুরে যে প্রৌঢ়ার মৃত্যু ঘিরে সন্দেহ দানা বেঁধেছে, সেই সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বকুলবাগান রোডের ওই বাড়ির ভাড়াটে।

ভবানীপুরের সেই বাড়িতে চলছে তদন্ত। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ভবানীপুরের সেই বাড়িতে চলছে তদন্ত। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০০:২৭
Share: Save:

ভবানীপুরে যে প্রৌঢ়ার মৃত্যু ঘিরে সন্দেহ দানা বেঁধেছে, সেই সুনন্দা গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বকুলবাগান রোডের ওই বাড়ির ভাড়াটে। বাড়িটি বছর চারেক আগে এক প্রোমোটার কিনে নেন বলে পুলিশ জেনেছে। কিন্তু সুনন্দা দেবীকে ওই প্রোমোটার ওঠাতে পারেননি। সুনন্দা দেবীর স্বামী বুদ্ধদেব গঙ্গোপাধ্যায় ওই বাড়িতে নিজের স্বত্ব বছর দুয়েক আগেই ছেড়ে দিয়ে চলে যান। এই অবস্থায় ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যুর পিছনে প্রোমোটার চক্রের হাত থাকতে পারে, এই সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে।

Advertisement

সোমবার সকালে ওই প্রৌঢ়ার মৃতদেহ ওই বাড়ির একটি নালা থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করলেও রাতেই সেটি রূপান্তরিত হয় খুনের মামলায়। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়ো মোটো) মামলাটি রুজু করে।

যে প্রোমোটার ওই বাড়িটি কিনেছিলেন, সেই হিমাংশু শাহকে সোমবার রাত থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, তিনি দাবি করেছেন, দু’বছর আগের একটি ঘটনার পর তিনি আর ওই বাড়ির ধারকাছ
দিয়ে যাননি।

কী হয়েছিল তখন? সুনন্দা দেবী নিজের স্বামী ও তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন এবং পুলিশ মামলা রুজু করে চার্জশিটও দেয়। পরে অবশ্য কলকাতা হাইকোর্ট ওই মামলার বিচার শুরুর উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, ওই প্রোমোটার দাবি করেছেন, তাঁর তিন-চারটি বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে, বকুলবাগান রোডের ওই বাড়িকে তিনি খরচের খাতায় ধরে রেখেছেন। পুলিশ জেনেছে, দু’বছর আগে বুদ্ধদেব গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর স্ত্রীকে একটি মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে করে ভর্তি করান আর ওই ঘটনাতেই দু’জনের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনেন সুনন্দা দেবী।

Advertisement

কিন্তু কয়েক কোটি টাকা দিয়ে কেনা ওই বাড়ি প্রোমোটার হিমাংশুবাবু সত্যিই খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

সূত্রের খবর, মাস পাঁচেক আগে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক রেস্তোরাঁর মালিক এক ব্যক্তি সুনন্দাদেবী এবং আর এক ভাড়াটে অনুরাধা চক্রবর্তী সান্যালকে ৮০ লক্ষ টাকা নিয়ে ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য শাসানি দিয়েছিলেন।

পুলিশ খুনের মামলা রুজু করলেও ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে তদন্তকারীরা ধোঁয়াশায়। সেই রিপোর্ট বলছে, খুন করে নালায় ফেলে দেওয়া হয়নি। বরং নালায় পড়ার পরেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। ওই প্রৌঢ়ার পাকস্থলীতে জল এবং বালি ও মাটি পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ, নালায় যখন তিনি পড়েছিলেন, তখন জীবিতই ছিলেন সুনন্দাদেবী। পাশাপাশি, ওই প্রৌঢ়ার মাথার ডান দিকে ও ডান হাতে দুটি ক্ষত রয়েছে। কেউ সুনন্দা দেবীকে মারধর করে নালায় ফেলে দিয়েছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে। তবে তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, পা পিছলে পড়ে গেলেও ওই ধরনের ক্ষত হতে পারে।

প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার, অল্প জলে ডুবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অথচ ওই ওই নালার পাশ দিয়েই তিনি শৌচাগারে যেতেন। তা হলে রবিবার রাতেই কেন তিনি পড়ে যাবেন সেই প্রশ্ন উঠেছে।

সুনন্দাদেবীর বাড়িতে পাওয়া মোবাইলে শেষ ফোন আসে রবিবার রাত ৯টা নাগাদ। রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের একটি দল মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যায়। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, ওই প্রৌঢ়ার সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যদি কোনও ধস্তাধস্তি হয়ে থাকে, তবে তার চিহ্ন থাকতে পারে। শ্বাসরোধ করে ফেলা যদি হয়ে থাকে তা হলে নাক মুখ থেকে রক্ত-লালা বেরনোর কথা। সন্দেহজনক আঙুলের ছাপ বা কারও পোশাকের চিহ্ন আছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখবে ওই দল।

ওই বাড়ির আর এক ভাড়াটে, অনুরাধাদেবীর ছেলে রাজা সান্যাল বলেন, ‘‘আমাদের তুলতে স্থানীয় গুন্ডা মস্তান থেকে পুলিশের একাংশ, প্রায় সবাই উঠেপড়ে লেগেছিল।’’

পুলিশ জানায়, সুনন্দাদেবীর স্বামী গুয়াহাটি ও ছেলে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.