Advertisement
০১ মে ২০২৪

মেসির দেশের মেয়ের স্বপ্নভঙ্গ কলকাতায়

আর্জেন্টিনার উত্তর-পুব কোণে কোরিয়েন্তেস শহরের কাছেই প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের সীমান্ত। কিন্তু চার বছর আগে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ দেখতে যেতে পারেননি রোক্সানা।

হতাশ: আনন্দবাজারের দফতরে খেলা দেখছেন রোক্সানা এবং তাঁর স্বামী চিরঞ্জীব ঠাকুর। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

হতাশ: আনন্দবাজারের দফতরে খেলা দেখছেন রোক্সানা এবং তাঁর স্বামী চিরঞ্জীব ঠাকুর। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০৬:৪০
Share: Save:

পেনাল্টির গেরোয় মেসিদের বিশ্বকাপ-স্বপ্ন তখন মুড়িয়ে যাচ্ছে! নুড্‌লসের অসমাপ্ত বাটিটা সরিয়ে রাখলেন রোক্সানা আকোস্তা সোসা। দেশোয়ালি দি মারিয়ার শটে সাময়িক মুখরক্ষায় বাকিটুকু গলা দিয়ে নামল।

শনিবার সন্ধ্যায় এমন ঘটবে জানা কথা! এই গ্রহের প্রায় সুদূরতম প্রান্তে আর্জেন্টিনার উত্থানপতনের সঙ্গেই কলকাতার আকাশ মেঘরোদের খেলা দেখল। বিশ্ব ফুটবলে অর্বাচীন দেশের অজস্র নীলসাদাপ্রেমীর পেট গুলিয়ে হাতপা ঠান্ডা! অধুনা বেহালা চৌরাস্তার বাসিন্দা, ৩২ বছরের রোক্সানাকে তবু এই ভিড়ে আলাদা করে চিনতেই হবে। ফ্রান্সের চার নম্বর গোলের পরে আর্জেন্টিনার কোরিয়েন্তেস শহরের মেয়ের পিঠে তাঁর বর চিরঞ্জীব ঠাকুর সহমর্মী হাত রাখলেন।

আর্জেন্টিনার উত্তর-পুব কোণে কোরিয়েন্তেস শহরের কাছেই প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের সীমান্ত। কিন্তু চার বছর আগে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ দেখতে যেতে পারেননি রোক্সানা। তখন তাঁকে হাতছানি দিচ্ছে অন্য রূপকথা। কলকাতায় হবু বর চিরঞ্জীবের কাছে আসবেন বলে টাকা জমাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার তরুণী। তাঁর বাড়ি থেকে কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে মেসির শহর রোসারিয়োয় রোক্সানার পিসির বাড়ি।

গত বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার দুঃখের দিনে মা-বাবা-দাদার পাশে কেঁদেছিলেন ফুটবল-পাগল মেয়ে। এ বার মেসি লেখা জার্সি গায়ে শ্বশুরবাড়ির দেশে নাকছাবি পরা নাকের পাটা হাল্কা ফুলে উঠল। হাত মুঠো করে কোনও মতে কষ্টটা গিলে নিলেন। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচের পরেই দেশ থেকে পিসিরা রোক্সানাকে ফোন করেন, ‘হচ্ছেটা কী! এটা আমাদের দেশের ফুটবল?’ তবু নাইজিরিয়া ম্যাচে মেসির জাদু স্বপ্ন দেখাল। খেলা দেখার নেমন্তন্নে আনন্দবাজারের দফতরে আসার সময়ে ম্যান্টন এলাকায় দেশের জাতীয় পতাকা দেখে তাঁর চোখমুখ ঝলমল করছিল। মাঝেরহাট সেতুর গায়ে নীল-সাদা রং দেখেও এক গাল হাসি! ‘‘জানি তো চিফ মিনিস্টার ম্যাডাম-এর প্রিয় রং এটাই!’’— আড়ষ্ট ইংরেজিতে বলেন আর্জেন্টিনার মেয়ে।

‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে রোক্সানার পরিচয় অবশ্য কোরিয়েন্তেসে মায়ের যোগ শেখানোর স্কুলে। ফেসবুকে ভারত-বিষয়ক পেজে লাইক-এর সুবাদেই নিউ টাউনের তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী চিরঞ্জীবের সঙ্গে চোখাচোখি। বছর তিনেকের চ্যাট-ফোনে হার মানল সাত সাগরের দুরত্ব। বিয়ে হল ২০১৫-য়। বেহালায় বৌমা রোক্সানা এখন জিরেবাটা দিয়ে মাছের ঝোল রাঁধছেন। এ দেশে চাকরির ছাড়পত্রও খুঁজছেন তিনি। শহরের স্প্যানিশবিদ দিব্যজ্যোতি মুখোপাধ্যায়ের ডাকে বইমেলায় আর্জেন্টিনা-বিষয়ক বক্তৃতা দিয়েছিলেন রোক্সানা। স্পেনের ‘ভামোস’, কিন্তু আর্জেন্টিনার উচ্চারণে ‘বামোস’ বোঝালেন তিনি। জন্মভূমির বিশ্বকাপ রূপকথা হারিয়ে যাওয়ার কষ্টের সাক্ষী থাকল এই কলকাতাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football Argentina Football Fan Lionel Messi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE