Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বদ্ধ সাবওয়েতে আচমকা ধুলোর ঝড়, আতঙ্ক হাওড়ায়

বেলা তখন প্রায় দেড়টা। ভিড়ে ঠাসা সাবওয়ের ভিতরে আচমকাই শোঁ শোঁ শব্দ। তার পরের মুহূর্তেই গোটা সাবওয়ে ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ার মতো ধুলোর ঝড়ে। অবস্থা এমনই যে, মাত্র এক ফুট দূরের মানুষকেও ঠাহর করা যায়নি। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়েছে। প্রায় দমবন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। প্রাণ বাঁচাতে যে দিকে পেরেছেন, ছুটতে শুরু করেন আতঙ্কিত যাত্রীরা। বাইরে যাওয়ার পথ খুঁজতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন কয়েক জন।

ধুলোয় ঢেকেছে হাওড়া স্টেশনের সাবওয়ে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ধুলোয় ঢেকেছে হাওড়া স্টেশনের সাবওয়ে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০১:১৫
Share: Save:

বেলা তখন প্রায় দেড়টা।

ভিড়ে ঠাসা সাবওয়ের ভিতরে আচমকাই শোঁ শোঁ শব্দ। তার পরের মুহূর্তেই গোটা সাবওয়ে ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ার মতো ধুলোর ঝড়ে। অবস্থা এমনই যে, মাত্র এক ফুট দূরের মানুষকেও ঠাহর করা যায়নি। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়েছে। প্রায় দমবন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। প্রাণ বাঁচাতে যে দিকে পেরেছেন, ছুটতে শুরু করেন আতঙ্কিত যাত্রীরা। বাইরে যাওয়ার পথ খুঁজতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছেন কয়েক জন।

শুক্রবার দুপুরে এমনই ঘটনা ঘটেছে হাওড়া স্টেশন লাগোয়া ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন সাবওয়েতে। এই ঘটনার জন্য রেলের পক্ষ থেকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে সাবওয়ের রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র দিকে। রেলের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে হাওয়া ঢোকানোর যন্ত্র বা ব্লোয়ার বন্ধ থাকার জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। ব্লোয়ারটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করতে গিয়ে জমে থাকা সব ধুলো বেরিয়ে এসেছে।

কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে রেলের এই অভিযোগ মেনেও নেওয়া হয়েছে। এ দিন সংস্থার পক্ষ থেকে হাওড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক্যাল) অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মূলত রাতে সাবওয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এই পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এ দিন একটি ঠিকাদার সংস্থা পরীক্ষা করতে গিয়ে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে পরিস্থিতি বুঝে সঙ্গে সঙ্গে ব্লোয়ার বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’

পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ঘটনার সময়ে তিনটি লোকাল ট্রেন স্টেশনে পৌঁছেছিল। ফলে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে শয়ে শয়ে যাত্রী কলকাতা ও হাওড়ার দিকের বাস ধরার জন্য সাবওয়েতে নেমেছিলেন। এই সময়েই ধুলোর ঝড় শুরু হয়। অনেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রচণ্ড আতঙ্কে তাঁরা দৌড়োদৌড়ি শুরু করেন। বন্ধ হয়ে যায় সাবওয়েতে থাকা পূর্ব রেলের শহরতলির টিকিট কাউন্টার।

এ দিন দুপুরে হাওড়া সাবওয়েতে গিয়ে দেখা যায়, তখনও হাল্কা ধুলোর আস্তরণ ছড়িয়ে আছে চারপাশে। সাবওয়ের ভিতরে থাকা হকারেরা ধুলোয় ঢেকে যাওয়া মালপত্র পরিষ্কার করছেন। কাগজ বিক্রেতারা ব্যস্ত কাগজের উপরে পড়া ধুলোর স্তর পরিষ্কার করতে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় নামে এক কাগজ বিক্রেতা বলেন, ‘‘হঠাৎ শোঁ শোঁ করে আওয়াজ শুনলাম। এর পরেই কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেল চারপাশ। মিনিট দশেক কিছু দেখতে পাইনি। সকলে বলেন, সাবওয়েতে আগুন লেগেছে। সেই শুনে সব ফেলে দৌড় লাগালাম।’’

একই অভিজ্ঞতা ট্রেন থেকে নেমে কলকাতা বাসস্ট্যান্ডের দিকে বাস ধরতে যাওয়া শ্রেয়সী মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘সাবওয়েতে নামার সঙ্গে সঙ্গে আচমকা কালো ধোঁয়ার মতো কিছু চারদিক ঢেকে ফেলল। কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কোনও রকমে সিঁড়ির কাছ পর্যন্ত এসে আবার স্টেশনে ফিরি।’’

পূর্ব রেলের হাওড়া স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সাবওয়ের অধিকাংশ ব্লোয়ার খারাপ। বাতাস না থাকায় যাত্রীদের স্বাভাবিক ভাবেই খুব সমস্যা হয়। দিনের বেলা সেই ব্লোয়ার পরীক্ষা করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে।’’

কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাবওয়েতে মোট আটটি ব্লোয়ার আছে। যার মধ্যে চারটি খারাপ। গত এক বছর ধরে সেগুলি মেরামত করা হয়নি। নতুন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার উদ্যোগী হয়ে সেই চেষ্টা করতেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে আর দিনে নয়, রাতেই ব্লোয়ার পরীক্ষা করা হবে বলে কেএমডিএ সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE