Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2021

Durga Puja: প্রতিমার চক্ষুদানে বাধা প্রবীণদের চোখের সমস্যা

কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘কুমোরটুলির চারশো শিল্পীদের মধ্যে বেশির ভাগই চোখের সমস্যায় ভুগছেন। এর জন্য আমাদের সমিতির অফিসে প্রতি সপ্তাহে চোখের ডাক্তার আসেন।

 তুলির টান: চক্ষুদানে বহু প্রবীণ শিল্পীরই ভরসা নবীনেরা। ফাইল চিত্র

তুলির টান: চক্ষুদানে বহু প্রবীণ শিল্পীরই ভরসা নবীনেরা। ফাইল চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

শিল্পীর তুলির টানে জেগে ওঠে প্রতিমার ত্রিনয়ন। বলা যায়, দুর্গাপূজার সূচনাই হয় এই চক্ষুদানের মাধ্যমে। কিন্তু চোখ যাঁরা আঁকবেন, কুমোরটুলির সেই প্রবীণ শিল্পীদের অধিকাংশ বয়সের ভারে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তাই দেবীর চোখ আঁকতে অন্যের উপর ভরসা করতে হচ্ছে তাঁদের।

কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পাল বলেন, ‘‘কুমোরটুলির চারশো শিল্পীদের মধ্যে বেশির ভাগই চোখের সমস্যায় ভুগছেন। এর জন্য আমাদের সমিতির অফিসে প্রতি সপ্তাহে চোখের ডাক্তার আসেন। ওই চিকিৎসকের কাছে শিল্পীরা চিকিৎসা করান। চোখের সমস্যার জন্য প্রতিমার চক্ষুদানে অনেক শিল্পীকেই অন্যের উপর ভরসা করতে হয়।’’ কুমোরটুলির প্রবীণ শিল্পী নিমাই পালের কথায়, ‘‘প্রতিমার চোখই সবার আগে নজর কাড়ে। অত্যন্ত নিপুণভাবে মা দুর্গার চোখ আঁকতে হয়। কিন্তু নিজেদের চোখের সমস্যার জন্য কুমোরটুলির চার ভাগের তিন ভাগ শিল্পী ভাড়া করে অন্যকে দিয়ে চোখ আঁকান। মাত্র এক ভাগ শিল্পী নিজে তুলি ধরেন।’’

রীতি অনুযায়ী, মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পরে সকালে হতো প্রতিমার চক্ষুদান পর্ব। কিন্তু দেবীপক্ষের শুরু মহালয়ার দিনে। তাই অতীতে অনেক জমিদার বাড়িতে এই দিনটিকেই শুভ মেনে প্রতিমার চক্ষুদান করা হতো। তবে ধর্ম মতে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হতো মহাসপ্তমীতে। কিন্তু এখন সেই নিয়মে বদল এসেছে। কুমোরটুলি পাড়ায় বেশির ভাগ প্রতিমার কেবল চোখ আঁকার কাজটা করেন তরুণ শিল্পী সুমন কর্মকার। সুমন বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল যখন শিল্পীরা অল্প সংখ্যায় প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন প্রতিমা তৈরির সংখ্যাও বেড়েছে। তা ছাড়া, অনেক পুজোর উদ্বোধন এখন মহালয়ার আগেই হয়ে যায়। তাই নিয়ম মেনে মহালয়ায় চক্ষুদান করা সম্ভব হয় না। অনেক আগে থেকে তুলি ধরতে হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকেই শিল্পীরা চক্ষুদানের কাজ শুরু করেন।’’ কুমোরটুলির শিল্পী মিন্টু পাল বলছেন, ‘‘চোখের সমস্যার জন্য আমি নিজে একটানা চোখ আঁকতে পারিনা। আমার ভাইপো, অন্যান্য নবীন শিল্পী আমাকে সহায়তা করেন।’’

দুর্গাপুজোয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আচার হলে চক্ষুদান। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী সপ্তমীর সকালে শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে দেবীকে কাজল পরানো হয়। প্রথমে ত্রিনয়ন বা ঊর্ধ্বনয়ন, তার পরে বাম চক্ষু এবং শেষে ডান চক্ষু মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আঁকা হয়। চক্ষুদানের পরই প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পর্দায় ঢাকা ঘেরাটোপে পূজারী এবং তান্ত্রিকদের উপস্থিতিতে লেলিহান মুদ্রায় মোট ১০৮ বার বীজমন্ত্র জপ করা হয়। মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী। শিল্পী বাবু পাল জানাচ্ছেন, মৃৎশিল্পীরা এক নাগাড়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করায় সবার আগে চোখে ভীষণ চাপ পড়ে। যার জন্য শিল্পীদের বয়স পঞ্চাশ বছর পেরোলেই চোখের নানা সমস্যা হচ্ছে। শিল্পীদের অল্প বয়সেই ছানি পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শীঘ্রই এমন অসুস্থ প্রবীণ শিল্পীদের ছানি অস্ত্রোপচার শিবিরের ব্যবস্থা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2021 durga puja kumortuli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE