দুর্ঘটনার পরে সেই অটো। (ইনসেটে) হরিদাস সাহা।
পুজোর মরসুমে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালের বদলে পুলিশকে পথে নেমে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করার (ম্যানুয়াল) পরামর্শ দিয়েছেন। মঙ্গলবার তা না মানার প্রথম খেসারত দিতে হল কলকাতা পুলিশকে। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল খুলতেই দ্রুত আসা অটোর ধাক্কায় এক বৃদ্ধের প্রাণ হারানোর অভিযোগ তুললেন মৃতের পরিবার। একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিল, অটোর বেপরোয়া ভাব এখনও যে কে সে-ই। পুলিশের বক্তব্য, সিগন্যাল খুলতেই হুড়মুড়িয়ে চলে আসা অটোর ধাক্কাতেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধের।
মঙ্গলবার দুপুরে নারকেলডাঙা থানা এলাকার মানিকতলা মেন রোড ও রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের মোড়ে এই দুর্ঘটনার পরে জনতা অটোচালককে মারধর করেন। ভাঙচুর চালান অটোটিতেও। পরে পুলিশ নরেশ সাহা নামে ওই চালককে গ্রেফতার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, এ দিন দুপুর সওয়া তিনটে নাগাদ ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যাবেন বলে রাস্তা পার হচ্ছিলেন বছর বিরাশির বৃদ্ধ হরিদাস সাহা। সেই সময়ে সিগন্যাল লাল দেখে রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে পৌঁছতেই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল সবুজ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসা অটোর ধাক্কায় টাল সামলাতে পারেননি হরিদাসবাবু। রাস্তায় পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান তিনি। আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরেই পথচলতি লোকজন অটোটি ভাঙচুর করেন। মারধর করা হয় চালককেও। এর জেরে সাময়িক ভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ঘটনাস্থলে যায় মানিকতলা থানার পুলিশ। পৌঁছয় উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ডের পুলিশও।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট ও অরবিন্দ সরণির মোড়ে একটি অটো সিগন্যাল ভেঙে দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে বাসের গায়ে ধাক্কা মারলে মৃত্যু হয় বছর আঠেরোর তরুণীর। মঙ্গলবার ফের একই এলাকায় অটোর বেপরোয়া গতিতে আর এক জনের প্রাণ হারানোর ঘটনায় অটোচালকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ধরে রাখতে পারেননি স্থানীয়েরা।
এ দিন সন্ধ্যায় হরিদাসবাবুর জামাই পার্থ দত্ত জানান, অটোর গতি এত বেশি ছিল যে হরিদাসবাবুর বুকে, মাথায় গুরুতর চোট লাগে। পড়ে গিয়ে এতটাই রক্তক্ষরণ হয়েছে যে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। চালকের শাস্তি চেয়েছে হরিদাসবাবুর পরিবার। পাশাপাশি পরিবারের আক্ষেপ, হঠাৎ করে সিগন্যাল সবুজ না হয়ে গেলে হয়তো বেঁচে যেতেন হরিদাসবাবু।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সমস্যাটি চিহ্নিত করে বলেছিলেন, উৎসব মুখর শহরে মানুষের ভিড় বেশি। এখন রাস্তা পারাপারের সময়ে হঠাৎ সিগন্যাল পরিবর্তন হয়ে গেলে গাড়ি চলে আসবে ও তাতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়বে। তার চেয়ে পুলিশকর্মীরা পরিস্থিতি বুঝে যান নিয়ন্ত্রণ করলে অনেক দুর্ঘটনাই এড়ানো যাবে। তবু তা হয়নি। তবে লালবাজারের একাংশের বক্তব্য, এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালের বদলে ভিড় দেখে রাস্তায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা এড়ানো সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy