পুর-নির্বাচনের মনোনয়নপত্রে সই করছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রশ্ন: ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ থেকে শুরু করে জঞ্জাল বোঝাই গাড়ির ট্রিপ চুরি, মিড-ডে মিলের কয়েক হাজার কুইন্টাল চাল ‘হাপিস’, কসবায় জলা জমির বেআইনি মিউটেশন এবং সর্বোপরি সরকারের ক্ষতি করে লেক মল লিজ চুক্তি ভাঙা পুর-নির্বাচনের বাজারে এই সমস্ত অস্বস্তির মোকাবিলা করছেন কী ভাবে?
মেয়র: লেক মল ছাড়া বাকিগুলোর ক্ষেত্রে তো আমরাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। পুরসভার নিজস্ব অডিট দফতরকে দিয়ে অডিটও করানো হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে মেয়র পারিষদদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গড়ে তদন্ত করা হয়েছে। অডিট এবং তদন্ত-রিপোর্টের পরে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটের আগে এ নিয়ে কোনও অভিযোগ উঠলে মানুষকে সে সবই বলব। রাখঢাকের তো কোনও ব্যাপার নেই।
প্রশ্ন: নিয়ম ভেঙে লেক মলের চুক্তি দু’ভাগে ভাঙার ফলে ২৪ কোটি টাকার স্ট্যাম্প ডিউটি হারাচ্ছে রাজ্য। এ নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে শুক্রবার হাইকোর্ট সব পক্ষের হলফনামা চেয়েছে। এমনকী প্রথম ৩০ বছরের চুক্তি রেজিস্ট্রি করেছে অর্থ দফতর। দ্বিতীয় চুক্তি এখনও আটকে রাখা হয়েছে। এটা কি অনিয়ম বা দুর্নীতির ইঙ্গিত নয়?
মেয়র: আমি আবার বলছি, আমাকে কেউ কিছু বলেনি। কোথায় কী আটকে আছে জানি না। তবে স্বার্থান্বেষী এক শ্রেণির প্রচারমাধ্যম এ ব্যাপারে সক্রিয়, এটা জানি।
প্রশ্ন: ২০১০ সালের পুরভোটের প্রচারে বলেছিলেন, কলকাতাবাসীকে ২৪ ঘণ্টা জল দেব। কী হল সেই প্রতিশ্রুতির? শহরবাসী তো এখন সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টার বেশি জল পান না। তা-ও কয়েকটি ওয়ার্ড এলাকায় এখনও পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছয়নি। গভীর নলকূপের উপর ভরসা করতে হয়।
মেয়র: শহরবাসীকে ২৪ ঘণ্টা দেওয়ার মতো পরিস্রুত পানীয় জল রয়েছে, কিন্তু তা সরবরাহের মতো পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। দিনভর ওই জল সরবরাহ করতে হলে জলের চাপ বেশি থাকা দরকার। এর জন্য সর্বক্ষণ বুস্টার পাম্পিং স্টেশনগুলো চালু রাখতে হবে। আগেকার এবং আমাদের আমল মিলিয়ে গোটা পনেরো বুস্টার পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। আরও প্রয়োজন। সব ব্যবস্থা হলে ওই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারব। যদিও টালা এলাকায় কয়েকটি ওয়ার্ডে ১৬-১৮ ঘণ্টা জল পাওয়া যায়। টালা-পলতা এবং ধাপা প্রকল্প থেকে ২৪ ঘণ্টা জল সরবরাহের ব্যবস্থা হয়েছে। গত ৫ বছরে আমরা ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৫ কোটি গ্যালন জলের ব্যবস্থা করেছি। কলকাতার জনসংখ্যার নিরিখে বাসিন্দা পিছু ৪০ গ্যালন করে জল দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। তবে ২৪ ঘণ্টা না হলেও জল দেওয়ার সময় আরও বাড়ানো হবে।
প্রশ্ন: গত পুরভোটে দলের ইস্তাহারে লেখা হয়েছিল, মাটির নীচে নিকাশির উন্নয়নে নিম্ন মানের জিআরপি (গ্লাস রিইনফোর্সমেন্ট পলিমার) লাইনার কেনায় ‘দুর্নীতি’ করেছে বামফ্রন্টের বোর্ড। ক্ষমতায় এসে আপনারাও সেই পাইপই বসালেন কেন?
মেয়র: এটা ঠিক, তখন আমরা জিআরপি লাইনার কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলাম। শহরের উন্নয়নের কথা ভেবেই পরবর্তী ক্ষেত্রে জিআরপি লাইনার বসাতে হয়েছে। এর কারণেই এখন কলকাতায় আর জল জমে থাকে না। পাইপ কেনাতেও স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন: শহরবাসীর মন কাড়তেই কি ভোটের আগে বিল্ডিং রুলে নানা ছাড়ের কথা ঘোষণা করলেন?
মেয়র: এ সব নেতিবাচক প্রশ্নে কিছু আসে যায় না। তবে বিল্ডিং রুলে কিছু ছাড়ে শহরের মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের অনেক উপকার হবে। বাড়ির মালিক তো বটেই, পুরসভার নতুন আইনে ভাড়াটে-বাড়িওয়ালারাও বিশেষ ছাড় পাবেন। ভোটের দিকে লক্ষ রেখে কিন্তু এ সব করা হয়নি। মানুষের কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী আমাদের এ নিয়ে উদ্যোগী হতে বলেছেন। যা আগের বাম বোর্ড কোনও দিন ভাবেওনি।
প্রশ্ন: বকেয়া সম্পত্তিকরের সুদ মকুবের জন্য গত ১০-১১ বছরে তিন বার ওয়েভার স্কিম করেছে পুর-প্রশাসন। তা সত্ত্বেও অনেক করদাতাই সেই সুযোগ নেননি। অথচ ফের বকেয়া করদাতার সুদ মকুবের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমোদন নিয়েছে পুর-বোর্ড। মেয়র পরিষদের অনুমতি সাপেক্ষে সুদে ৫০ শতাংশ ছাড় মিলবে। বিরোধীদের অভিযোগ, ভেট দিয়ে ভোট নিতে চায় তৃণমূল। এ নিয়ে আপনার জবাব কী?
মেয়র: কমল বসু তৃণমূলের লোক ছিলেন না। তাঁর আমলেও সুদ-জরিমানা মকুব করা হয়েছিল। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের তৃণমূল পুর-বোর্ডেও বাম সরকারের অনুমতি নিয়েই সুদ মকুব করা হয়। এ বার আমাদের সরকারের নিয়ম মেনেই তা করেছি। অনেক করদাতার করের টাকা বকেয়া পড়ে আছে। আদায়ের জন্য অনেক পদ্ধতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে।
প্রশ্ন: জরিমানা নিয়ে বেআইনি বাড়ি আইনি করতে পুর-আইনের সংশোধন করলেন। বেআইনি বাড়ি আইনি করার তাগিদ হল কেন? এতে প্রোমোটার-রাজ বাড়ার সম্ভাবনা থাকছে না কি?
মেয়র: কলকাতা পুরসভার (বিল্ডিং) আইনের ৪০১ ধারাতেই ওই ধরনের কথা বলা ছিল। ৩০ বছর ধরে জরিমানা (রিটেনশন) নিয়ে তা চলছিল। কেউই এটা আইন করে করার কথা ভাবেনি। এ বার রাজ্য সরকারের কাছে তা আইনি করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। বিধানসভায় তা পাশ হওয়ায় আইন হয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু পুরসভায় নানা অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ শহরের বেশ কিছু বাসিন্দা। এর পরেও মানুষের সমর্থন পাবেন, এই আশা করছেন কোন ভরসায়?
মেয়র: গত পাঁচ বছরে যা কাজ করেছি, সেই নিরিখে। শহরের ৯৫ ভাগ মানুষের কাছে জল পৌঁছে দিয়েছি। ১৪১টি ওয়ার্ডে ডাক্তার-সহ স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলেছি। কলকাতা জঞ্জালমুক্ত করতে চলেছি। গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যবৃদ্ধি করেছি। শহরে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছি। বড় রাস্তায় ম্যাস্টিক করেছি। ফুটপাথ পেভারব্লকে ঢেকেছি। পার্কের শ্রীবৃদ্ধি করেছি। এ সব দেখছেন শহরবাসী।
প্রশ্ন: তার পরেও ভোটের মুখে বিরোধী দলের একাধিক কাউন্সিলরকে দল ভাঙিয়ে আনতে হচ্ছে?
মেয়র: যাঁরা এসেছেন, প্রত্যেকেই নিজের দলের প্রতি বিরক্ত হয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আমরা নিমিত্ত মাত্র।
প্রশ্ন: গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে বিজেপি কলকাতার ২৬টি ওয়ার্ডে প্রথম ছিল। এ বারের ভোটে আপনাদের মূল প্রতিপক্ষ কোন দল?
মেয়র: সে দিন আর নেই বিজেপির। আগের ১০ শতাংশ ভোটও পাবে না ওরা। যত দিন যাচ্ছে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। বিজেপি এবং বাম, দু’দলই ২ এবং ৩-এর লড়াইয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত।
কলকাতার ভোটার নন, রূপার লড়া অনিশ্চিত
নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কলকাতা পুর-নির্বাচনে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিজেপি। তিনি দলের পক্ষে ‘মেয়র-মুখ’ কি না, জল্পনা চলছে তা নিয়েও। অথচ, কলকাতার ভোটার-তালিকায় রূপার নাম নেই বলে জানা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর কলকাতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনাও সুদূর। বিজেপি সূত্রে খবর, অভিনেত্রী রূপা এখন থাকেন সোনারপুরে। কলকাতায় তাঁর পুরনো ঠিকানা থাকলেও এখন এ শহরের ভোটার তিনি নন। এই অবস্থায় দলের তরফে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু আপাতত কোনও সুরাহা হয়নি। তাই দক্ষিণ কলকাতার ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডে রূপার বিজেপি প্রার্থী হওয়া ঘোর অনিশ্চয়তায় ঝুলছে। দলের তরফে রূপাকে বিষয়টি জানিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে খবর। রূপা বলেন, “ভোটার-তালিকায় কারচুপি করে আমার ২০ বছরের পুরনো ঠিকানা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এ শহরের মানুষের থেকে আমাকে দূরে রাখা যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy