Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রদর্শনীতে বন্দিদের ছবি বিকোল ৭০ হাজারে 

কোনও ছবিতে ফুটে উঠেছে পুরনো কলকাতায় ধোঁয়া উড়িয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার দৃশ্য।

প্রদর্শনীতে বিক্রি হয়েছে বন্দিদের এই ছবিগুলিই। নিজস্ব চিত্র

প্রদর্শনীতে বিক্রি হয়েছে বন্দিদের এই ছবিগুলিই। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

কোনও ছবিতে ফুটে উঠেছে পুরনো কলকাতায় ধোঁয়া উড়িয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার দৃশ্য। কেউ আবার এঁকেছেন কালীঘাট মন্দির চত্বর। খিদিরপুর বন্দর, কলকাতার ট্রামরাস্তার দৃশ্যও ফুটে উঠেছে কারও কারও রং-তুলিতে। প্রদর্শনীতে বন্দিদের আঁকা এমন ১০টি ছবি জনসমক্ষে আসতেই বিকিয়ে গেল নিমেষে। যার মিলিত অর্থমূল্য ৭০ হাজার টাকা।

গত ১৯ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর ‘বিশ্ব হেরিটেজ সপ্তাহ’ উপলক্ষে ভারতীয় জাদুঘরে তিন দিনের জন্য ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘ঐতিহ্য’ নামের ওই প্রদর্শনীতে সাধারণ মানুষের সামনে আসে বন্দিদের আঁকা ৩৪টি ছবি। যার মধ্যে হু হু করে বিকিয়ে গিয়েছে ১০টি ছবি! প্রতিটির দাম প্রায় সাত হাজার টাকা।

সারদা-মামলায় অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের বর্তমান ঠিকানা দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। ওই সংশোধনাগারে যাওয়ার পরে পরেই ক্যানভাস রাঙাতে শুরু করেছিলেন তিনি। দেবযানীর আঁকা ধোঁয়া-ওঠা ট্রেনের ছবিটি ছিল প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ। উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় সেটি।

কলকাতার ঐতিহ্য ট্রামের সামনে দিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছেন এক ব্যক্তি— এমন মুহূর্তকেই রং-তুলিতে জীবন্ত করে তুলেছিলেন মাদক পাচার মামলায় অভিযুক্ত, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা লাল্টু ঘোষ। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছিল তাঁর সেই ছবি, বিকিয়েও যায়। মাঝেমধ্যেই মুক্তি পাওয়া এবং ফের গ্রেফতার হওয়া লাল্টু যে এত সুন্দর ছবি আঁকতে পারেন, তা বিশ্বাস করতে পারছে না তাঁর পরিবারও। এক কারা কর্তা বলছেন, ‘‘লাল্টুর মেয়েরা বলছে যে ওরা বাবাকে কখনও ছবি আঁকতে দেখেনি। প্রদর্শনীতেই বাবার আঁকা ছবি সামনাসামনি দেখতে পেল ওরা।’’

দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের দেওয়ালে চিত্রিত আছে বাংলা এবং ইংরেজি অক্ষর পরিচয় এবং সংখ্যা। এই কাজে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করেছিলেন জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে অভিযুক্ত সমীর নায়েক। কালীঘাট মন্দির চত্বর নিয়ে আঁকা এই বন্দির ছবিও ছিল প্রদর্শনীতে। খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা সুকুমার কর্মকারও দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি। তাঁর ছবি এক লহমায় মুগ্ধ করতে পারে যে কোনও ছবি বিশেষজ্ঞকেও, তেমনই দাবি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের। প্রদর্শনীতে খিদিরপুর বন্দর নিয়ে আঁকা ছবি ছিল সুকুমারের। কারা দফতরের কর্তারা বলছেন, আলো-আঁধারিতে আঁকা সেই ছবি দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত পীযূষ ঘোষের ছবিও বিকিয়েছে সেখানে।

কারা দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বন্দিদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে থাকে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি, তারাই আয়োজন করেছিল এই প্রদর্শনীর। ২০১৭ সালের গাঁধী জয়ন্তীতে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ওয়ার্কশপ শুরু করেছিল তারা। সেখানেই ক্যানভাসকে আপন খেয়ালে রাঙিয়ে তুলেছিলেন বন্দিরা। এত দিন সেই সব ছবি শোভা পেত সংশোধনাগারের দেওয়ালেই। এ বারই প্রথম বার দর্শকেরা পছন্দ করে বন্দিদের ছবি কিনলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Exhibition Prisnoners Unique
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE