Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আগুন শপিং মলে, আতঙ্ক আবাসনেও

ভরদুপুরে ক্রেতাদের ভিড় ছিল ভালই। হঠাৎ ধোঁয়ায় ভরে গেল শপিং মল। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করলেন লোকজন। জিনিসপত্র ফেলেই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এলেন ক্রেতারা।

হুলস্থূল: হঠাৎ আগুনে আতঙ্ক ছড়ায় শপিং মলে। বুধবার, বাঘা যতীনের কাছে গাঙ্গুলিবাগানে। নিজস্ব চিত্র

হুলস্থূল: হঠাৎ আগুনে আতঙ্ক ছড়ায় শপিং মলে। বুধবার, বাঘা যতীনের কাছে গাঙ্গুলিবাগানে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

এমনিতেই বুধবারের ‘সস্তা বাজার’। তার উপরে দোলের আগের দিন। ভরদুপুরে ক্রেতাদের ভিড় ছিল ভালই। হঠাৎ ধোঁয়ায় ভরে গেল শপিং মল। আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করলেন লোকজন। জিনিসপত্র ফেলেই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এলেন ক্রেতারা। বুধবার এই ঘটনা ঘটে নেতাজিনগর থানার গাঙ্গুলিবাগানে। ক্রেতাদের পাশাপাশি বিপদে পড়েছিলেন ওই শপিং মলের উপরে থাকা আবাসনের বাসিন্দারাও। তবে কেউ হতাহত হননি।

ওই আবাসনেই থাকেন অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত, শয্যাশায়ী বৃদ্ধা দীপালি নন্দী। পরিবারের লোকজন ও নিরাপত্তারক্ষীরা মিলে তাঁকে শয্যা-সহ নীচে নামিয়ে আনেন। আর এক বাসিন্দা, ৮১ বছরের অধীর রায় বাড়িতে একাই ছিলেন। সাততলা থেকে লাঠিতে ভর দিয়ে সিঁড়ি বেয়েই নামেন তিনি।

দীপালিদেবীর পুত্রবধূ সুপর্ণা নন্দী বললেন, ‘‘রক্ষীরা ছিলেন বলেই শাশুড়িকে নামিয়ে আনা গিয়েছে। কিন্তু বড় আগুন লাগলে কী হত?’’ মণিকা সেনগুপ্ত নামে আর এক আবাসিকের কথায়, ‘‘নীচ থেকে রক্ষীরা ফোনে জানান, আগুন লেগেছে। আমার কোমরে চোট। বেল্ট বাঁধা রয়েছে। তা সত্ত্বেও সিঁড়ি দিয়েই নেমে আসি।’’

দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লাগে। কেন শর্ট সার্কিট, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শপিং মলটি। দমকলের দাবি, ওই মল থেকে বেরোনোর রাস্তা খুব সঙ্কীর্ণ। তার উপরে আপৎকালীন রাস্তায় মালপত্র রাখা ছিল। সেগুলির বেশির ভাগই দাহ্য। এ ব্যাপারে অবশ্য শপিং মল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য মেলেনি।

দুপুর একটা নাগাদ শপিং‌ মলের বেসমেন্টে খাবার ও কসমেটিক্সের দোকানে আগুন লাগে। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘ়টনাস্থলে যায়। তবে তার আগেই আবাসনের রক্ষীরা ভিতরে ঢুকে কাচ ভেঙে ধোঁয়া বার করে দেন। দমকল সূত্রের দাবি, তড়িঘড়ি আগুন নেভানো গেলেও ধোঁয়া সামাল দিতে বেগ পেতে হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শপিং মলের ভিতর থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। গ্যাস-মুখোশ পরে দমকলকর্মীরা কাজ করছেন। কিন্তু পুলিশকর্মীদের সে সব না থাকায় তাঁরা কাশতে শুরু করেন। ঘটনাস্থলে যান ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার (এসএসডি) আনন্দ রায়, প্রাক্তন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত প্রমুখ।

আবাসন ও মলের কর্মীরা জানান, আগুনে প্রবল আতঙ্ক ছড়ায়। ওই আবাসনে একাধিক বহুতল রয়েছে। অগ্নিদগ্ধ বাড়িটির বেসমেন্ট ও উপরের চারতলা নিয়ে শপিং মল। তার উপরের তিনটি তলে লোকজনের বাস। তাঁরা জানান, রক্ষীদের কাছ থেকে আগুনের খবর পেয়েই ফ্ল্যাট ছেড়ে নেমে আসেন সবাই। জবা মুখোপাধ্যায় নামে এক আবাসিক বলেন, ‘‘সবে খেতে বসেছি। আগুন লাগায় খাবার ফেলেই নেমে আসি।’’

আতঙ্কিত দীপালি নন্দী। বুধবার, গাঙ্গুলিবাগানের আবাসনে। নিজস্ব চিত্র

আবাসিকদের সংগঠনের সম্পাদক নিমাই মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরাই আগুন নেভাতে শুরু করেন। ওদের কর্মীরা তো ভয়ে পালিয়ে যান।’’ ভোলা শিকারি নামে আবাসনের এক রক্ষী বলেন, ‘‘ধোঁয়ায় কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু বিপদের কথা না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়ি।’’ নিমাইবাবু জানান, তাঁদের বেরোনোর পথটি শপিং মল লাগোয়া। বড় আগুন লাগলে আবাসিকেরা আটকে পড়তেন। ক্রেতারাও জানান, বেরোনোর পথে বিস্তর জিনিসপত্র রাখা ছিল। বেরোতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় অনেকেই পড়ে যান।

ওই মলে এসেছিলেন নাকতলার বাসিন্দা সাত্যকি সেনগুপ্ত। বললেন, ‘‘হঠাৎ হইচই। কর্মীরা বেরিয়ে যেতে বললেন। কিছু না বুঝেই হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে এসে শুনি, আগুন লেগেছে। বেরোতে গিয়ে আমার সামনেই এক জন পড়ে গেলেন।’’

নন্দরাম, স্টিফেন কোর্ট, আমরি— এই শহরে অগ্নিকাণ্ড কম ঘটেনি। বর্ষবরণের আগে পার্ক স্ট্রিটে গিয়েও অগ্নিসুরক্ষার বেহাল দশা দেখেছিল দমকল। তা সত্ত্বেও কঠোর পদক্ষেপ করা হয়নি। গাঙ্গুলিবাগানের ক্ষেত্রেও কি তেমনই হবে? প্রশ্নটা উঠছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ganguly bagan Fire Shopping Mall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE