Advertisement
E-Paper

ফুল-হাসি-কচুরিতে জমাট প্রচারের প্রথম রবিবার

খাতায়-কলমে রক্তদান শিবির। মঞ্চ প্রস্তুত। মাইক গমগমে। ভারী গলায় বক্তা বলতে শুরু করলেন, ‘‘রক্তদান মহাদান। জীবনদান। মানুষের পাশে দাঁড়ান। আর এই পাশে দাঁড়ানোয় আমাদের অনুপ্রেরণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা ও তাঁর দল বরাবরই মানুষের পাশে...।’’

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০০:৪৮
-খোশ মেজাজে দিনের লড়াই। (বাঁ দিক থেকে) বালিগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রেস ক্লাবে একটি সেমিনারে ভবানীপুরের কংগ্রেস প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র। গরফা বাজারে যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। রবিবার ছবিগুলি তুলেছেন সুমন বল্লভ এবং শশাঙ্ক মণ্ডল।

-খোশ মেজাজে দিনের লড়াই। (বাঁ দিক থেকে) বালিগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রেস ক্লাবে একটি সেমিনারে ভবানীপুরের কংগ্রেস প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র। গরফা বাজারে যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। রবিবার ছবিগুলি তুলেছেন সুমন বল্লভ এবং শশাঙ্ক মণ্ডল।

খাতায়-কলমে রক্তদান শিবির। মঞ্চ প্রস্তুত। মাইক গমগমে। ভারী গলায় বক্তা বলতে শুরু করলেন, ‘‘রক্তদান মহাদান। জীবনদান। মানুষের পাশে দাঁড়ান। আর এই পাশে দাঁড়ানোয় আমাদের অনুপ্রেরণা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা ও তাঁর দল বরাবরই মানুষের পাশে...।’’

মঞ্চের পাশে সংগঠকদের হাততালিতে তৃণমূল নেতা সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বর ডুবে গেল। হাততালি দিলেন মঞ্চে আসীন রাসবিহারী কেন্দ্রের প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। স্থান, শাঁখারিপাড়া, ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড। বিধানসভা
কেন্দ্র ভবানীপুর।

প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নেই তো কী হয়েছে! মালুম হল, রক্তদানের আসরে ভোটের হাওয়াই
মূল সুর।

এখনও কলকাতায় দু’দফায় ভোট হতে আরও মাস দেড়েক। শাসক দল ছাড়া বাকিদের অনেকেই কে-কোথায় দাঁড়াবেন, ঠিক হয়নি। কোনও কোনও প্রার্থী ঘোষণার পরে কার্যত এটাই প্রথম রবিবার। সপ্তাহান্তের ছুটির আমেজে ভোট-ভোট গন্ধ তবু এখনই প্রবল। যেমনটি দেখা গেল, দক্ষিণ কলকাতায় যাদবপুরের কাছে গরফার বাজারে। বাম-শিবিরের প্রথম সারির মুখ সুজন চক্রবর্তীকে দেখেই সরগরম বাজার আরও মেতে উঠল। সাধারণ গেরস্ত থেকে রিকশাচালক— জনে-জনে কুশল বিনিময় সারলেন প্রার্থী। টালিগঞ্জ কেন্দ্রে তৃণমূলের হেভিওয়েট অরূপ বিশ্বাসের প্রতিদ্বন্দ্বী মধুজা সেন রায়ও বিক্রমগড় বাজারেই সকালটা কাটিয়েছেন। তরুণ সিপিএম প্রার্থী মধুজার সঙ্গে আলাপের পরেই আলুর ১৮ টাকা দর নিয়ে অনুযোগ-অভিযোগে ভরে উঠল বাজার।

মোটামুটি একই সময়ে উত্তর কলকাতার চিড়িয়ামোড় লাগোয়া সব্জি বাজারে আবার অন্য উত্তেজনা। বেলগাছিয়া-কাশীপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা সাহার রোড শোয়ে গলির মধ্যে ম্যাটাডর ঢোকাতে কর্মীরা গলদঘর্ম। দু’নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শান্তনু সেনের নামাঙ্কিত পুর-শৌচাগার ও মনসা মন্দিরের মাঝের চিলতে ফাঁকে ঢুকতে গিয়ে বারবার গোঁত্তা খেয়ে ব্যাক করছে বেচারি ম্যাটাডর। কর্মীরা অনুরোধ করলেন, মালাদিকে একটু নেমে হেঁটে গলির ভিতরে ঢুকতে। মালা তাঁদের বোঝালেন, সে তো ডোর-টু-ডোর প্রচারে হবেই! আপাতত রোড শো-র ছন্দে টাল খাওয়া ভাল হবে না। চার বারের চেষ্টায় ম্যাটাডর গলির ভিতরে ঢুকতে সবারই মুখে হাসি ফুটল।

এ বাজারে হাসি-কান্না সবই ভোটের উপকরণ। পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে রবিবাসরীয় দুপুরে ‘লাফিং অ্যাকাডেমি অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’-র অনুষ্ঠান। সেখানে গিয়েছিলেন মানিকতলার প্রার্থী শাসক দলের সাধন পাণ্ডে। বললেন, ‘‘আমার এলাকায় দেশবন্ধু পার্কের লাফিং ক্লাবের সদস্যদের অনুরোধে একটু আসতে ও হাসতে হল।’’ দুপুরেও দেশবন্ধু পার্কের প্রাতঃভ্রমণকারীদের সঙ্গে শোভাবাজারে মধ্যাহ্নভোজের নেমন্তন্ন সাধনবাবুর। সেখানে পনিরের তরকারি ও বেগুনি দিয়ে ভাত খেতে খেতে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘ভোটের লড়াইয়েও মুখে হাসি ধরে রাখাটাই হল মূল মন্ত্র।’’

এ রাজ্যে সংসদীয় রাজনীতিতে অন্যতম প্রবীণ, পোড়খাওয়া সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো এই সার সত্য আর কে বুঝেছেন! সেটা মালুম হল, বালিগঞ্জ প্লেসে ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজের পাড়ার কর্মিসভায় সমর্থকদের ঘোর আত্মবিশ্বাসেও ‘সুব্রতদা’কে বিস্তর অভিমান সামলাতে হল। তরুণ কর্মী থেকে মধ্যবয়সিনী দলভক্তদের দাবি, দাদাকে আরও বেশি আমাদের মধ্যে চাই। চা খেতে খেতে সুব্রত হাসলেন, ‘‘আমি তো সব সময়েই আছি! আর এমন চা খাওয়ালে রোজই আসব।’’ মাঝদুপুরে আর একটা রক্তদান-শিবিরে যাওয়ার আগে ভালবাসার অত্যাচারে
চা ছাড়া টা-ও খেতে হল তাঁকে। কর্মীদের টিফিনের প্যাকেট থেকে একটা দরবেশ রাধাবল্লভীতে মুড়ে গাড়িতে উঠলেন সুব্রত।

প্রচারের জাঁকজমকে শাসকদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও পরিশ্রমে কারও থেকে কম মরীয়া নয় বিরোধী-শিবির। যাদবপুরে গরফা থেকে রানিকুঠি পর্যন্ত হাঁটলেন সুজন। বাম আমলের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশ দাশও এন্টালি বাজারের কাছে তরতরিয়ে চার-পাঁচতলা আবাসনের সিঁড়ি ভাঙছেন। সঙ্গী শুভ্র ভট্টাচার্যের হাতে মাইক থাকলেও বস্তি থেকে ফ্ল্যাট-বাড়ি দেবেশকে বড় একটা চেনানোর
দরকার পড়ছে না। ঘণ্টা চারেক ধরে ৮-১০টা বুথ ঘুরে প্রার্থী হাসলেন, ‘‘দশ বছরেরও বেশি দিনের সম্পর্ক এই মানুষগুলোর সঙ্গে।’’

যাদবপুর-এন্টালিতে বাম কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কংগ্রেসিরাও প্রচারে সামিল। ভবানীপুরে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী ওমপ্রকাশ মিশ্রও সকাল থেকে ব্যস্ত। দিনভর দলীয় ইস্তাহারের কাজ, দুপুরে পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পরে চেতলায় পার্টি অফিসে গিয়ে কংগ্রেস ও বাম কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন তিনি। নেতাজির পরিবারের এক জন, ওই কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী চন্দ্র বসুও এ দিন আউটডোরের থেকে ইনডোরে জোর দিয়েছেন। বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাজরার কাছে দলীয় বৈঠকে যোগ দেন তিনি।

সকালের ঘোরাঘুরি-কর্মিসভার হিড়িকটা বিকেল গড়াতেই মিটিং-মিছিলে জমজমাট। জোকা-বেহালায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, যাদবপুর-গড়িয়ায় সিপিএমের সুজন বা রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট-বেলেঘাটায় তৃণমূলের পরেশ পালেরা তার অন্যতম চরিত্র। এখন হাল্কা গরমে মৃদুমন্দ ভোটপ্রচারেই ফাঁকে-ফাঁকে ঝাঁঝ ঘনিয়ে উঠছে। লালবাজারের কাছে পোলক স্ট্রিটে কর্মিসভা শুরুর সময়ে প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ সতর্ক বহিরাগতদের নিয়ে। রীতিমতো বাউন্সার দিয়ে দরজা আগলে মিটিং চলল।

বাড়তি সতর্কতা বুঝিয়ে গেল, ভোটের হাওয়া ক্রমশ আরও গরম হতে চলেছে।

assembly election sovandeb chattopadhaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy