Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সস্তার মালে কাজ সারাতেই সেতু বিপর্যয়! রিপোর্টে আঙুল কেএমডিএ-র দিকেও

বিবেকানন্দ রোডের ভেঙে পড়া উড়ালপুলের স্তম্ভ এবং গার্ডারে যতটা শক্তিশালী ইস্পাত দেওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি বলে রেলের সহযোগী সংস্থা রাইটস তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি করেছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:৪০
Share: Save:

বিবেকানন্দ রোডের ভেঙে পড়া উড়ালপুলের স্তম্ভ এবং গার্ডারে যতটা শক্তিশালী ইস্পাত দেওয়ার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি বলে রেলের সহযোগী সংস্থা রাইটস তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে দাবি করেছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। সূত্রটির দাবি, উড়ালপুলের নকশা মেনেও সব জায়গায় কাজ হয়নি বলে ওই বিশেষজ্ঞ সংস্থা তাদের রিপোর্টে ইঙ্গিত দিয়েছে। সেতুর যে অংশটি অক্ষত রয়েছে সেখানে কয়েকটি অংশ থেকে গার্ডার সরে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন রাইটসের তদন্তকরীরা।

বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলের ১০০ মিটারের মতো একটি অংশ ৩১ মার্চ দুপুরে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হয়েছিল ২৭ জন মানুষের। ওই ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে উড়ালপুলের ভেঙে পড়া এবং অক্ষত অংশ খতিয়ে দেখে সেতু বিশেষজ্ঞেরা চারটি কারণের উপরে জোর দিয়েছিলেন। নকশায় গলদ, খারাপ নির্মাণ সামগ্রী, নকশা মেনে কাজ না হওয়া এবং সাত তাড়াতাড়ি কাজ করতে গিয়ে গাফিলতিকে প্রশ্রয় দেওয়া। রাজ্য সরকার বিবেকানন্দ উড়ালপুল-কাণ্ড নিয়ে আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পুলিশও তাদের তদন্তে বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের মতামত নিচ্ছে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার রাইটসকেও একটি রিপোর্ট দিতে বলেছিল।

আরও পড়ুন: বিপদ লুকিয়ে রয়েছে বাকি অংশেও

রাইটস অবশ্য তাদের তদন্ত সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। একটি সূত্রের মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকার আমাদের উড়ালপুলের অবস্থা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলেছিল। আমরা যা বলার আমাদের রিপোর্টে রাজ্য সরকারকেই জানিয়েছি।’’ রাইটস তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে বলেছে, ‘নকশা মেনে কাজ হয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। নির্মাণের কাঁচা মাল নিয়েও ধন্দ রয়েছে। এগুলি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি নকশা অনুমোদিত ছিল কি না, নজরদারি যথাযথ ছিল কি না, সেগুলি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’

উড়ালপুলের যে অংশটি ভেঙে পড়েছে সেটি ঢালাই করার সময়ে নিরাপত্তার নিয়মকানুন মানা হয়নি বলেও জানিয়েছে রাইটস। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ঢালাই করার সময়ে নিরাপত্তার নিয়মকানুন মানা হলে এত লোকের মৃত্যু হত না।’ রাইটস তাদের প্রাথমিক রিপোর্টে কেএমডিএ-র তরফে গাফিলতির বিষয়টিও তুলে ধরেছে বলে নবান্ন সত্রের খবর। কী ভাবে? নবান্নের সূত্রটি জানাচ্ছেন, কাজের নজরদারি করার জন্য আলাদা কোনও উপদেষ্টা সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়নি। তিন শিফটে সেতু বিশেষজ্ঞ, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মেটিরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার রাখা দরকার ছিল। কিন্তু আলাদা উপদেষ্টা সংস্থা না থাকায় তা ছিল না। বদলে টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের মোতায়েন করা হয়েছিল।

নবান্ন সূত্রের দাবি, বিবেকানন্দ উড়ালপুলের নির্মাণসামগ্রী পরীক্ষা করা দেখা প্রয়োজন বলেও তাদের রিপোর্টে সুপারিশ করেছে রাইটস। নকশা মেনে নির্মাণ হয়েছিল কী না সেই প্রশ্নও তুলেছে তারা। গোটা উড়াপুল দু’টি করে স্তম্ভের উপরে থাকলেও ৪০ নম্বর স্তম্ভ (যেখানে সেতুটি ভেঙেছে) সেখানে একটি স্তম্ভের উপরে কেন রাখা হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছে রাইটস। ওই স্তম্ভের ভিতও পরীক্ষা করে দেখা উচিত বলে জানিয়েছে রাইটস। স্তম্ভের দু’টি বাহু (ক্যান্টিলিভার) একটি ছোট এবং একটি বড় কেন তার ব্যাখ্যাও প্রয়োজন বলে মনে করেছে রেলের সহযোগী সংস্থাটি। সরকারি সূত্রের খবর, সেতু চলাকালীন নকশায় বদল হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেটা হয়ে থাকলে কেন করা হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে প্রাথমিক রিপোর্টে।

গোটা সেতুর ভবিষ্যত নিয়েও রাইটস প্রশ্ন তুলেছে বলে নবান্ন সূত্রের দাবি। সূত্রটি জানাচ্ছেন, সেতুর বাকি অংশ পরীক্ষা করে তবেই ফের কাজ শুরু করার সুপারিশও করেছে রাইটস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vivekananda flyover flyover collaps
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE