Advertisement
E-Paper

বসন্তের ভোরে মহানগর অন্ধ বিরল কুয়াশায়

মিলতে পারত কালবৈশাখীর সন্ধে। পরিবর্তে পাওয়া গেল ঘন কুয়াশায় ঢাকা ভোর! শতবর্ষের ইতিহাস ঘেঁটেও মার্চ অন্তে এমন ঘটনার নজির বিশেষ খুঁজে পাচ্ছে না হাওয়া অফিস। ফাল্গুন পেরিয়ে চৈত্র মাসের এখন দ্বিতীয় সপ্তাহ। মানে ভরপুর বসন্ত। কিন্তু কোথায় সেই গা জুড়োনো দখিনা হাওয়ার নরম-গরম পরশ? উল্টে সকালের দিকে উত্তর দিক থেকে যে ভাবে ঠান্ডা বাতাস ধেয়ে আসছে, তাতে মালুম হওয়া দায় যে, এটা বসন্ত। সোমবার দুপুরের পরে কিন্তু আচমকা বায়ুপ্রবাহের চরিত্র পাল্টে বসন্ত-অনুকূল একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সমুদ্র থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হু হু করে ঢুকতে শুরু করেছিল দখিনা বাতাস। তবে ওখানেই শেষ। ওই উষ্ণ বাতাস আর তেড়ে-ফুঁড়ে উপরে উঠতে পারেনি।

মঙ্গলবার ভোরের ইএম বাইপাস।  —নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার ভোরের ইএম বাইপাস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:১০
Share
Save

মিলতে পারত কালবৈশাখীর সন্ধে। পরিবর্তে পাওয়া গেল ঘন কুয়াশায় ঢাকা ভোর! শতবর্ষের ইতিহাস ঘেঁটেও মার্চ অন্তে এমন ঘটনার নজির বিশেষ খুঁজে পাচ্ছে না হাওয়া অফিস।

ফাল্গুন পেরিয়ে চৈত্র মাসের এখন দ্বিতীয় সপ্তাহ। মানে ভরপুর বসন্ত। কিন্তু কোথায় সেই গা জুড়োনো দখিনা হাওয়ার নরম-গরম পরশ?

উল্টে সকালের দিকে উত্তর দিক থেকে যে ভাবে ঠান্ডা বাতাস ধেয়ে আসছে, তাতে মালুম হওয়া দায় যে, এটা বসন্ত।

সোমবার দুপুরের পরে কিন্তু আচমকা বায়ুপ্রবাহের চরিত্র পাল্টে বসন্ত-অনুকূল একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সমুদ্র থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হু হু করে ঢুকতে শুরু করেছিল দখিনা বাতাস। তবে ওখানেই শেষ। ওই উষ্ণ বাতাস আর তেড়ে-ফুঁড়ে উপরে উঠতে পারেনি। তার আগ্রাসনে বাদ সেধেছে হিম-শীতল উত্তুরে হাওয়া, যা কিনা বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তর দখল করে বসে রয়েছে।

অতএব, দখিনা বায়ুর ঊর্ধ্বগতি শ্লথ হয়েছে। শেষমেশ মঙ্গলবার ভোরে জলীয় বাষ্পপূর্ণ সেই উষ্ণ বাতাস এসেছে উপরিস্তরের শীতল বাতাসের সংস্পর্শে। সঙ্গে সঙ্গে শৈত্যের ছোঁয়া লেগে জলীয় বাষ্প পরিণত হয়েছে জলকণায়। জলকণা জমতে জমতে বাতাস যে মুহূর্তে সংস্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে, তা নেমে এসেছে মাটির কাছকাছি।

পরিণামে ঘন কুয়াশা গ্রাস করেছে ভোরের আকাশকে। বাইপাস থেকে গঙ্গা মহানগরের প্রান্তে প্রান্তে এ দিন চোখে পড়েছে তার দাপট। বসন্ত-ভোরের বিচিত্র কুয়াশায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে দৃশ্যমানতা এতটাই কমে যায় যে, এক হাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছিল না! ইএম বাইপাসে গাড়ি চালাতে নাকাল হন অনেকে। গঙ্গায় ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। সামান্য হলেও প্রভাব পড়ে রেল ও বিমানে।

গোড়ায় ধন্ধ জেগেছিল, এ কি সত্যিই কুয়াশা? নাকি মাটির কাছাকাছি নেমে আসা মেঘের আস্তরণ?

বস্তুত মার্চ শেষে আকাশে মেঘ জমাটা অস্বাভাবিক না-হলেও এমন কুয়াশা বিরল। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, এ দিন কুয়াশাই পড়েছিল। অফিসের নথিপত্র ঘেঁটে তিনি বলেন, “এটা কুয়াশাই। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক। যদিও একেবারে বিরল নয়। একশো বছরের রেকর্ডে দু’-এক দিন এমন ঘটনার উল্লেখ মিলেছে।”

তা এ হেন বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী মহানগর এ দিন হল কী ভাবে?

আবহবিদেরা এর জন্য মূলত দায়ী করছেন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে সৃষ্ট একটি উচ্চচাপ বলয়কে। ওঁদের ব্যাখ্যা: উচ্চচাপ বলয়টিরই প্রভাবে বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ বদলে গিয়ে দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে, যা কিনা সমুদ্র থেকে বয়ে এনেছে বিপুল জলীয় বাষ্প, এবং শীতল উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে মিলে নামিয়েছে ঘন কুয়াশা। প্রকৃতি স্বাভাবিক নিয়মে চললে অবশ্য অন্য রকম হতে পারত। কী রকম?

এক আবহবিদ বলেন, “এই সময়টায় ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে দখিনা বাতাসের সঙ্গে ঢোকা জলীয় বাষ্প থেকে কালবৈশাখী তৈরির সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু উত্তুরে হাওয়ার দাপট সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে। ওই তল্লাটে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়তে পারছে না।”

অগত্যা কালবৈশাখী অধরা থেকে গিয়েছে। অথচ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মার্চ মাসে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে অন্তত দু’টো কালবৈশাখী হওয়ার কথা। উত্তুরে হাওয়ার দৌলতে সে নিয়মে ছেদ পড়েছে। ঝড়-জলের বদলে মিলেছে কুয়াশা। আজ, বুধবার সকালেও কি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর দেখবে মহানগর?

হাওয়া অফিস স্পষ্ট কিছু বলছে না। আলিপুরের বক্তব্য: গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরিস্থিত উচ্চচাপ বলয়টির অবস্থান ও শক্তির উপরে গোটা পরিস্থিতি নির্ভর করছে। যদিও আবহবিদদের একাংশের অনুমান, মঙ্গলবার দিনভর দখিনা বাতাস নিজের শক্তি বাড়িয়ে তোলায় উত্তুরে হাওয়া এ বার পিছু হটতে শুরু করবে। ফলে আবহাওয়া কিছুটা বদলালেও বলাতে পারে। প্রসঙ্গত, ঘন কুয়াশার সুবাদে মঙ্গলবার সকালের তাপমাত্রা এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। এ দিন সকালে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা কিনা যা গত ক’দিনের সর্বোচ্চের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি বেশি।

এমতাবস্থায় আজ শহরে হাল্কা বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে আলিপুর। তাদের পূর্বাভাস, আজ যেমন আকাশে মেঘ থাকবে, তেমন দখিনা বাতাসের গতিও বাড়বে। সামান্য বাড়তে পারে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

অর্থাৎ, ভোরের ঠান্ডার দিন প্রায় শেষ। এ বার এপ্রিলের চির-চেনা ভ্যাপসা গরমের পালা। তার উপরে মেঘ কাটলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চড়বে।

আর তখনও যদি দখিনা বাতাস বইতে থাকে, তা হলে হয়তো গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে খাতা খুলবে কালবৈশাখী।

weather office record march west bengal sea EM Bypass summer fog kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}