Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়ো সেনাকর্তা অবাধে ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে

খাস ফোর্ট উইলিয়ামই কি অরক্ষিত? বৃহস্পতিবার মেজর জেনারেলের ভুয়ো পরিচয়ে গাড়ি নিয়ে এক ব্যক্তির ঢুকে পড়া এমনই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল সেনাবাহিনীর ঘাঁটিকে।

গাড়ি থেকে বাড়ি, সর্বত্রই ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করতেন অভিযুক্ত প্রমিত। — নিজস্ব চিত্র

গাড়ি থেকে বাড়ি, সর্বত্রই ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করতেন অভিযুক্ত প্রমিত। — নিজস্ব চিত্র

প্রশ্নে নিরাপত্তা
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:৩৪
Share: Save:

খাস ফোর্ট উইলিয়ামই কি অরক্ষিত?

বৃহস্পতিবার মেজর জেনারেলের ভুয়ো পরিচয়ে গাড়ি নিয়ে এক ব্যক্তির ঢুকে পড়া এমনই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল সেনাবাহিনীর ঘাঁটিকে। তদন্তে নেমে সেনা পুলিশ জানতে পেরেছে— এই প্রথম নয়, আগেও এক বার এ ভাবেই ফোর্ট উইলিয়ামে ঢুকে খানিক ঘোরাঘুরি করে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। সেনা অফিসার সেজে এত সহজে এমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া জায়গায় একাধিক বার ঢুকে পড়া সুরক্ষার ফাঁকগুলিকেই সামনে আনছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, সে ক্ষেত্রে তো যে কোনও সময়ে কোনও জঙ্গি একই কায়দায় সেনা অফিসারের নকল পোশাক পরে ঢুকে যেতে পারে সেনা ঘাঁটির ভিতরে। চালাতে পারে নাশকতামূলক কাজ। তবে নিরাপত্তায় গাফিলতির বিষয়টি মেনে নিলেও সেনা অফিসারদের যুক্তি, এ দিন যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি ঢুকতে পেরেছিলেন, তাতে তেমন বড় কোনও ক্ষতির আশঙ্কা ছিল না।

এ বছরেরই ২ জানুয়ারি হিমাচল প্রদেশের পঠানকোটে বায়ুসেনার ঘাঁটিতে হানা দেয় জঙ্গিরা। চার জঙ্গির সেই হানায় মারা যান বায়ুসেনার এক জওয়ান ও এক অফিসার। ঘটনার জেরে সারা দেশের সেনা ঘাঁটিগুলি আরও সুরক্ষিত করার দাবি ওঠে। যে কোনও সময়ে বিদেশি শক্তির মদতপুষ্ট জঙ্গিরা হানা দিতে পারেন, এমন আশঙ্কায় রয়েছেন দেশের গোয়েন্দা বাহিনীও। দেশ জুড়ে বিমানবন্দর ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিরাপদ রাখার অবিরল প্রয়াস চলছে। সেখানে কলকাতায়, সেনাবাহিনীর এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটির এই হাল কেন? সেনা অফিসারদের একাংশই বলছেন, ‘‘এমন একেবারেই হওয়ার কথা নয়।’’

ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার?

ফোর্ট উইলিয়ামের প্রতিটি গেটে ঢোকার মুখে সেনাবাহিনীর একাধিক জওয়ান পাহারায় থাকেন। গেটে উপস্থিত থাকেন মিলিটারি পুলিশের এক অফিসারও। নিজের একটি গাড়ি চালিয়ে বুধবার সকালে সেখান দিয়েই ঢুকে পড়েন প্রমিত মিত্র নামে ওই ব্যক্তি। পরনে ছিল সেনা অফিসারের পোশাক। যে পোশাক তিনি পরেছিলেন, তা সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার মেজর জেনারেলের পরিধেয়।

গেটে ওই ব্যক্তি মেজর জেনারেলের পরিচয় দিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামের সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে গাড়ি নিয়ে সটান চলে যান মিউজিয়ামের কাছে। মোবাইলে ছবি তোলেন। সে সময়ে সেনাবাহিনীর কয়েকজন জওয়ান বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। প্রমিতের কাছ থেকে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়া হলে তিনি পকেট থেকে নিজের ছবি সাঁটানো একটি পরিচয়পত্রও বার করে দেখান। দেখা যায়, সেটি নকল। এর পরেই ময়দান থানার পুলিশের হাতে গাড়ি-সহ প্রমিতকে তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর দাবি, এর আগেও এক দিন এই ব্যক্তি একই ভাবে ফোর্ট উইলিয়ামে ঢুকে পড়েছিলেন। তখনই তাঁকে দেখে সন্দেহ হয়েছিল সেনা পুলিশের। এক সেনা অফিসারের কথায়, ‘‘সেনা হাসপাতালের দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তিনি মেজর জেনারেল পদের। আবার বেঙ্গল এরিয়ার দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তিনিও তা-ই। কলকাতায় এমন প্রায় ১০-১৫ জন মেজর জেনারেল রয়েছেন।’’

ফলে সে দিন প্রমিতকে সন্দেহ করার পিছনে ছিল বেশ কয়েকটি কারণ— এক, কলকাতার এই ১০-১৫ জন মেজর জেনারেলের মুখ কমবেশি চেনেন নিরাপত্তায় থাকা জওয়ানেরা। প্রমিতের মুখ ছিল অচেনা। দুই, মেজর জেনারেল পদের অফিসারদের গাড়িতে দু’টি তারা লাগানো থাকে। প্রমিতের গাড়িতে কোনও তারা লাগানো ছিল না। তিন, মেজর জেনারেলরা সব সময়ে সেনাবাহিনীর নম্বর প্লেট লাগানো সরকারি গাড়িতে ঘোরেন। কিন্তু, প্রমিতের গাড়িটি ছিল ব্যক্তিগত। এর আগে যে দিন তিনি ঢুকেছিলেন, সে দিন ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বেরিয়েও যান। সেনা অফিসারদের কথায়, ‘‘বুধবার সকালে আবার ওই ব্যক্তি ঢুকলে তাঁর গতিবিধি নজর করা শুরু হয়।’’ কিন্তু এতটা কেন ঢুকতে দেওয়া হল বাইরের এক ব্যক্তিকে? এ ভাবে জঙ্গিও তো ঢুকে আসতে পারে?

সেনা অফিসারদের যুক্তি, যে পর্যন্ত ঢুকতে পারলে সেনাবাহিনীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা, তত দূর ঢোকার কথা ভাবতেও পারবেন না বাইরের কেউ। সেই রাস্তা সেনা অফিসার ছাড়া আর কারও জানা নেই। প্রমিত যতটা ঢুকেছিলেন, সেখানে নাশকতা ঘটালে বড়জোর সেনাবাহিনীর দু’একটি বাড়ির সামান্য ক্ষতি হতো। তার বেশি কিছু নয়। যদিও এই যুক্তিকে তেমন জোরালো বলে মানছেন না অনেকেই। এত কিছু যুক্তি সত্ত্বেও এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে উঠেছে যে, কী করে প্রমিত অনায়াসে দু’দিন ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতরে ঢুকে যেতে সক্ষম হল?

সূত্রের খবর, প্রমিতের বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার বেলতলায়। বাড়ির গেটে নেমপ্লেটে নিজের নামের সঙ্গে লেখা আছে তিনি নৌসেনা-র কমোডর। যদিও সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে বায়ু বা নৌ সেনা এবং সেনাবাহিনীর কোনও যোগ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fort william car Army officer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE